দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ অগস্ট ১৯৬২ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৬২ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ৪ঠা ভাদ্র, ১৩৬৯ (৩০শে শ্রাবণ, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, AUGUST 21, 1962
নির্বাচনমূলক আটক আইন অনুসারে আপনাকে...
এইবার ষাঁড়দের কলিকাতা ত্যাগের পালা। আজই সকালে (বৃহস্পতিবার, ৬ই ভাদ্র, ১৩৬৯ ) ৩১টিকে ট্রেণে করিয়া পানাগড়ে পাঠান হইতেছে। এগুলিকে কয়েকদিন আগে শহরের রাস্তা হইতে ধরা হয়। ষাঁড়গুলি ধরিয়া আপাতত বেলগাছিয়ায় রাখা হইতেছে।
কলিকাতা, বৃহস্পতিবার, ৬ই ভাদ্র, ১৩৬৯ (১লা ভাদ্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) THURSDAY, AUGUST 23, 1962
• কলিকাতার সোনার বাজারে মন্দাভাব
শ্রীমেরারজী দেশাইর প্রস্তাবে বুধবার কলিকাতার সোনার বাজারে মন্দা দেখা গিয়াছে। মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার বড়বাজারে সোনার দর ভরি প্রতি ৭০ নয়া পয়সা কম ছিল। (মঙ্গলবার ১২৭ টাকা ৫৫ নয়া পয়সা, বুধবার ১২৬ টাকা ৯৫ নয়া পয়সা।) বুধবার বড়বাজারের সোনাপট্টির এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জানান, জনসাধারণের নিকট হইতে সোনা কাড়িয়া লইবার পরিবর্তে সরকার কাগজের বন্ড গছাইয়া দিবেন, এই আশঙ্কায়ই সোনার দাম কমিয়াছে। তিনি বসেন, সোনায় যত সহজে লেনদেন চলে কাগজে তাহা চলিবে না। আর তাহা ছাড়া লোকে ইচ্ছামত কিনিতে না পারিলে সোনার চাহিদাও কমিয়া যাইবে। চাহিদা কমিলে দাম কমিবেই।

কলিকাতা, শুক্রবার, ৭ই ভাদ্র, ১৩৬৯ (২রা ভাদ্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, AUGUST 24, 1962
• কলিকাতায় জন্মাষ্টমী উত্সব: বৃহস্পতিবার কলিকাতায় মহাসমারোহে জন্মাষ্টমী উত্সব উদযাপিত হয়। প্রভাতে অনেক স্থানে ভক্ত নর-নারী শ্রীকৃষ্ণের মাহাত্ম্য কীর্তন করিয়া প্রভাতফেরী বাহির করেন। পূণ্যার্থীরা দলে দলে সারাদিন রাত্রি মঠে মন্দিরে জড় হয়। সেখানে শ্রীকৃষ্ণের পূজারতি চলে। মহানগরীর বিভিন্ন পল্লীতে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম ও জীবনীর প্রদর্শনী আয়েজিত হয়। চলমান মডেলের সাহায্যে অনেক প্রদর্শনীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবন কাহিনী সজীব হইয়া ওঠে। সন্ধ্যা সমাগমের সঙ্গে সঙ্গে আলোক মালায় সজ্জিত উত্সব প্রাঙ্গণে জনসাধারণ বিশেষ করিয়া নারী ও শিশুর ভিড় জমিতে থাকে। কোন কোন এলাকায় মেলাও বসে। বিভিন্ন স্থানে ধর্মসভা অনুষ্ঠিত হয়।

• লীগ ফুটবলে রেকর্ড, মোহনবাগান ১০ বার বিজয়ী: প্রথম ডিভিশন ফুটবল লীগের শীর্ষস্থানে সমান পয়েন্ট সংগ্রহকারী মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের চ্যাম্পিয়নশিপ নির্ণায়ক খেলায় মোহনবাগান ২-০ গোলে জয়লাভ করিয়া মোট দশবার লীগ জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করিয়াছে। এখানে উল্লেখ করা যাইতে পারে কলিকাতার ফুটবল লীগের ইতিহাসে আর কোনও দলই দশবার লীগ চ্যাম্পিয়নশিপ লাভ করিতে পারে নাই।
বৃহস্পতিবার দুই দলের সম্মিলিত মাঠে আয়োজিত এই বিশেষ খেলাটি দেখিবার জন্য দর্শকদের মধ্যে আশানুরূপ উত্সাহ উদ্দীপনার অভাব দেখা গেলেও মাঠের কোন দর্শক আসনই খালি থাকে না।
প্রতিপক্ষের উপর প্রাধান্য বিস্তার করিয়া খেলিয়া মোহনবাগান প্রতি অর্ধে একটি করিয়া গোল করে। তাহাদের জয়লাভ ক্রীড়াধারার সঙ্গতিসূচক ফলাফল। গতবারের লীগ চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গল ক্লাব পিচ্ছিল ও জলসিক্ত মাঠে প্রবল প্রতিপক্ষের সহিত খ্যাতি অনুযায়ী খেলিতে পারে নাই।
খেলাটি হইতে সংগৃহীত সমুদয় অর্থ পশ্চিমবঙ্গের পরলোকগত পুলিশমন্ত্রী কালীপদ মুখার্জীর নামানুসারে যক্ষ্মা-আরোগ্যোত্তর উপনিবেশ নির্মাণের জন্য ব্যয় করা হইতে।

