|
|
|
|
পদত্যাগপত্র দিলেন সিপিআই কাউন্সিলর |
নিজস্ব সংবাদদাতা²বর্ধমান |
মহকুমাশাসকের কাছে পদত্যাগপত্র দিলেন বর্ধমান শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই কাউন্সিলর স্বপন ভট্টাচার্য। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পুরপ্রধানকে তা দেওয়া হয়নি।
গত বৃহস্পতিবারই অবশ্য পুরপ্রধান, সিপিএমের আইনুল হকের সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন স্বপনবাবু। পরে ধোকরা শহিদের বাড়িতে বসে তিনি বলেন, “বিধানসভা ভোটে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, মানুষ আর আমাদের সঙ্গে নেই। তাই আমি পুরপ্রধানের সঙ্গে কাছে পদত্যাগের কথা বলেছি। দলকেও জানিয়েছি, নীতিগত কারণেই আমার আর কাউন্সিলর থাকা শোভা পায় না।”
মঙ্গলবার বিকেলে বর্ধমান উত্তর মহকুমাশাসক মৃণালকান্তি রানোর সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র জমা দেন স্বপনবাবু। তাতে অবশ্য কোনও ‘নীতিগত’ বিষয় উল্লেখ করা হয়নি, অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে শারীরিক অসুস্থতার কারণে। মহকুমাশাসক বলেন, “কাউন্সিলরের পদত্যাগপত্র পেয়েছি। ওঁকে ডেকে শুনানি করা হবে।” সন্ধ্যায় পুরপ্রধান অবশ্য বলেন, “নিয়ম অনুসারে, পদত্যাগপত্র দিতে হয় পুরপ্রধানের কাছে। তা এখনও দেওয়া হয়নি। তবে আমাদের এক কাউন্সিলর কেন পদত্যাগ করতে চাইছেন, তার কারণ আমরা খতিয়ে দেখব।” |
স্বপন ভট্টাচার্য।
নিজস্ব চিত্র। |
বিধানসভা নির্বাচনে বর্ধমান শহরের ৩৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে সব ওয়ার্ডেই তৃণমূলের চেয়ে কম ভোট পায় সিপিএম। এর পরেই পুরসভায় বামেদের থাকার নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস-তৃণমূল শিবির। তাদের দাবি, কিছু বাম কাউন্সিলর ইতিমধ্যেই তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে ঘোরাফেরা শুরু করেছেন। যদিও পুরপ্রধান দাবি করেন, “আমার এ রকম কোনও ঘটনার কথা জানা নেই। এটা ঠিক, স্বপনবাবু আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। আমি ওঁকে বলেছি, পরে কথা হবে।” স্বপনবাবু অবশ্য বলেন, “পুরপ্রধান আমায় বলেছিলেন, ‘ধীরে চলুন।’ তাড়াহুড়ো করে পদত্যাগ করে করতে না করেছিলেন। কিন্তু আমি আর চালিয়ে যেতে চাইছি না।” |
|
এই নিয়ে পরপর দু’বার কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রাক্তন শিক্ষক স্বপনবাবু। তাঁর কথায়, “সিপিএমের উপরে ভরসা করেই আমি কাজ করছিলাম। কিন্তু ভোটের ফল প্রকাশের পরেই সিপিএমের অনেক নেতা-কর্মী ঘরছাড়া। তাই আমার কাজেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। ওয়ার্ডে রাস্তাঘাট বা নর্দমা পরিষ্কারের জন্য যে কর্মী নিয়োগের কথা, তার অর্ধেকও নেই। আঁস্তাকুড় উপচে পড়ছে। পানীয় জলের অভাব। আমায় বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে।” স্বপনবাবু জানান, একে তাঁর হৃদযন্ত্রের অসুখ, ডান পা-ও ভেঙেছে। এই অবস্থায় তাঁর পক্ষে শারীরিক বা মানসিক চাপ নেওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর মন্তব্য, “নতুনদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়াও তো দরকার।”
সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক রামচন্দ্র সিংহের দাবি, “কয়েক দিন ধরে কিছু লোক ওয়ার্ডের নানা সমস্যার কথা বলে ওঁকে পদত্যাগের জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু আমরা ওঁকে পদত্যাগ করতে বারণ করেছি। বলেছি, পরিষেবার অভাব নিয়ে পুরপ্রধানের সঙ্গে কথা বলতে। নিজের ক্ষমতার মধ্যে যতটা পারা যায়, সমাধান করতে। ” কারা পদত্যাগের জন্য চাপ দিচ্ছে? জেলা সম্পাদকের মন্তব্য, ‘‘কারা, তা তো বোঝাই যায়। আমি স্বপনবাবুকে বলেছি, ওয়ার্ডে তৃণমূলের লোকেদের সঙ্গেও কথা বলতে।” তৃণমূলের লোকেরা স্বপনবাবুর বাড়িতে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন বলে দল সূত্রের খবর। তবে স্বপনবাবুর বক্তব্য, “কেউ আমাকে অসম্মান করেননি। বিক্ষোভও দেখাননি। আমার পদত্যাগের ইচ্ছা সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্ত।” পুরপ্রধানের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র দেন কি না, তাঁর দল ও বামফ্রন্ট কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার উপরে অবশ্য অনেক কিছুই নির্ভর করছে। |
|
|
|
|
|