|
|
|
|
সন্ত্রাসের তালিকা করে প্রশাসনের দ্বারস্থ ফ্রন্ট |
নিজস্ব সংবাদদাতা ²বর্ধমান |
গ্রামীণ এলাকা থেকে শিল্পাঞ্চল পর্যন্ত অন্তত ১৪টি বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলে বর্ধমান জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানাল বামফ্রন্ট। তাদের অভিযোগ, রাজ্যে নবনির্বাচিত সরকার যত বেশি শান্তির কথা বলছে, ততই অশান্তির আগুন জ্বলছে জেলায়।
মঙ্গলবার জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার সঙ্গে দেখা করেন জেলা বামফ্রন্টের নেতারা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার, সিপিআইয়ের নন্দকিশোর শাহ, ফরওয়ার্ড ব্লকের শ্যামলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজল পাল, আরএসপি-র সৈয়দ আসরাফ আলি ও স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের মোরাদ হোসেন মোল্লা। পরে অমলবাবু বলেন, “কোথায় কোথায় আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তার বিস্তারিত তালিকা দিয়ে প্রতিকার দাবি করেছি। প্রশাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থার জন্য কিছু দিন অপেক্ষা করব। তার পরেও কিছু না হলে রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করব।”
তালিকায় যে সব এলাকার কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে আছে জামালপুর, মঙ্গলকোট, খণ্ডঘোষ, ভাতার, রায়না, দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম, আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম, বর্ধমান উত্তর ও দক্ষিণ, রানিগঞ্জ, কাটোয়া ও গলসি বিধানসভা কেন্দ্র। এর মধ্যে মঙ্গলকোট, খণ্ডঘোষ, রায়না, আউশগ্রাম, বর্ধমান উত্তর ও গলসি এখনও বামেদের হাতেই রয়েছে। |
জেলাশাসকের কার্যালয়ে
বাম নেতৃত্ব। নিজস্ব চিত্র |
বামফ্রন্টের অভিযোগ, নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরে মঙ্গলকোটে ৫২ জন, ভাতারে ৬ জন, রায়নায় ৭৬ জন এবং বর্ধমান উত্তরে ২০ জন বাম কর্মী ঘরছাড়া হয়েছেন। রায়নায় তৃণমূলের হামলায় আহত হয়েছেন ৫২ জন। জেলার প্রায় সমস্ত ট্রেড ইউনিয়ন অফিস, কলেজে-কলেজে বাম পরিচালিত ছাত্র সংসদ জোর করে দখল করা হচ্ছে। হামলা হচ্ছে বামফ্রন্ট কর্মীদের বাড়িতে। ‘জরিমানা’ না দিলে নির্যাতন করা হচ্ছে। মহিলারাও ছাড় পাচ্ছেন না। তৃণমূল নেতা তথা রাজের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য সব উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “সিপিএম বা বামফ্রন্টের তরফে যে ঘটনাগুলির কথা বলা হয়েছে, তাতে আমাদের দলের কোনও কর্মী জড়িত নয়। আসলে ওঁরা আগে গ্রামে-গ্রামে এত অত্যাচার করেছেন যে পরিবর্তনের পরে গ্রামের মানুষই ওঁদের গ্রামছাড়া করে দিয়েছেন। কর্মীদের আমরা সংযত থাকতে বলেছি। তাঁরা সংযতই আছেন।” |
|
বামফ্রন্টের নির্দিষ্ট অভিযোগের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য সিপিএমের জামালপুর ১ লোকাল কমিটি অফিস ভাঙচুর। যার জেরে মঙ্গলবার ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালন করতে চেয়েছিল বামফ্রন্ট, কিন্তু পুলিশ অনুমতি দেয়নি। রয়েছে খণ্ডঘোষের আমড়াল, মেটেডাঙা ও লোধনা গ্রামে হামলা ও হুমকির কথাও। বেরুগ্রামের পুনশুর গ্রামে ‘সুইসাইড নোট’-এ তৃণমূলের দু’জনের নাম লিখে সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্যের আত্মঘাতী হওয়ার উল্লেখও রয়েছে। ভাতারে এ বার অল্পের জন্য হেরে গিয়েছে মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক। সেখানে সিটু অফিস দখল এবং সিপিএম কার্যালয় খুলতে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি চাপ দিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য আবু তালেব মণ্ডলকে পদত্যাগে বাধ্য করানোরও অভিযোগ রয়েছে। রায়নায় সিপিএমের সাতটি কার্যালয়ে তালা দেওয়া হয়েছে, দখল হয়েছে পাঁচটি সিটু অফিস, বেশ কিছু গ্রামে নোটিস দিয়ে আদায় করা হচ্ছে জরিমানা। অভিযোগের তালিকার সঙ্গে ওই ‘নোটিস’-এর প্রতিলিপিও জমা দিয়েছেন বামফ্রন্ট নেতৃত্ব।
প্রশ্ন তোলা হয়েছে দুর্গাপুর ও নিউ টাউনশিপ থানায় বামকর্মীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে সিপিএম কর্মী রামপ্রবেশ রায় ও তাঁর স্ত্রীর খুনিদের ধরার চেষ্টা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। রানিগঞ্জে শ্রমিক সংগঠনের অফিসে হামলা সত্ত্বেও প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তোলা হয়েছে সে প্রশ্নও। তালিকায় রয়েছে আউশগ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আট বাম সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুরের কথা। রয়েছে কেতুগ্রামে ২০টি বাড়িতে লুঠপাট, চাষিদের ধান কাটতে বাধা দেওয়া এবং অস্ত্র খোঁজার নামে বাড়িতে হামলার অভিযোগ। রয়েছে বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে প্রাক্তন বিধায়ক শ্যাম বসুর উপরে হামলা ছাড়াও বর্ধমান শহর জুড়ে ভীতি প্রদর্শন, বাজেপ্রতাপপুরে পার্টি অফিস ভাঙচুর, লক্ষ্মীপুর মাঠ ও পাঞ্জাবিপাড়ায় বাড়ি ভাঙচুরের নালিশ। বর্ধমান উত্তরে দুই লোকাল কমিটি সম্পাদকের বাড়িতে ভাঙচুরের প্রসঙ্গও বাদ যায়নি। কাটোয়ায় ‘জরিমানা’ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। গলসিতে তৃণমূলের ‘বিজয় মিছিল’ থেকে সিপিএম কর্মীদের বাড়িতে হামলা এবং বিধায়ককে ঘেরাও করে রাখার অভিযোগও বাদ যায়নি।
জেলাশাসক অবশ্য বলেন, “জেলায় এখনও বড় গোলমাল ঘটেনি। বামফ্রন্ট নেতারা এ দিন যেগুলির কথা জানান, তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। ওদের বিরুদ্ধেও কয়েকটি জায়গায় গোলমাল বাধানোর অভিযোগ ছিল। সেগুলির ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গ্রামছাড়া মানুষের নাম-ঠিকানা হাতে পেলে তাঁদের ঘরে ফেরানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “বামফ্রন্ট নেতারা এখনও ঘরছাড়াদের কোনও তালিকা আমার কাছে পাঠাননি। তালিকা হাতে পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।” |
|
|
|
|
|