বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে এক পক্ষ কাল কেটে গিয়েছে। পুরোদমে কাজ শুরু করে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার। নিত্যনতুন উন্নয়নের পরিকল্পনা ঘোষিত হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়েই অন্য ছবি। ভোটের ফল বেরনোর পর থেকেই অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজকর্ম বন্ধ। একই অবস্থা পঞ্চায়েত সমিতিগুলিরও। দেখা মিলছে না নির্বাচিত সদস্য, পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের। এ ভাবে উন্নয়নের কাজ হবে কী করে? সমস্যা সমাধানে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে প্রতিটি ব্লকে সর্বদল বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। জেলায় পঞ্চায়েতের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক উত্তম পাত্র বলেন, “পঞ্চায়েতের কাজ থমকে থাকার অর্থ সাধারণ মানুষের ক্ষতি। উন্নয়নের কাজ যাতে থমকে না যায়, সে জন্য প্রতিটি ব্লকেই সর্বদল বৈঠক করতে বলা হয়েছে।”
উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই অচলাবস্থার কারণ জেলার রাজনৈতিক বিন্যাস। রাজ্যে এ বার বিপুল সংখ্যক আসন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট সরকার। কিন্তু এই জেলার ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র ৫৯টিতে ক্ষমতায় রয়েছে জোট। বাকি সবই বামেদের দখলে। ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যেও ২৭টিতেই ক্ষমতায় রয়েছে সিপিএম। জেলা পরিষদও সিপিএমের দখলে। রাজ্যে পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই নানা এলাকায় সিপিএম নেতা-কর্মীদের মারধর, জরিমানা আদায়ের ঘটনা ঘটছে। গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও উঠছে। আতঙ্কে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের অনেকেই ঘরছাড়া। অনেকে আবার ইস্তফা দিতে চাইছেন। চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের বান্দিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সব সদস্যই বিডিও-র কাছে পদত্যাগ করার আবেদন জানিয়েছেন। ঝাঁকরা গ্রাম পঞ্চায়েতেরও কয়েকজন সদস্য ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে আবেদন করেছেন। তবে কোনও ক্ষেত্রেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি। পরিবর্তে কী ভাবে পঞ্চায়েতের কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করা যায়, সেই বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে প্রশাসন। তবে জেলার প্রতিটি ব্লকেই যা অবস্থা, তাতে কত দিনে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ছন্দে ফিরবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারি কর্মীরা অফিসে আসছেন। কিন্তু নির্বাচিত সদস্যদের দেখা নেই। বিডিও অফিসের বৈঠকেও গরহাজির থাকছেন পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আতঙ্কের জেরেই এই অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে। বন্ধ একশো দিনের প্রকল্পের কাজ। খুব বেশি দিন এই অচলাবস্থা চলছে বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, তফসিলি উপজাতিভুক্তদের পেনশনও অনিয়মিত হয়ে পড়বে। শংসাপত্র পাওয়া, ইন্দিরা আবাসের বাড়ি তৈরি, সবই থমকে যাবে। সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হবেন প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে।
কোনও ভাবেই যাতে এই পরিস্থিতি তৈরি না হয় সে জন্য এখন থেকেই তৎপর প্রশাসন। স্থির হয়েছে সর্বদল বৈঠকে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের কাছে আবেদন করা হবে যাতে উন্নয়নের কাজ মসৃণ গতিতে পরিচালনা করা যায়। কোথাও আর্থিক দুর্নীতির ঘটনা দেখলেই প্রশাসনে জানানোর কথা বলা হবে। প্রশাসনও দ্রুত কড়া পদক্ষেপ করবে। এই ভাবেই সর্বদল বৈঠক করে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হচ্ছে প্রশাসন। জট কাটে কি না, সেটাই এখন দেখার। |