জমির বিবাদেই খুন ঝাড়খণ্ডী নেতা, সন্দেহ পুলিশের
মিজমা সংক্রান্ত বিবাদের জেরে খুন হয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডী নেতা বিবেকানন্দ ওরফে বাজারি মাহাতো। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের এমনই ধারণা।
নিহত নেতার মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ওই হত্যায় জড়িত সন্দেহে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে রঘুনাথপুর থানার পুলিশ। ধৃতের নাম প্রবীর মাঝি। তিনি আদতে আড়শা থানার জামবাদ গ্রামের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে তিনি পুরুলিয়া শহরের দুলমি এলাকায় থাকেন। সোমবার বিকেলে বাড়ি থেকেই তাঁকে পুলিশ ধরে। এই হত্যায় প্রবীরের পাশাপাশি পুরুলিয়া শহরের একটি গাড়ির চালকও যুক্ত বলে পুলিশের দাবি। যদিও ওই চালক পলাতক। মঙ্গলবার রঘুনাথপুর আদালতে হাজির করালে বিচারক প্রবীরকে ৯ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “ধৃত যুবকজেরার মুখে খুনের কথা কবুল করেছেন।”
পুলিশের দাবি, জেরার মুখে প্রবীর জানিয়েছেন, বিবেকানন্দবাবু জমি কেনাবেচা ব্যবসা করা একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। কাজের সূত্রেই প্রবীরের সঙ্গে আড়শারই বাসিন্দা ওই ঝাড়খণ্ডী নেতার পরিচয়। প্রবীর জমি ঠিক করতেন। দরদামে পোষালে বিবেকানন্দবাবুর সংস্থা ওই জমি কিনে নিত। বিনিময়ে ধৃত ব্যক্তি দালালির টাকা পেতেন। সম্প্রতি ঝালদার একটি জমি কেনা নিয়ে দু’জনের বিবাদ বাধে। সেই গণ্ডগোলের জেরেই বিবেকানন্দবাবু খুন হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে।
গত ২১ মে সকালে পুরুলিয়া-রঘুনাথপুর সড়কের ধারে রঘুনাথপুর থানার শাঁকা বটতলা বাসস্টপের অদূরে একটি শুকনো পুকুরের ধার থেকে পুলিশ বিবেকানন্দবাবুর দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করে। রঘুনাথপুরের ওসি সাধন পাঠন নিহত নেতার মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তদন্তে নামেন। দেখা যায়, বিবেকানন্দবাবুর মোবাইলে শেষ যে নম্বর থেকে কল এসেছে, সেটি প্রবীরের। একই নম্বর থেকে একাধিক কল আসায় পুলিশের সন্দেহের তালিকায় চলে আসে প্রবীরের নাম।
পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত ব্যক্তিও কবুল করেছেন যে, ঝালদার ওই জমি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিবেকানন্দবাবুর দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। ঘটনার দিন পাঁচেক আগে তাঁদের মধ্যে কথাকাটাকাটিও হয়। ২০ মে অর্থাৎ দেহ উদ্ধারের আগের দিন দুপুরে প্রবীর মোবাইলে ফোন করে রঘুনাথপুরে একটি ভাল জমির সন্ধান মিলেছে জানিয়ে সেখানে বিবেকানন্দবাবুকে ডাকেন। এর পরে দু’জনে পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে একটি ধাবায় খাওয়াদাওয়া সারেন। বিকেলের দিকে শহরের ট্যাক্সিস্ট্যান্ড থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে রঘুনাথপুরের দিকে রওনা হন।
জেরায় পুলিশ জেনেছে, যাওয়ার পথে আনড়া থেকে এক বোতল পেট্রোল কেনেন প্রবীর। বিবেকানন্দবাবুর কৌতূহলী প্রশ্নের জবাবে প্রবীর তাঁকে জানান, হঠাৎ তেল ফুরিয়ে গেলে এটা কাজে লাগবে। চালকের পাশের আসনে বসেছিলেন বিবেকানন্দবাবু। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে প্রবীর জানান, চলন্ত গাড়িতেই তিনি পিছন থেকে বিবেকানন্দবাবুর গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে তাঁকে খুন করেন। এর পরে শাঁকা বটতলা বাসস্টপের অদূরে মৃতদেহ ফেলে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে গাড়ি নিয়ে তিনি ফিরে আসেন পুরুলিয়ায়।
তদন্তকারী এক পুলিশ অফিসারের কথায়, “গাড়িতেই বিবেকানন্দবাবুর মোবাইল স্যুইচ অফ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল এই বলে যে, ‘জমিজমার ব্যাপার, ফোন খোলা থাকলে কেউ বিরক্ত করতে পারে’। গ্রেফতারের পরে ধৃত ব্যক্তি প্রথম দিকে কিছু জানাতে না চাইলেও জেরার মুখে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে সব স্বীকার করে নেয়।” যে গাড়িতে খুন হয়েছেন বিবেকানন্দবাবু, তার চালকের নামও জানতে পেরেছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই ওই চালকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়েছে। চালক এখন পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছে, জমিজমার বিবাদ ছাড়াও এই খুনের পিছনে অন্য কোনও কারণ ছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
Previous Story Purulia Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad|Medinipur
National | Bidesh| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.