যোগগুরু রামদেবের দুর্নীতি-বিরোধী অনশন নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব যতটা উদ্বিগ্ন, তার চেয়ে অনেক বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
বেশ কিছু দিন ধরেই রামদেবকে নিয়ে বিজেপির কপালে ভাঁজ পড়েছে। নতুন একটি রাজনৈতিক দল গড়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা আগে এক বার গেয়ে রেখেছেন রামদেব। পরের লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি যদি এই দল গড়েন, তা হলে লাভের থেকে লোকসানই বেশি হতে পারে বিজেপির। শেষ পর্যন্ত রামদেব পৃথক দল গড়বেন কি না, তা এখনও অনিশ্চিত। কিন্তু বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী মাস দুয়েক আগে দূত মারফৎ রামদেবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আলাদা দল গড়ার বিষয়ে তাঁকে নিরস্ত করার চেষ্টাও করেন। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, রামদেব যদি দুর্নীতি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং হিন্দুত্বের প্রচার চালিয়ে যান, তা হলে তাঁদের অসুবিধা হবে না। কিন্তু পৃথক দল গড়ে তিনি যদি নির্বাচনে নামেন, তখন কিন্তু হিন্দু ভোট ভাগাভাগির প্রশ্ন এসে যাবে। রামদেব কিন্তু তখন গডকড়ীকে জানিয়েছিলেন, প্রচার চালালেও এখনই তিনি পৃথক দল গড়ছেন না। কিন্তু তার পরে এই অনশন নিয়ে রামদেব বিজেপি নেতৃত্বকে কিচ্ছু জানাননি। কনখলের আশ্রমের কর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্কের সঙ্গে রামদেবের বিরোধও বেধেছে।
বিজেপি সূত্র বলছে, আন্না হাজারে ও রামদেবের বিষয়টি এক নয়। রামদেবের বিপুল সম্পত্তি ও অর্থবল। আন্তর্জাতিক স্তরের কর্পোরেট যোগগুরুতে পরিণত হয়েছেন তিনি। ফলে তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি আন্না হাজারের চেয়ে অনেক বেশি। আবার, রামদেব গেরুয়া বসনধারী সন্ন্যাসী হলেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অশোক সিঙ্ঘলদের সঙ্গে তাঁর বনিবনা হয় না। এমন এক জনকে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করাও বেশ কঠিন। বিজেপি নেতৃত্ব জানেন, অতীতে সাধ্বী ঋতাম্ভরা বা অযোধ্যার অন্যান্য সন্ন্যাসীর যে ভাবে তাঁরা সামলেছিলেন, সেই কায়দায় রামদেবকে সামলানো মুশকিল। কারণ রামদেব একেবারেই স্বাধীন।
আবার বিজেপি নেতারা এ কথাও বলতে পারছেন না, আমরা আন্না হাজারের সমর্থক, রামদেবের নই। গডকড়ী তাই তড়িঘড়ি চিঠি দিয়ে রামদেবের আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। লখনউয়ে বিজেপি কর্মসমিতির বৈঠকের আগেই লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো শীর্ষ নেতারা চাইছেন রামদেবের সঙ্গে এখনই একটা ‘ট্র্যাক টু’ যোগাযোগ তৈরির রণকৌশল নেওয়া হোক। আরএসএসের মধ্যে গুরুমূর্তি ও গোবিন্দাচার্যের সঙ্গে রামদেবের কিছুটা ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। কিন্তু এই দুই নেতার কারও সঙ্গেই বিজেপি ও সঙ্ঘ নেতৃত্বের সম্পর্ক মধুর নয়। তার পরেও এঁদের মাধ্যমেই যোগগুরুর সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির একটা চেষ্টা করা হচ্ছে। বিজেপি নেতারা চাইছেন রামদেব যেন সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। বিজেপি মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “রামদেব বিজেপির সদস্য নন। কিন্তু তিনি একটা নৈতিকতার প্রশ্ন তুলেছেন। দুর্নীতি নিয়ে তিনি ইউপিএ সরকারকে রেয়াত করবেন বলে মনে করি না।”
কিন্তু প্রকাশ্যে সমর্থনের কথা বললেও ধন্ধ কাটছে না বিজেপি নেতৃত্বের। অর্থের পাশাপাশি দেশ জুড়ে ভক্ত-সমর্থকের সংখ্যা কম নেই যোগগুরুর। এই অনশন যে নতুন দল গড়ার আগে সমর্থন বাড়ানোর কৌশল নয়, এমন ভরসা রামদেবের উপরে রাখতে পারছেন না তাঁরা। আবার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার কথা ‘বাবা’ও খোলসা করে বলতে নারাজ।
এই পরিস্থিতিতে পরিস্থিতির উপরে সন্দিগ্ধ নজর রাখা ছাড়া কী-ই বা করতে পারেন বিজেপি নেতৃত্ব। |