কেএমডিএ-র কাজের প্রক্রিয়ায় রদবদল আনতে চায় রাজ্যের নতুন সরকার। উদ্দেশ্য, সংস্থার কাজে গতি আনার পাশাপাশি সুষ্ঠু ও সংগঠিত ভাবে প্রকল্প রূপায়ণের ব্যবস্থা করা। বৃহস্পতিবার উন্নয়ন ভবনে দফতরের কর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেখানেই নতুন করে পরিকল্পনার কথা ভাবা হয়। এ ছাড়া সংস্থার আয় বাড়াতেও ভাবনাচিন্তা চলছে বলে সংস্থার তরফে জানা গিয়েছে।
কেএমডিএ-র কাজে কী কী পরিবর্তন দরকার, এ দিনের বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হয়। ঠিক হয়েছে,
১) জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশনের (জেএনএনইউআরএম) কাজ নির্দিষ্ট সময় মেনে করতে হবে। কোনও বাধায় যাতে প্রকল্পের কাজ মাঝপথে বন্ধ না হয়, তাই আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরির আগে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে হবে সেখানে জমি বা ঠিকাদারের কোনও সমস্যা আছে কি না। কথা বলতে হবে জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের সঙ্গেও। এ দিন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী জানান, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতেই হবে। প্রয়োজনে আরও টাকা ও লোক নিয়োগ করতে হবে। এত দিন এই প্রকল্পের বেশির ভাগ কাজই সময়ে শেষ করা যায়নি। সময়সীমা মেনে কাজ শেষ না হলে দিল্লি থেকে পরবর্তী সময়সীমাটি ফের অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। মন্ত্রীর বক্তব্য, তা করা যাবে না। ফিরহাদ বলেন, “কাজের সময়সীমা ঠিক করতে হবে। কাজ শেষ হওয়ার আগে প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা সময় ঠিক করে ফেলব।”
২) কেএমডিএ অন্য দফতরের কাজও করে থাকে। নতুন সরকার মনে করছে, সংস্থার আয় বাড়াতে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গীকে সামনে রেখে এই ধরনের কাজ আরও বাড়াতে হবে। বাণিজ্যিক ভাবে সফল করতে তুলে ধরতে হবে সংস্থাকে।
৩) পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে কাজের মাধ্যমে সংস্থার আয় বাড়াতে হবে। যেমন, কেএমডিএ কোনও সংস্থাকে যে দামে জমি দেবে, পরবর্তীকালে হোটেল, আবাসন, কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সে বিনিয়োগ হওয়ার পরে সেই জমির দাম আরও বাড়বে। দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম মনে করছেন, জমির দামের একটা অংশ বিনিয়োগ করা হবে। বাকি অংশটি সরকার আগেই নিয়ে নেবে। পরে প্রকল্পের নির্মাণ শেষ হলে বর্গফুট হিসেবে একটা অংশ কেএমডিএ-কে দিতে হবে। কাজ শুরুর আগেই এ বিষয়গুলি চুক্তি করে নেওয়া হবে। এত দিন কেএমডিএ এ সব ক্ষেত্রে জমির দামের সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে লাভের একটি অংশ পেত। তাতে সমস্যা হত জানিয়ে প্রাক্তন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “ব্যবসায়ীরা সরকারকে লাভের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ফাঁকি দিত। তাই কোনও কোনও ক্ষেত্রে ব্যবস্থাটা বদলাতে চেয়েছিলাম।” বর্তমান মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও একমত। তিনি বলেন, “ওই ব্যবস্থায় ব্যবসায়ীরা সরকারকে ফাঁকি দিত। আমরা বর্গফুট হিসেবে নির্মীয়মাণ জায়গা নেব। তা বিক্রি করে আয় করব।”
বৈঠকে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ‘আর্বান ল্যান্ড সিলিং অ্যাক্ট’ নিয়েও আলোচনা হয়। এই আইনে শহরাঞ্চলে একক ভাবে ৪ কাঠার বেশি জমি রাখা যায় না। দীর্ঘদিন ধরেই ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক ও এডিবি এই আইনটি শর্ত হিসেবে তুলে দিতে চাইছে। প্রোমোটার ও জমি ব্যবসায়ীরাও এই আইন তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত বাম সরকারের গড়া কমিটি সুপারিশ করেছিল কেন্দ্র যখন আইনটি তুলে দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে মেনে নিতে হবে।
এই শর্ত মানতে বাম সরকারের আপত্তি থাকায় এত দিন বিষয়টি ঠেকিয়ে রাখা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি যা, তাতে এই প্রকল্পে টাকা পেতে গেলে রাজ্যকে ২০১২-র মধ্যে শর্ত মেনে আইনটি তুলে দিতে হবে। দেশের বেশির ভাগ রাজ্য শর্তটি মেনে ইতিমধ্যেই আইনটি তুলে দিয়েছে। দফতর সূত্রে খবর, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন স্পষ্টই বলেন, “গরিবের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আইন তুলে দেওয়ার আগে জমি মাফিয়ার বাড়বাড়ম্তের কথা ভাবতে হবে। এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না।” তিনি আরও বলেন, “এ নিয়ে এখনই কোনও আলোচনা করছি না।” প্রাক্তন মন্ত্রী অশোকবাবু বলেন, “ওরা কী করতে চায়, জানি না। ভাল কাজ করলে আমাদের সহযোগিতা পাবে।” |