|
|
|
|
কংগ্রেসেরই বাধায় বন্ধ পুর-অভিযান |
নিজস্ব সংবাদদাতা ² শিলিগুড়ি |
শহরে অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে কংগ্রেস নেতার বাধার মুখে পড়ে কাজ শেষ না করেই ফিরতে হল পুরকর্মীদের। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি পুরসভার ডেপুটি মেয়র নান্টু পালের ওয়ার্ডে (১১) ঘটনাটি ঘটেছে। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই ওয়ার্ডের কংগ্রেস সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বেআইনি বাড়ি ভাঙতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় উদ্বিগ্ন জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার। তিনি বিস্তারিত খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের কাছে সব জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলররা। কারণ, মন্ত্রী হওয়ার পরে পুরসভায় গিয়ে গৌতমবাবুই সব বেআইনি বাড়ি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত অবশ্য জানান, কোনও বাধা মানার প্রশ্ন নেই, অভিযান চলবে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৭ মে পুরসভার তরফে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শহরের অবৈধ নির্মাণ ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপ নিতে বলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। কঠোর হাতে মোকাবিলা করতে সমস্ত অবৈধ নির্মাণ কাজ ভেঙে দিতে পুরবোর্ডকে নির্দেশ দেন। এর পরেই এ দিন অভিযানে নামে পুর কর্তৃপক্ষ। প্রথমে সেবক মোড় লাগোয়া এমএন সরকার স্ট্রিটে একটি বাড়ির ৪ তলায় অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দেওয়া হয়। এর পর বেলা দেড়টা নাগাদ ডেপুটি মেয়রের ওয়ার্ডে ব্যবসায়ী নরেশ বনশালের বাড়ির পাঁচ তলায় অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে যান পুরকর্মীরা। ছাদ ভেঙে ফেলার কাজ অনেকটা এগোলে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা সৌরভবাবু সেখানে পৌঁছন। পাঁচ তলায় যে ঘরের ছাদ ভাঙা হচ্ছে তার নিচে দাঁড়িয়ে পড়েন। তার উপরেই ছাদ ভেঙে ফেলা হোক জানালে কর্মীরা কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার দীপক দত্তের নেতৃত্বে পুরকর্মীরা এর পর ফিরে যান।
মেয়র বলেন, “শহরের অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দিতে অভিযান শুরু হয়েছে। ওই সমস্ত বাধায় কাজ বন্ধের প্রশ্নই নেই। পুরকর্মীরা এ দিন ওই বাড়ি-সহ দুটি অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দিয়েছেন। লাগাতার অভিযান চলবে।” সৌরভবাবু নিজেও প্রমোটারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, “যাঁর বাড়ি ভাঙা হচ্ছিল তিনি আমাদের দলেরই কর্মী। সে জন্যই গিয়েছিলাম।” ডেপুটি মেয়র জানিয়েছেন, মেয়র বিষয়টি দেখছেন। যা বলার তিনিই বলবেন। এ দিন সেবক মোড় লাগোয়া এমএন সরকার স্ট্রিটে জগদীশ সাউয়ের বাড়ির ৪ তলায় অবৈধ নির্মাণ ভাঙা হয়। বছরখানেক আগেই ওই অবৈধ নির্মাণ নিয়ে নোটিশ পাঠায় পুর কর্তৃপক্ষ। সেবক রোডে নরেশবাবুর বাড়ির ৫ তলায় অবৈধ নির্মাণ নিয়েও বছরখানেক আগে নোটিশ করা হয়েছিল। কিন্তু সদুত্তর না মেলায় গত ১৮ মে ফের নোটিশ করা হয়েছিল। পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, শহরে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রায় ১৫০ টি বাড়িকে ইতিমধ্যেই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে শরৎ বসু রোডে, শেঠ শ্রীলাল মার্কেট, সেবক রোডে বেশ কিছু অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ পেয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুজয় ঘটক ইতিমধ্যেই একাধিকবার মেয়রকে বিষয়টি জানিয়েছেন। এমনকী, ওই সব বেআইনি বাড়ি ভেঙে দেওয়ার জন্য সুজয়বাবু চিঠিও দিয়েছেন বলে পুরসভা সূত্রের খবর। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে কবিগুরু সরণির একটি বহুতলের সামনে জায়গা দখল করে অবৈধ নির্মাণ হয়েছে বলেও অভিযোগ পৌঁছেছে পুরসভায়। ওই এলাকারই রথখোলায় আরেকটি জায়গায় প্রায় ৫ হাজার বর্গফুট এলাকায় বেআইনি নির্মাণ করেছে একটি প্রমোটার সংস্থা। দুটি ক্ষেত্রেই পুরসভা কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ওই দু’টি জায়গায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে বাসিন্দাদের অনেকের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধছে। কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, “ডেপুটি মেয়রের ওয়ার্ডে বেআইনি বাড়ি ভাঙা রুখতে দলের নেতা প্রকাশ্যে নেমেছেন। রথখোলায় হয়তো আড়াল থেকে নেতা কলকাঠি নাড়ছেন। কাজ হবে কী করে? দেখা যাক উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী কী করেন?” |
|
|
|
|
|