বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হওয়া দূরের কথা। এখনও সমীক্ষাই শেষ করে উঠতে পারেননি পুর-কর্তৃপক্ষ। ফলে, রাজীব আবাস যোজনায় বস্তি এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কাজ থমকে রয়েছে রেলশহরে।
কাজ দেখভালের জন্য একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজও এগোচ্ছে ঢিমেতালে। ফলে, খড়্গপুর পুরসভার ভূমিকায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ বস্তিবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, রাজীব আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরি করা নিয়ে তৎপর নন পুর-কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প নিয়ে অযথা গড়িমসি করা হচ্ছে।
অভিযোগ উড়িয়ে খড়গপুরের পুরপ্রধান জহরলাল পাল অবশ্য বলেন, “নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হতে পারে বলেই সমীক্ষার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। ফের কাজ শুরু হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমীক্ষা শেষ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” তিনি জানান, সার্ভে রিপোর্ট জমা পড়লেই এই প্রকল্প নিয়ে চূড়ান্ত তৎপরতা শুরু হয়ে যাবে।
খড়গপুর শহরের বড় অংশ জুড়েই রয়েছে রেলের এলাকা। আগে রেল এলাকা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। সামান্য পরিষেবা পেতেও রেল-কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হতে হত। পরিস্থিতি বদলেছে গত বছর। এলাকা পুনর্বিন্যাসের পরে রেল এলাকা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফলে, স্থানীয় মানুষ প্রয়োজনীয় পরিষেবার জন্য পুর-প্রতিনিধির কাছেই দরবার করেন। রেল এলাকা নিয়ে নতুন করে ৮টি ওয়ার্ড তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে খড়গপুর শহরে এখন ৩৫টি ওয়ার্ড। পুরসভা সূত্রের খবর, রেল এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ২৬টি বস্তি রয়েছে। প্রায় ৮ হাজার মানুষ সেখানে থাকেন। বস্তি গড়ে উঠেছে মূলত গোলবাজার, ওল্ড সেটেলমেন্ট, নিউ সেলেটমেন্ট, ট্রাফিক, মথুরাকাটি, নিমপুরা এলাকায়। গোলবাজারের আজাদ বস্তিতেই কয়েকশো মানুষের বসবাস। রেলে কাজের সূত্রে অনেকে ভিন্ রাজ্য থেকে রেলশহরে আসেন। তার পর পাকাপাকি ভাবে খড়্গপুরের বাসিন্দা হয়ে যান। এক সময়ে উচ্ছেদ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল বস্তি এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। আশঙ্কা ছিল, রেলের জমি থেকে গরিব মানুষকে উচ্ছেদ করা হবে। এখন অবশ্য সেই আশঙ্কা আর নেই।
গত বছরই রেলশহরে পুরসভা নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে উঠে এসেছে উচ্ছেদ প্রসঙ্গ। তৃণমূলের পক্ষ থেকে সেই সময় প্রচার করা হয়, ক্ষমতায় এলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গরিব মানুষকে পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। ‘সুখী-গৃহ’ প্রকল্পও রূপায়িত হবে। নির্বাচনে জিতে পুরসভার ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। কিন্তু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত করতে পুর-কর্তৃপক্ষ তৎপর নন বলেই অভিযোগ। রাজীব আবাস যোজনায় এক-একটি বাড়ি তৈরি করতে খরচ পড়বে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা জমা দেবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। অর্থাৎ যাঁর বাড়ি তৈরি হবে তিনি। ২৭০ বর্গফুটের বাড়িটিতে দু’টি ঘর, শৌচাগার ও রান্নাঘর থাকবে।
রেলের জমিতে গড়ে ওঠা বস্তিতে যাঁরা থাকেন, তাঁদের অধিকাংশেরই ২০ হাজার টাকা জমা দেওয়ারও সামর্থ্য নেই। এঁদের জন্য ‘সুখী গৃহে’র বন্দোবস্ত করার কথা ভেবেছে পুরসভা।
নির্বাচনের আগেই সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু পুরসভা সূত্রে খবর, কাজ এগিয়েছে নামমাত্র। রাজীব আবাস যোজনার কাজ যে আরও তৎপরতার সঙ্গে হওয়া উচিত, মানছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস কাউন্সিলর রবিশংকর পাণ্ডে। তাঁর কথায়, “মাঝে নির্বাচনের জন্য সমীক্ষার কাজ বন্ধ ছিল। তবে এ বার দ্রুত কাজ শেষ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে কমিটিকেও তৎপর হতে হবে।” আর বর্তমান পুরপ্রধানের আশ্বাস, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমীক্ষার কাজ শেষ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” |