সরকার এবং কংগ্রেসের একাংশের মধ্যে এই মতান্তর কতটা আসল আর কতটা কৌশলগত, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, অন্তত আজকের দিনটিতে বিমানবন্দরে চার মন্ত্রীর যাওয়া নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। কংগ্রেসের নেতা-সমর্থকদের অধিকাংশ তা নিয়ে ক্ষুব্ধ। তাই সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে কংগ্রেসের তরফে কিছুটা ভারসাম্য রাখার প্রয়াস করা হয়েছে বলেও অনেকে মনে করছেন। যাতে দ্বিতীয় একটা পথও খোলা থাকে। ঠিক তাই দিগ্বিজয়ও রামদেবের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন।
দলের মধ্যে ভিন্ন সুর উঠলেও পরশু কিন্তু চার মন্ত্রী ফের রামদেবের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। সে কথা আজ বিকেলে সরকারি ভাবেই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। পরশুর ওই বৈঠকের আগে আজ রাতে ৭ রেসকোর্স রোডে মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রণব-সিব্বলরা। কাল কোর গ্রুপের বৈঠকে প্রণববাবু শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন। তার পর যা সিদ্ধান্ত হবে তা নিয়ে পরশু তিনি যাবেন রামদেবের সঙ্গে কথা বলতে।
আজ দুপুরে মধ্যপ্রদেশের ইনদওর থেকে একটি বেসরকারি বিজনেস জেটে দিল্লি এসে পৌঁছন রামদেব ও তাঁর সতীর্থ বালকৃষ্ণ। বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে প্রথমে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন সিব্বল, বনশল ও সুবোধকান্ত। পরে যোগ দেন প্রণববাবু। বৈঠকের পর রামদেব বলেন, “অনশন সত্যাগ্রহের কর্মসূচিতে এখনও অনড় রয়েছি আমি। দিল্লির রামলীলা ময়দানে সেই সত্যাগ্রহ শুরু হবে ৪ জুন। দেশের ৬২৪টি জেলায় এক কোটির বেশি লোক তাতে অংশগ্রহণ করবেন। তাতে সমর্থন জানাবেন আরও দশ কোটি মানুষ। আমাদের মূল লক্ষ্য, দুর্নীতি দমন ও কালো টাকা উদ্ধার। এ ব্যাপারে আজ সরকারের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।” তিনি সুনির্দিষ্ট ভাবে দাবিগুলির উল্লেখ করেন। সেগুলি হল, এক, সরকারকে লোকপাল আইন ও পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি আইন পাশ করতে হবে। দুই, দেশের সব শহরে ফাস্ট ট্র্যাক আদালত গঠন করতে হবে, যেখানে এক বছরের মধ্যে দুর্নীতি সংক্রান্ত সব মামলার নিষ্পত্তি ঘটিয়ে দোষীদের কারাবাস থেকে শুরু করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো শাস্তি দিতে হবে। তিন, বিদেশের ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের গচ্ছিত সব কালো টাকা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বলে সরকারকে ঘোষণা করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “কখনওই বলিনি প্রধানমন্ত্রী লোকপালের আওতার বাইরে। আমি বলেছি, প্রধানমন্ত্রী এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে লোকপালের আওতায় রাখা উচিত কি না, তাই নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্ক হওয়া প্রয়োজন।”
অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার হওয়া নিয়ে অবশ্য আলোচনাকারীরা আশাবাদী। সিব্বল বলেন, আলোচনা ইতিবাচক পথে এগোচ্ছে। আরও বৈঠক হবে। সরকারের এক শীর্ষ নেতার কথায়, আশা করা হচ্ছে ৪ তারিখের আগেই মীমাংসা হয়ে যাবে। তবে রামদেব অনশন সত্যাগ্রহ কর্মসূচি নিয়ে যতটা সুর চড়িয়ে ফেলেছেন, তাতে তা প্রত্যাহার করা তাঁর পক্ষে সহজ নয়। সে ক্ষেত্রে হয়তো ৪
তারিখ তিনি অনশনে বসার পর সরকারের তরফে কোনও দূত তাঁর কাছে পাঠানো হবে। তার পর তিনি অনশন প্রত্যাহার করবেন।
তবে এগুলি সবই কংগ্রেস নেতৃত্বের আশা এবং সম্ভাবনার কথা। আসল কথা হল, জট কাটেনি। তাই সঙ্কট মোচনে মরিয়া প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। |