জবরদখল করা জমিতে দলীয় অফিস নয়, নির্দেশ তৃণমূলের

বেশ কিছু দখলদার তুলে দিয়ে খালের ধারে ফাঁকা করা জায়গায় তৈরি হয়েছে তৃণমূলের অফিস। আর তা আঁকড়ে রয়েছেন অন্যান্য দখলদারেরা। এর ফলেই মার খাচ্ছে পঞ্চান্নগ্রাম খাল-সংস্কার। ওই খালের বহন ক্ষমতা যেমন কমেছে, তেমনি বর্জ্যও স্তূপীকৃত হচ্ছে খালের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে রীতিমতো অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এলাকার নেতাদের জানিয়েছেন, উন্নয়নের কাজে বাধা বরদাস্ত করা হবে না। কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের (কেইআইপি) কর্তারা চান, দখলকারদের সরিয়ে অবিলম্বে সংস্কারের কাজ শুরু হোক।
দক্ষিণ কলকাতা ও শহরতলির চড়িয়াল, বেগোর ও পঞ্চান্নগ্রাম খালের পাশে বেশ কিছু জায়গায় দখলদারদের জন্য খাল সংস্কার মার খাচ্ছে। ওই এলাকা সংলগ্ন রাস্তায় বিঘ্নিত হচ্ছে যান চলাচলও। কেইআইপি-র প্রকল্প অফিসার কল্যাণ ঘোষ এ কথা জানিয়ে বলেন, “খাল সংস্কারের জন্য যে দখলদারদের সরিয়ে দেওয়া আবশ্যিক, সে রকম পরিবারের তালিকা তৈরি করে ৩,৩৬৫টি সচিত্র পরিচয়পত্র বিলি হয়েছিল। ওঁদের পুনর্বাসনের জন্য কেএমডিএ-র কাছ থেকে কেনা ৫৮১টি ফ্ল্যাটও পর্যায়ক্রমে বিলি শুরু হয়। কিন্তু অনেকে ফ্ল্যাটের দখল নিয়েও আগের জায়গা ছাড়ছেন না।”
পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ পুরসভার ১০৩ ও ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে জোড়াব্রিজের দু’ধারে পঞ্চান্নগ্রাম খালের দু’পাশে। ফ্ল্যাট নিয়ে সরকারি জমি থেকে কিছু দখলদার উঠে যাওয়ায় সম্প্রতি সেখানে তৈরি হয়েছে তৃণমূল অফিস। ভোটের কয়েক মাস আগে পরিবর্ত জমি নিয়ে কিছু দখলদার উঠে গেলেও পার্টি অফিস তৈরির পর থেকে বাকিরা আর উঠতে চাননি। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ যাবতীয় বর্জ্য ফেলছেন এই খালেই। বাড়ছে খালের আগাছাও। সব মিলিয়ে ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে খালের অবস্থা।

পঞ্চান্নগ্রাম খালের ধারের তৃণমূল অফিস। নিজস্ব চিত্র

১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তারক চক্রবর্তী বলেন, “আমরা ওই পার্টি অফিস তৈরিতে আপত্তি করেছিলাম। তবে এমন অনেক ছেলে পার্টিতে এসে জুটেছে, যারা এই আপত্তি মানেনি।” ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সঞ্জয় দাস বলেন, “সিপিএমের ছত্রছায়ায় অনেক দিন ধরেই খালের ধার দখল হচ্ছে। প্রয়োজন হলে তৃণমূলের ওই পার্টি অফিস তুলে দেওয়া হবে।” খালের অপর ধারে নিকাশির যে কাজ হচ্ছে, তার মাটি-বর্জ্য খালে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সঞ্জয়বাবু। তিনি বলেন, “এ সবের জন্যও খাল বুজে যাচ্ছে। পুরসভা এবং সেচ দফতরকে লিখিত ভাবে এই সমস্যার কথা জানিয়েছি।”
কেইআইপি-র প্রকল্প অধিকর্তা সুসিত বিশ্বাস বলেন, “ওই অংশের খাল সংস্কার করতে হলে অনিচ্ছুক দখলদারদের উপর বলপ্রয়োগ করতে হত। তা সম্ভব হয়নি।” কেইআইপি-র ডিজি সৌম্য গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “যে ক’টি পরিবারকে সম্ভব, সরানো হয়েছিল। এর পরে ভোট এসে যাওয়ায় খালের ধার ফাঁকা করা যায়নি।” আর এক প্রকল্প অধিকর্তা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সরকারি ফ্ল্যাট নিয়েছে এমন অনেক পরিবার খালের ধারে পুরনো জায়গায় রয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে ফের সমীক্ষা করব।”
মঙ্গলবার বেহালার খাল পরিদর্শনে যান মেয়র। মহাকরণে তিনি বলেন, “পঞ্চান্নগ্রাম খাল সংস্কারেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ বিষয়ে রাজনীতির রং দেখা হবে না।”
এ দিকে, রাজারহাট- গোপালপুর বিধানসভা এলাকায় মালিকের অনুমতি ছাড়াই তাঁর জমিতে পার্টি অফিস তৈরির চেষ্টা করেছিলেন একদল তৃণমূল কর্মী। ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল সাইন বোর্ড। স্বয়ং শ্রমমন্ত্রীর এলাকাতেই দু’দিন আগে ঘটেছিল এই ঘটনা। বৃহস্পতিবার সকালে ওই জমির মালিক সঞ্জয় সাহা এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সঙ্গে সরাসরি দেখা করে ঘটনার কথা জানান। সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রী দলের অন্যান্য কর্মীদের নির্দেশ দেন ওই সাইন বোর্ড খুলে দিতে। মন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে শেষ পর্যন্ত এ দিন দুপুরে জমির মালিক সঞ্জয় সাহা নিজেই ওই সাইন বোর্ড খুলে দেন বিধা বাধায়।
রাজারহাট- গোপালপুর বিধানসভা এলাকার একটি ছোট জায়গা সাহাপাড়া। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দুবাবু সেখানকারই বিধায়ক। তিনি বলেন, “মালিকের অনুমতি না নিয়ে কোনও জমিতেই কিছু করা যাবে না। এটা আমাদের দীর্ঘদিনের কর্মসূচি। তাতে পার্টি অফিস যদি না হয় না হবে।”
সঞ্জয়বাবু বলেন, “মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করায় আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে এ বার পার্টি অফিসের বদলে পার্ক কিংবা মন্দির তৈরি করা হবে ওই জমির উপরে। জানি না শেষ পর্যন্ত ওই জমি ধরে রাখতে পারব কি না।” এ দিন সকালেই বিধায়কের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে জমির মালিকানার কাগজপত্র দেখান সঞ্জয়বাবু।

Previous Story Calcutta Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.