অভাবের সঙ্গে লড়াই করেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফল সঞ্জয়
ভাবের সঙ্গে লড়াই চলছে সেই ছোটবেলা থেকে। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে কষ্ট করে পড়াশোনা করে এ বার মাধ্যমিকে নব্বই শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়েছে কেতুগ্রামের সঞ্জয় সাহা। তার পরীক্ষার ফল ভাল হওয়ায় খুশি কেতুগ্রামের বিল্লেশ্বর গ্রামের বাসিন্দারা। খুশি তার স্কুলের শিক্ষকেরও। সঞ্জয়ের ফলে খুশি হলেও তার পরিবারের এখন একটাই চিন্তা। এর পরে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শেষ পর্যন্ত হবে তো? বিল্লেশ্বর স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরবিন্দ মণ্ডল অবশ্য সঞ্জয়ের পরিবারকে তার পড়াশোনার বিষয়ে সব রকম সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন।
বিল্লেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা মহেন্দ্রনাথ সাহার বড় ছেলে সঞ্জয়। মহেন্দ্রবাবু পেশায় দর্জি। বিল্লেশ্বর গ্রাম থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দুরে বাকলসা গ্রামের বাসস্ট্যান্ডে একটি সেলাই মেশিন নিয়ে বসেন তিনি। প্রতি দিন সকালে নিয়ম করে বাকলসা যান। সারা দিনের কাজ সেরে বিকেলে বাড়ি ফেরেন। তাঁর একার রোজগারে পরিবারের প্রয়োজন মেটে না। সঞ্জয়ের বোন নবম শ্রণিতে পড়ে। সংসারের সব কাজ সামলে সঞ্জয়ের মা মনিকা সাহা সেলাইয়ের কাজ করেন।
সঞ্জয় সাহা। নিজস্ব চিত্র। দীর্ঘ দিন অভাবের সঙ্গে লড়াইয়ের পরে সঞ্জয়ের এই ভাল ফলে গর্বিত স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক থেকে সাধারণ গ্রামবাসীরা। মহেন্দ্রবাবু বলেন, “এক চিলতে একটি ঘরে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকি। ওই একটা ঘরের মধ্যেই লেখাপড়া করেছে সঞ্জয়। ওর কষ্ট করে পড়াশোনা করা আজ সার্থক হয়েছে।” বাংলায় ১৬২, ইংরেজিতে ৮৬, অঙ্কে ১০০, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৭, জীবন বিজ্ঞানে ৯৪, এবং ইতিহাস ও ভূগোলে যথাক্রমে ৯০ ও ৯৩ পেয়েছে সে। যদিও ইংরেজিতে পাওয়া নম্বর আশানুরূপ না হওয়ায় মন খারাপ তার। ভবিষ্যতে ইংরেজির শিক্ষক হতে চায় সঞ্জয়। তার কথায়, “বাংলার পড়ুয়ারা ইংরেজিতে ভয় পায়। সেই ভয় কাটাতেই এই বিষয়ের শিক্ষক হতে চাই।”

মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ে সঞ্জয়ের এক জন গৃহশিক্ষক ছিল। স্থানীয় পোস্ট মাস্টার পিন্টু মণ্ডল বিনা পারিশ্রমিকেই তাকে অঙ্কে সাহায্য করতেন। সঞ্জয়ের মা মনিকাদেবী বলেন, “আমরা তো সেরকম লেখাপড়া জানি না। তাই ছেলেকে ওর স্কুলের শিক্ষকেরাই হাতে ধরে সব শিখিয়েছেন। বিশেষ করে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।” পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই কৃতী ছাত্র হিসাবে স্কুলে সুনাম অর্জন করেছিল সঞ্জয়। সেই থেকেই স্কুলের শিক্ষকদের সুনজরে ছিল সে। তাঁরাই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে সঞ্জয়কে সাহায্য করতেন। মাধ্যমিকে নব্বই শতাংশ নম্বর পেয়েও সে তার পুরনো স্কুল বিল্লেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে চায়। মনিকাদেবী বলেন, “গৃহশিক্ষককে বেতন দিয়ে পড়ানোর মত অবস্থা আমাদের নেই।” সঞ্জয় জানায়, উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনার জন্য তার স্কুলের প্রধান শিক্ষকই কাটোয়া শহরে এক জন গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ওই শিক্ষকের কাছে পড়ার জন্য বিল্লেশ্বর গ্রাম থেকে প্রতি দিন এক ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে সঞ্জয়কে কাটোয়া যেতে হয়। বিল্লেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, “সঞ্জয় ভাল ফল করেছে। টাকা-পয়সার অভাবে ওর পড়াশোনায় কোনও সমস্যা হবে না।”।

Previous Story Bardhaman Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad|Medinipur
National | Bidesh| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.