কলিকাতা, শনিবার, ৮ই ভাদ্র, ১৩৬৯ (৩রা ভাদ্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, AUGUST 25, 1962
• বৃহত্তর কলিকাতায় পানীয় জল সরবরাহ: এই মাসেই সি এম পি ও মেট্রোপলিটান কলিকাতায় পানীয় জল সরবরাহের জন্য প্রায় সাত কোটি টাকার দুইটি পরিকল্পনা রাজ্য সরকারের নিকট পেশ করিবেন। টালিগঞ্জে ভূগর্ভস্থ পযঃপ্রণালী নির্মাণ পরিকল্পনাও ইহাতে আছে। শুক্রবার হইতে সি এম পি ও কলিকাতায় জীবাণুশূণ্য গঙ্গাজল সরবরাহের এক নতুন পরিকল্পনা রচনায় হাত দিয়াছেন। ইহাতে যে গঙ্গাজল সরবরাহ করা হইবে তাহা পান করার উপযুক্ত ঙইবে না। কিন্তু ক্লোরিনের সাহায্যে ঐ জলকে জীবাণুশূণ্য করিয়া সরবরাহ করা হইবে। তাহা হইলে ঐ গঙ্গাজল ব্যবহারে কলেরা ও অন্যান্ রোগ হইবে না। কলিকাতা মেট্রোপলিটান পরিকল্পনা সংস্থার কর্থৃপক্ষ মনে করেন এই ব্যবস্থায় কলিকাতার জলকষ্ট অনেকটা কমিবে।

• কলিকাতা পুলিশের ষান্মাসিক খতিয়ান: কলিকাতার পুলিস কমিশনার শ্রীশচীন্দ্রমোহন ঘোষ শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে শহরে গত জানুযারী হইতে জুন পর্যন্ত ছ’মাসের অপরাধের খতিয়ান দেন, তাহাতে দেখা যায় যে, এই ছয় মাসে কলিকাতায় প্রায় ২৯ লক্ষ টাকার সম্পত্তি চুরি হইয়াছে। তাহার মধ্যে ৭০ ভাগ সম্পচ্চিই উদ্ধার করা যায় নাই। অপহৃত ২৮,৬৭,১৪৮.৬৭ টাকার সম্পত্তির মধ্যে ৮,৪০,৫৩৯.৩৫ টাকার সম্পত্তি উদ্ধার হইয়াছে। অপহৃত সম্পত্তির পরিমাণ গত বত্সরে কিছু কম ছিল। আরও দেখা যায় যে, গত ছয় মাসে শহরে ২৯৫০টি অপরাধের ঘটনা ঘটিয়াছে। তাহার মধ্যে ২২২০টি ঘটনার সহিত জড়িত অপরাধীদের পুলিশ এখনও সন্ধান পায় নাই। শহরে মোট গাড়ি চুরির সংখ্যা আগের তুলনায় ১০০ ভাগ বাড়িয়াছে। সাইকেল চুরির সংখ্যা বাড়িয়া চলিয়াছে। বৃদ্ধির হার ৪.৩ ভাগ। ইহা ছাড়া অন্যান্য অপরাধের সংখ্যা হ্রাস পাইয়াছি বলিয়া পুলিস কমিশনার জানান।

