‘বুদ্ধ-যুগ’ শেষ, পরিবর্তনের নন্দন এখন মমতায় মশগুল

হিরঙ্গে কোনও বদল নেই। চায়ের দোকান, ইতিউতি ছড়ানোছিটোনো জটলা, প্রেমিক-প্রেমিকাদের মান-অভিমান। মূল প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ থাকার দরুণ যে খানিকটা ভাঙা হাটের আদল, সেটাও নতুন নয়। ছাদ থেকে চাঙড় খসার পরে নন্দন-১ অনেক দিনই ছবি দেখানো স্থগিত রেখেছে। নির্মাণকাজ চলছে বেশ কিছু কাল ধরেই।
নতুন তা হলে কী? রবীন্দ্রসদন-নন্দন-বাংলা আকাদেমি চত্বরে ঝিরঝিরে বাতাসে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে কিছু টুকরো টুকরো শব্দ। বদলের পদধ্বনি।
মঙ্গলবার একই সঙ্গে দু’টি ঘটনার সাক্ষী থেকেছিল কলকাতা। নন্দন, কলকাতা ফিল্মোৎসব, বাংলা আকাদেমি, রবীন্দ্র সদনের কমিটি ঢেলে সাজার কথা ঘোষণা করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আর সন্ধেবেলা মহাকরণ থেকে বেরিয়ে আচমকা মমতা নিজেই সশরীরে হাজির হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের তথাকথিত ‘খাস তালুকে’। বুধবারের নন্দন চত্বর অবধারিত ভাবে সারা দিন কাঁপল উত্তেজনার চোরা স্রোতে।
কোথাও সাধারণ কর্মীদের জটলা। নিজেদের মধ্যে হাসিতামাশা, “কী রে! কাল দিদি তোকে খুঁজছিলেন যে!” কোথাও বন্ধুদের জটলায় কৌতূহলী প্রশ্ন, “বুদ্ধবাবু কি ফেস্টিভ্যালে ছবি দেখতে আসবেন?” কোথাও বা যুগলের অন্তরঙ্গ আলাপে ফিসফিস, “মমতাও কি এ বার থেকে রোজ আসবেন এখানে?”

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই সংস্কারের তৎপরতা নন্দনে। বুধবার। সুদীপ আচার্য

সরকার বদল হলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশাসনে কিছু রদবদল ঘটে। কিন্তু নন্দন চত্বরের কাহিনি যে অনেকটাই স্বতন্ত্র। নন্দন তো কোনও দিনই আর পাঁচটা সরকারি প্রতিষ্ঠানমাত্র হয়ে থাকেনি মানুষের কাছে। কলকাতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র শুধু নয়, বামপন্থী সংস্কৃতি চর্চার পীঠস্থান শুধু নয়, বড় বেশি করে বুদ্ধবাবুর নামের সঙ্গেও ওতপ্রোত হয়ে ছিল শহরের এই বিন্দুটি। সংস্কৃতি ক্ষেত্রে আমরা-ওরা বিভাজনের অন্যতম নাটমঞ্চও ছিল সে। ‘পরিবর্তনে’র অন্যতম ব্যারোমিটার না হয়ে তাই উপায় নেই এই চত্বরটির। বায়ুস্তরের সেই চাপ অনুভব করা যায় কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে। তাঁরা জানেন, আতসকাচের তলায় তাঁদের বাস। ‘বদল’ নিয়ে প্রশ্ন করলেই দ্রুত বলে উঠছেন, “না না, আমাদের কিছু না। আমাদের প্লিজ কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না।”
অথচ এতগুলো বছর ধরে বুদ্ধবাবু প্রায় রোজ আসতেন নন্দনে, তথ্যকেন্দ্রে। বেশ কিছুটা সময় কাটাতেন প্রতি সন্ধ্যাতেই। কেমন ছিল কর্মীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক? বড় কর্তাদের কথা আলাদা। এমনিতে কর্মীদের সঙ্গে বুদ্ধবাবুর আলাদা করে বিশেষ হৃদ্যতার কথা মনে করতে পারলেন না কেউই। “আসতেন, তেতলার ঘরে বসে পড়াশোনা করতেন, এক কাপ লাল চা খেতেন! এই তো, আর কী?” নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে কেমন লাগল? “ভাল, ভাল!” এক বাক্যে বললেন সকলেই। কেন ভাল? “ভারী সহজ মানুষ। সাদামাঠা কথা বলেন, আবার একটা প্রশাসনিক দৃঢ়তাও আছে! বেশ ঘরোয়া অভিভাবকের মতো!”
নন্দনের নতুন ‘অভিভাবক’ নতুন কমিটিতে পুরনো মুখও রেখেছেন। তাঁদের অনেকেই পরিচিত বামপন্থী। নন্দনের কমিটিতে বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য হয়েছেন মৃণাল সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তরুণ মজুমদার। ‘পরিবর্তিত’ পরিস্থিতিতে কী করবেন তাঁরা? মৃণালবাবু বললেন, “আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। কী করব, সেটা সরকারি লোককে বলব। সাংবাদিককে নয়।” সরকারি ভাবে কিছু জানার আগে মন্তব্য করতে চাইলেন না সৌমিত্রও। বললেন, ‘‘কী করব, সেটা চিঠি পেলে তার পর ঠিক করব।” তরুণ মজুমদার একটাই বাক্য বললেন, “লিখে দিন, সকলকে সব রকম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।” নন্দন কী করবে? অল্প কিছু দিন হল অধিকর্তার দায়িত্বে এসেছেন বিদ্যুৎ ভট্টাচার্য। বললেন, “সরকারি তালিকা হাতে পেলেই কমিটির চেয়ারপার্সনদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। একসঙ্গে বসব। গণতান্ত্রিক রীতি মেনেই যাবতীয় কাজকর্ম হবে।”

First Page Calcutta Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.