রণকৌশল খুঁজতে আজ থেকে বৈঠক
দুর্নীতি-যুদ্ধেও ঘরের সমস্যাই দায় বিজেপির
দিল্লির তখ্তে নাকি লখনউ হয়েই যেতে হয়।
বফর্স কাণ্ডে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে এই লখনউয়েই রাজীব গাঁধীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা করেছিলেন তাঁরই মন্ত্রিসভার সদস্য বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ। সেই আন্দোলন দু’বছরের মাথায় দিল্লির মসনদে বসায় তাঁকে। পাশে তখন বাম ও বিজেপি। ২৪ বছর পর সেই লখনউ থেকেই ফের দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের ঝড় তুলে মনমোহন সিংহ সরকারকে উৎখাত করতে চায় এখনকার প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। তিন বছর পরের লোকসভা নির্বাচনে।
আগামী কাল থেকে বিজেপি-র রথী-মহারথীরা মিলিত হচ্ছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর ‘কর্মভূমি’তে। এখান থেকেই লাগাতার পাঁচ বার সংসদে গিয়েছিলেন তিনি। আগামিকাল দলের পদাধিকারীদের বৈঠক। তার পর দু’দিন জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। শেষে রাজ্যওয়াড়ি পর্যালোচনা। চার দিনের এই ঠাসা কর্মসূচির মূল লক্ষ্যই হল, মনমোহন সরকার ও কংগ্রেসকে দুর্নীতির প্রশ্নে আরও কোণঠাসা করার রণকৌশল তৈরি করা। যদিও নিতিন গডকড়ীরা বেশ ভাল ভাবেই টের পাচ্ছেন দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেসকে যতই ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করুক বিজেপি, ২০১৪ সালে দলকে দিল্লির মসনদে বসানো মোটেই সহজ কাজ নয়। কারণ, নানাবিধ।
প্রথমত, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার সময় নিজের ঘরও সামলাতে হচ্ছে গডকড়ীকে। বিশ্বনাথপ্রতাপের সে সমস্যা ছিল না। কর্নাটক এখন বিজেপি-র কাঁটা। দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে বিজেপি-শাসিত অন্য রাজ্যেও। সদ্য গত কালই দলবিরোধী কাজের জন্য বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার সদস্য চমনলাল গুপ্তকে দল থেকে ছ’বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। হিমাচলেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। উত্তরাখণ্ডে অভিযোগ খোদ মুখ্যমন্ত্রী রমেশচন্দ্র পোখরিয়ালের বিরুদ্ধে। গডকড়ী তাঁকে সাফ জানিয়েছেন, পরের নির্বাচনে আর মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী থাকছেন না তিনি।

দুই, দলকে একজোট করাও এখন বড় চ্যালেঞ্জ। দলের প্রায় সব স্তরের নেতারা এখনও কোন্দলে ব্যস্ত। বিজেপি ক্ষমতায় আসবে কি না ঠিক নেই, প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য দৌড় শুরু হয়ে গিয়েছে। তার জন্য সুষমা স্বরাজের মতো নেত্রীও নিজেকে ‘কলঙ্কমুক্ত’ করতে সতীর্থ অরুণ জেটলির ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছেন। তিন, দুর্নীতিকে মূলধন করে কংগ্রেস-বিরোধিতার রাজনীতি করতে চায় বিজেপি। অথচ কখনও আন্না হাজারে, কখনও বা বাবা রামদেবরাই দুর্নীতি-বিরোধিতার ‘মুখ’ হয়ে উঠছেন। এখন তাঁদের সমর্থন জুগিয়ে, ‘ট্র্যাক-টু’ আলোচনার মাধ্যমে কংগ্রেস-বিরোধিতার রাশ নিজেদের হাতে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
চার, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এত দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও ইউপিএ-২ সরকারের আমলে তারা কিন্তু সব বিধানসভাই বিজেপি-কে টেক্কা দিয়েছে।
সম্প্রতি যে পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে, তাতে কংগ্রেস দেড়শোর বেশি আসন পেলেও বিজেপি মাত্র পাঁচের কোঠাও পেরোতে পারেনি।
পাঁচ, গত লোকসভা ভোটে বিজেপি-র ঝুলিতে আসা ১১৬টি আসনের সিংহভাগই এসেছিল মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, ছত্তীসগঢ়, বিহার ও গুজরাত থেকে। কিন্তু গডকড়ী সভাপতির কুর্সিতে বসার পর শত চেষ্টা করেও বাকি রাজ্যে দাঁত ফোটাতে পারেননি। বাকি রাজ্যে ভোটব্যাঙ্ক না বাড়লে যে দিল্লি দখল অসম্ভব, সেটি বেশ বুঝছেন নেতারা।
ছয়, বিহার নির্বাচনের পর এনডিএ-র উত্থানের আশা কিছুটা উজ্জ্বল হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়ললিতা, চন্দ্রবাবু নায়ডু, নবীন পট্টনায়কের মতো এনডিএ-র পুরনো শরিকরা যে ফের বিজেপি-র ছাতার তলায় আসবেন, এমন কোনও লক্ষণই দেখা যচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে দুর্নীতির অভিযোগকে হাতিয়ার করে কী ভাবে এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করা যায়, তার পথ খুঁজবেন দলের কুশীলবরা। বিশেষ নজর দেওয়া
হবে উত্তরপ্রদেশের দিকেও, ভোট যেখানে ইতিমধ্যেই কড়া নাড়তে শুরু করেছে। বিজেপি-র শীর্ষ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতে, “উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে ভাল ফল করতে না পারলে কেন্দ্রে ক্ষমতা দখলের স্বপ্নও দূর অস্ত্। এই রাজ্যে গত কয়েকটি নির্বাচনে বিজেপি-র ফল ক্রমশই খারাপ হয়েছে। যে কোনও মূল্যে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে। এক দিকে মায়াবতী সরকারের অপশাসন ও অন্য দিকে কেন্দ্রে অভূতপূর্ব দুর্নীতি এই সবের বিরুদ্ধেই আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে।”
দলের প্রধান মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “বিজেপি-র চাপে পিছু হঠলেও মনমোহন সরকারের দুর্নীতির বিরাম নেই। নবতম সংযোজন বস্ত্রমন্ত্রী দয়ানিধি মারানের দুর্নীতি। পঞ্চাশ ঘণ্টা পরে মারান আজ যে সাফাই দেন, তাতেও দুর্নীতি আড়াল হচ্ছে না। মারানের ইস্তফা দেওয়া উচিত। না দিলে, প্রধানমন্ত্রীরই উচিত তাঁকে বরখাস্ত করা।” বৈঠক শুরুর আগেই মনমোহন সরকারের দুর্নীতির বিষয়ে একটি প্রস্তাবের খসড়াও তৈরি করে ফেলেছেন রবিশঙ্কররা। জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে সেটি পাশ হবে। কিন্তু তার পর?

Previous Story Desh Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.