• শিয়ালদহ বিভাগের পুনর্বিন্যাস: পূর্ব রেলওয়ের শিয়ালদহ বিভাগের পুরনর্বিন্যাসের কাজ আগামী সেপ্টেম্বর মাসের আগে শেষ হওয়ার সম্বাবনা নাই বলিয়া জানা যায়। এই কাজ চলতি সপ্তাহে শেষ হইবার কথা ছিল। ১৯৬০ সালের অক্টোবর মাস হইতে এই পুনর্বিন্যাসের কাজ সুরু হয়। এজন্য ৫৫ লক্ষ টাকা খরচ হইবে। এই কাজের মধ্যে ক্যানেল রেলওয়ে ব্রীজ চওড়া করিয়া পাঁচটি লাইন স্থাপন, বর্তমান কেবিনের স্থালে দুইটি নতুন কেবিন নির্মাণ, ইয়ার্ডের সম্প্রসারণ, নর্থ স্টেশনে অতিরিক্ত প্ল্যাটপর্ম নির্মাণ, প্ল্যাটফর্ম উঁচু করা প্রভৃতি কাজ অন্তর্ভুক্ত। ক্যানেল ব্রীজে ইতিপূর্বে তিনটি লাইন ছিল। মাত্র কিছুদিন আগে চতুর্থ লাইন বসানোর কাজ শে, হইয়াছে। পঞ্চম লাইন বসনোর কাজ সুরু হইয়াছে এবং ইহা শীঘ্রই শেষ হইবা বলিয়া কর্তৃপক্ষ আশা করেন। বর্তমান তিনটি লাইনে গাড়ী চলাচলে অসুবিধা দেখা গিয়াছিল। কারণ এত গাড়ী ঐ লাইন দিয়া চলে যে, ঐ তিনটি লাইনের মারফত্ সময় বজায় রাখা দুঃসাধ্য হইয়া পড়ে। শিয়ালদহ বিভাগে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু হইলে গাড়ীর সংখ্যা আরও বাড়িবে। এজন্য আরও দুইটি অতিরিক্ত লাইন বসানো হইতেছে।

কলিকাতা, সোমবার, ১০ই ভাদ্র, ১৩৬৯ (৫ই ভাদ্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, AUGUST 27, 1962
• পাঁচ বছরে পনের কোটি টাকা ব্যয়ে রাজ্য সরকারের সম্মতি: রাজ্য সরকার কলিকাতার উন্নয়নের জন্য ৫ বছরে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করিতে প্রস্তুত আছেন। মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন রবিবার কংগ্রেস ভবনে এক বৈঠকে এই কথা ঘোষণা করেণ। তিনি বলেন, কলিকাতা কর্পোরেশন নগরীর জলসরবরাহ ও পযঃপ্রণালী ব্যবস্থার উন্নয়নেক জন্য রাজ্য সরকারের নিকট বিস্তৃত পরিকল্পনা পেশ করিলে উহা রূপায়ণের জন্য টাকার অভাব হইবে না।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রীমোরারজী দেশাই ঐ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। মহানগরীর বিভিন্ন সমস্যা সম্বন্ধে আলোচনার জন্য এই বৈঠক আহূত হয়। শ্রীদেশাই ঐদিন পূর্বাহ্নে বিমানে কলিকাতা পৌঁছেন। মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসেন তাঁহার অপরাপর সহকর্মীগণ সহ বিমানঘাটিতে তাঁহাকে অভ্যর্থনা জানান। বিমানঘাটি হইতে সরাসরি তিনি পার্ক সার্কাসে জাতীয় কংগ্রেস পার্কে বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী প্রদর্শনী পরিদর্শন করিতে যান।

শ্রীমোরারজী দেশাই রবিবার কলিকাতায়
কস্ট একাউন্টেন্সি ট্রেনিং স্কুলের উদ্বোধন
করিতেছেন।— আনন্দবাজার চিত্র।


কলিকাতা, শুক্তবার, ১৪ই ভাদ্র, ১৩৬৯ (৯ই ভাদ্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, AUGUST 31, 1962
• কলিকাতা মেট্রোপলিটন উন্নয়ন উপদেষ্টা পরিষদ: রাজ্য সরকার কলিকাতা মেট্রোপলিটন উপদেষ্টা পরিষদের নামে ৩১ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি সংস্থা গঠন করিয়াছেন। এই সংস্থার কাজ হইবে কলিকাতা মহানগরী সহ গঙ্গার কূলবর্তী চারিশত বর্গমাইল স্তানের উন্নয়ন পরিকল্পনা রচনার ভারপ্রাপ্ত সি এম পি ও এবং অন্যান্য কয়েকটি উন্নয়নমূলক সংস্থার কার্যের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা। মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন উক্ত পরিষদের চেয়ারম্যান এবং আহ্বায়ক সি এম পি ওর সেক্রেটারী লেঃ কর্ণেল ডি এন চক্রবর্তী। এই পর্ষদ মেট্রোপলিটন ডিস্ট্রিক্ট এর এলাকাধীন উন্নয়নমূলক সংস্তার বস্তি অপসারণ, বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন, নিম্ন ও মাঝারি আয়ের লোকের গৃহ নির্মাণ, জল সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন এবং আবর্জনা অপসারণ, স্বয়ংসম্পূর্ণ উপনগরী নির্মাণ, কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র ও অন্যান্য শিল্পের উন্নয়ন প্রভৃতি সম্পর্কে রচিত পরিকল্পনার রূপায়ণে পরামর্শ দান করিবে।

