দ্রুত পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরুর দাবি তুলেছেন কুলটির ধস কবলিত সাঁকতোড়িয়া গ্রামের বাসিন্দারা। এডিডিএ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে এই দাবি জানানো হয়েছে। এডিডিএ জানিয়েছে, ধসপ্রবণ অঞ্চলের জনসমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। তা শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। কিন্তু এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, জনসমীক্ষায় নিযুক্ত সংস্থাটি মাঝপথে কাজ বন্ধ করে চলে গিয়েছে। যদিও এডিডিএ-র দাবি, তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না।
রানিগঞ্জ ও আসানসোল খনি অঞ্চলের মোট ১৩৯টি ধসপ্রবণ অঞ্চলের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক তার জন্য অর্থ অনুমোদন করেছে। রাজ্য সরকারের তরফে ওই পুনর্বাসনের কাজ করবে এডিডিএ। ঠিক হয়েছিল, প্রথম দফায় বাঙালপাড়া, সামডিহি, কেন্দ্রা ও হরিশপুর গ্রামের বাসিন্দাদের পুনর্বাসন হবে। কিন্তু কুলটির সাঁকতোড়িয়া গ্রামের বাসিন্দারা আপত্তি জানান। ‘সাঁকতোড়িয়া ভিলেজ সমিতি’ নামে একটি মঞ্চ গড়ে তাঁরা প্রথম তালিকায় তাঁদেরও নাম যোগ করার দাবি তুলেছেন। |
সাঁকতোড়িয়া ভিলেজ সমিতির সম্পাদক তারাপদ খাওয়াস জানান, ২০০০ সালের জুন মাসে প্রথম বার ওই গ্রামে ধস নামে। বেশ কয়েকটি পরিবার ঘরছাড়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি স্কুল। আতঙ্ক ছড়ায় গোটা গ্রামে। ইসিএলের তরফে ধস কবলিত এলাকায় মাটির তলায় জল ও বালির মিশ্রণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০০৪ সালে ফের ধস নামে। বেশ কয়েকটি বাড়ি ভেঙে যায়। ফের ঘরছাড়া হয় অনেকগুলি পরিবার। ইসিএল কর্তৃপক্ষ সাময়িক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। গত বছর ফের ১৫ দিন অন্তর দু’বার ধস নামে। সে বার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মুচিপাড়া ও মুসলিম বস্তি অঞ্চল। মাটির তলা দিয়ে অনর্গল কালো ধাঁয়া ও আঁচ বেরোতে থাকে। এখনও ওই সেই আঁচ অনুভব করা যায়। সংস্কারের পরেও ঘরে বড়বড় ফাটল তৈরি হচ্ছে। যে কোনও সময়ে ভূগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বছরের শেষ থেকেই সাঁকতোড়িয়ার প্রায় দু’হাজার পরিবার দাবি তুলেছে, প্রথম দফার পুনর্বাসন তালিকাতেই তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এডিডিএ কর্তৃপক্ষ সে দাবি আংশিক মেনেও নিয়েছেন। এডিডিএ-র আসানসোল কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা সহকারী নির্বাহী আধিকারিক স্বপন মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাঁচির একটি সংস্থাকে দিয়ে আমরা জনসমীক্ষার কাজ শুরু করেছি। তা শেষ হয়ে গেলেই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পরিচয়পত্র দেব।”
সম্প্রতি এলাকায় গিয়ে অবশ্য জানা যায়, বিধানসভা নির্বাচনের আগেই সেই সংস্থা কাজকর্ম গুটিয়ে ছেড়ে চলে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা সাঁকতোড়িয়া ভিলেজ সমিতির সহ-সম্পাদক বাচ্চু মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ঠিক মতো সমীক্ষা হয়নি। মানচিত্র বানানো হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির ছবিও তোলা হয়নি। স্বপনবাবু অবশ্য দাবি করেন, কাজ বন্ধ হওয়ার বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। সে ব্যাপারে খোঁজ নেবেন।
বাচ্চুবাবু বলেন, “আমরা নিশ্চিত, ভোটের আগে লোক দেখানোর উদ্দেশেই এডিডিএ জনসমীক্ষা শুরু করেছিল। আমরা এডিডিএ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, অবিলম্বে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু না হলে লাগাতার আন্দোলন ও অনশন শুরু করব।” যদিও নতুন সরকার পরিচালিত এডিডিএ ইতিবাচক ভূমিকা নেবে বলেই তাঁদের আশা। |