রাজ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য পাল্টে যাওয়ায় বাম শ্রমিক সংগঠনগুলি যে চাপে পড়বে, তা অনেকটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনের ‘প্রতিপত্তি’ বাড়তে থাকায় প্রমাদ গুনছে তাদের জোটসঙ্গী কংগ্রেসের অনুগামী সংগঠন আইএনটিইউসি-ও। এমনকী সংঘর্ষও হচ্ছে।
মঙ্গলবারই রানিগঞ্জের রতিবাটিতে আইএনটিইউসি কার্যালয় দখলের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র বিরুদ্ধে। বুধবার সকালে দুর্গাপুরে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের গেটের কাছে ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাওয়ায় সংঘর্ষ বেধে যায়। কয়েক জন আহতও হন। আইএনটিইউসি-র দু’জনকে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তৃণমূল নেতা অশোক কুণ্ডুর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
শিল্পাঞ্চলের রাজনীতিতে চিরকালই শ্রমিক সংগঠন ও তার নেতাদের প্রভাব যথেষ্ট। দীর্ঘ বাম জমানায় প্রায় একচ্ছত্র প্রভাব ছিল সিপিএম অনুগামী সিটু-র। কিছুটা হলেও প্রভাব রয়েছে আইএনটিইউসি-রও। রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই সদস্য সংখ্যায় ধস নামার আশঙ্কায় ভুগছে সিটু। কিন্তু কংগ্রেস জোটশরিক হওয়া সত্ত্বেও আইএনটিইউসি-ও সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছে না। বস্তুত, রাজ্য জুড়েই বিভিন্ন এলাকায় সিটু অফিস যেমন দখল হচ্ছে, আঁচ আসছে কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের উপরেও। তৃণমূল ছাড়া অন্য সব দলের শ্রমিক নেতারা এতটাই আতঙ্কিত যে, নিজেরা বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এ ব্যাপারে তাঁরা আর্জিও জানিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, সেই আবেদন করেছেন কংগ্রেসের
তা সত্ত্বেও অবশ্য গণ্ডগোল থেমে নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইএনটিইউসি নেতার মতে, রাজ্যে বাম জমানার অবসান হলেও শিল্পাঞ্চলে সিটু এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী। তাদের তুলনায় দুর্বল আইএনটিইউসি তাই অনেক জায়গায় ‘সহজ শিকার’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তৃণমূল সমর্থকদের ‘নজর’ পড়ছে তাদের কার্যালয়ের উপরেই। |
এ দিন দুর্গাপুরের ঘটনায় অবশ্য দায় নিতে নারাজ অ্যালয় স্টিলে আইএনটিটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক কুণ্ডু। অভিযুক্ত নেতার পাল্টা অভিযোগ, “আইএনটিইউসি নেতা বিকাশ ঘটক মোটা টাকার বিনিময়ে চাকরির সুযোগ করে দিচ্ছেন। সিটু-র দালালি করছেন। আমরা বহু দিন কর্মীদের ক্ষোভ সামাল দিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু আজ তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে গিয়েছে।” অ্যালয় স্টিলে আইএনটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক বিকাশবাবু পাল্টা বলেন, “অসৎ উদ্দেশ্যে কিছু লোককে জড়ো করে আমাদের ৩৫-৪০ বছরের কার্যালয় দখলের ছক কষা হয়েছিল। সকালে আমাদের সদস্যেরা সেখানে যেতেই আইএনটিটিইউসি নামধারী কিছু লোক চড়াও হয়, মারধর করে। এরা কারা? যারা জোটসঙ্গী বলে পরিচয় দেয়, তারাই আমাদের কার্যালয় দখলের চেষ্টা করছে! মুখ্যমন্ত্রী, প্রদেশ সভাপতি এবং আইএনটিইউসি-র সর্বভারতীয় সভাপতিকে জানাব।”
আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য কোর কমিটির সদস্য সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, অন্য সংগঠনের কার্যালয়ে হামলা চালানো তাঁরা সমর্থন করেন না। তাঁর আশ্বাস, “মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ আছে, কেউ যেন কোনও অসংযত আচরণ না করেন। অন্যের কার্যালয় আমরা দখল করতে যাব কেন? নির্দিষ্ট করে এ রকম কোনও অভিযোগ এলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সিটু বা আইএনটিইউসি, কোনও সংগঠনই অবশ্য এই আশ্বাসে বিশেষ ‘আশ্বস্ত’ হতে পারছে না। |