পতিত জমিতে ভেষজ চাষ করে যে বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করা যায় তা বোঝাতে গত এক দশকে কম আলোচনা সভা হয়নি। ভেষজ চাষে কৃষকদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে বহু প্রশিক্ষণ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সাফল্য এল শিলিগুড়ি মহকুমা উদ্যান পালন এবং সিঙ্কোনা দফতরের হাত ধরে। মহকুমার খড়িবাড়ি ব্লকের বিন্যাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উল্লাজোতে ২৫ জন কৃষক তুলসি ও অশ্বগন্ধা চাষে নেমেছেন। ভেষজ চাষের প্রধান সমস্যা উৎপাদিত পণ্য বিক্রির বাজারের অভাবে। এই ব্যাপারে এগিয়ে এসেছে বন দফতর। ফলে ধান, পাট, সবজি চাষে নেমে দামে মার খাওয়া কৃষকদের কাছে এক নতুন সম্ভাবনার পথ খুলে গেল বলে মনে করছেন ওই আধিকারিকেরা। শিলিগুড়ি মহকুমা উদ্যান পালন দফতরের জেলা আধিকারিক বিপ্লব সরকার বলেন, “গত বছর উল্লাজোতে এক কৃষক অশ্বগন্ধা চাষে কয়েক হাজার টাকা লাভ করেছেন। এ বার অনেকে এগিয়ে এসেছেন। প্রত্যেকের উৎপাদনই বন দফতর যাতে কেনে সেই ব্যবস্থা হয়েছে। ভেষজ চারার নার্সারি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।” এমএফপি বিভাগের ডিএফও অরুণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অশ্বগন্ধার বাজার রয়েছে। প্রতি বছর আমরা ১০ কুইন্টাল অশ্বগন্ধার শেকড় কিনি। কৃষকেরা নিশ্চিন্তে চাষে নামতে পারেন।”
প্রায় এক দশক ধরে উত্তরবঙ্গে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলেও কৃষকেরা ধান কিংবা পাটের দাম পাচ্ছেন না। ফুল ও সবজির দাম নিয়েও একই সমস্যা। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না-থাকায় পাইকারি বাজারে দাম নেমে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভেষজ চাষ কৃষকদের বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করতে পারে বলে মনে করেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। অথচ উত্তরবঙ্গে দু’বছর আগেও ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ভেষজ চারাও উৎপাদন হত না। কৃষকদের উৎসাহ দিতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, বন দফতর, বিভিন্ন উদ্যান পালন সমিতির পক্ষ থেকে বহু সভা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেও লাভ হয়নি। উদ্যান পালন দফতর তাহলে কোন ম্যাজিকে এমন সাফল্য পেলেন? ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দুয়েক ধরে তাঁরা মহকুমা জুড়ে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ শুরু করেছেন। ধান, পাট, সবজি চাষ হয় না এমন পতিত জমিতেও যে ভেষজ চাষে প্রচারে নেমেছেন। পাশাপাশি সিঙ্কোনা দফতরের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ চলছে। এমনকী, ভেষজ চাষে যে সরকারি ভরতুকি মিলবে তারও প্রচার চলছে। লাগাতার এই প্রচারের জেরেই গত বছর উল্লাজোতের জগদীশ মণ্ডল অশ্বগন্ধা চাষে নামেন। চার মাসের মধ্যে ফসল তৈরি হয়ে গেলে জগদীশবাবু পুরো ফলনই এমএফপি বিভাগে বিক্রি করে দেন। কৃষকদের অশ্বগন্ধার বীজ বিক্রি করে আরও ১১ হাজার টাকা আয় করেন জগদীশবাবু। ওই ঘটনাই উৎসাহিত করে তোলে এলাকার অন্যান্য কৃষকদের।
জগদীশবাবু বলেন, “এ বার ২ বিঘা জমিতে অশ্বগন্ধা চাষ করেছি। ঠিক করেছি, জমি ফেলে না-রেখে ভেষজ চাষ করব।” এলাকার আর এক চাষি অংশুপতি মণ্ডল বলেন, “ফলন যদি বাজারে বিক্রি না-হয় তা হলে কৃষকেরা কোন ভরসায় চাষ করবেন? তবে ভেষজ নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। সবজি চাষের চেয়ে অনেক নিরাপদ।” শিলিগুড়ি মহকুমা উদ্যান পালন দফতরের সহকারী হর্টিকালচারিস্ট প্রণব সাহা বলেন, “অশ্বগন্ধা চাষে বিঘা প্রতি ৩০ হাজার টাকা আয় হতে পারে। এখন থেমে থাকতে চাই না। চাষি ও ক্রেতার সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগী হচ্ছি।” |