কলিকাতা, শনিবার, ১৫ই ভাদ্র, ১৩৬৯ (১০ই ভাদ্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, SEPTEMBER 1, 1962
• পৌরশাসনে সরকারী কর্মচারী নিয়োগকল্পে অর্ডিন্যান্স: কলিকাতা পৌরসভার কমিশনারকে সাহায্যের জন্য এক বা একাধিক স্পেশাল ডেপুটি কমিশনার নিয়োগ করিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার শুক্রবার এক অর্ডিন্যান্স জারী করিয়াছেন। অর্ডিন্যান্সটি “কলিকাতা মিউনিসিপ্যাল (সংশোধন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৬২” এই নামে ৩১শে আগস্টের কলিকাতা গেজেটে প্রকাশিত হইয়াছে। এই অর্ডিন্যান্সের বলে কলিকাতা পৌরসভার প্রশাসন ব্যবস্থার উন্নয়ণের জন্য, কলিকাতা পৌরসভা কর্তৃক অনুরুদ্ধ হইলে, কমিশনারকে সাহায্য করিতে রাজ্য সরকার এক বা একাধিক সরকারী কর্মচারীকে নিয়োগ করিতে পারিবেন। কর্পোরেশনের সম্মতিক্রমে উক্ত অফিসার বা অফিসারগন স্পেশাল ডেপুটি কমিশনার রূপে পৌরসভার বিভিন্ন বিভাগের ভার গ্রহন করিবেন। এইসব অফিসারের নিয়োগের কথা এবং কার্যকাল সরকারী গেজেটে প্রকাশ করিতে হইবে বলিয়া উক্ত অর্ডিন্যান্সে নির্দেশ দেওয়া আছে। এতদিন ধরিয়া এই বিষয়ে যে “জল ঘোলা করা” হইতেছিল, এই অর্ডিন্যান্স তাহার পরিসমাপ্তি ঘটাইল। কোন কোন পর্যবেক্ষক জানান, এই অর্ডিন্যান্সের বয়ান দেখিলে মনে হয় গোঁজামিল দিয়া পৌরসভার মুখরক্ষা করিবার চেষ্টা হইয়াছে।

• কলিকাতা ও শহরতলীতে স্টেট বাস চলাচল আংশিক বন্ধ: স্টেট বাসের বদলী ড্রাইভার ও কন্ডাক্টররা কাজে যোগ না দেওয়ায় শুক্রবার কলিকাতা ও শহরতলী এলাকায় স্টেট বাস চলাচল সিকি ভাগ ব্যাহত হয়। ফলে যাত্রী সাধারণ বিশেষতঃ অফিস যাত্রীদের প্রচুর দুর্গতি ভোগ করিতে হয়। বাসের সংখ্যা কম হওয়ায় যাত্রীদের অফিসের সময় বাদুড় ঝোলা হইয়া যাতায়াত করিতে হয়। সাধারণত দৈনিক ৬৮০টি স্টেট বাস চলে। তন্মধ্যে এই দিন ৫০৯টি বাস রাস্তায় বাহির হয়। অর্থাত্ এই কর্মবিরতির দরুন ১৭১টি বাস রাস্তায় বাহির হইতে পারে নাই।

শুক্রবার স্টেট বাসের বদলী ড্রাইভার ও কন্ডাক্টররা আংশিক কর্মবিরতি পালন করেন। বিকালে তাঁহারা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে এক সভায় মিলিত হন। —আনন্দবাজার চিত্র

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ১৮ই ভাদ্র, ১৩৬৯ (১৩ই ভাদ্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, SEPTEMBER 4, 1962
• কলিকাতায় সার্কুলার রেলওয়ে: রেলের সমস্ত শহরতলী শাখার বৈদ্যুতিকরণ পরিকল্পনা রূপায়ণ শেষ হইলে ভরত সরকার কলিকাতায় সার্কুলার রেলওয়ে প্রস্তাব পর্যালোচনা করিয়া দেখিবেন। বর্তমানে কলিকাতায় মেন লাইন ও শহরতলীয় লাইনে বৈদ্যুতিকরণের উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হইতেছে। রেল উপমন্ত্রী শ্রী এস ভি রামস্বামী রাজ্যসভায় এক প্রশ্নোত্তরে যে বিবৃতি পেশ করেন তাহাতে জানা যায় যে এস এন রায় কমিটি সার্কুলার রেলওয়ের প্রস্তাব বিবেচনা করিয়া দেখিয়াছেন। কলিকাতা পোর্ট কমিশনের রেলওয়ের বর্তমান মালগাড়ীর লাইনের উপর দিয়া ট্রেন চালান সম্ভব নয় এবং বাঞ্ছনীয়ও নহে বলিয়া এই কমিটি মত প্রকাশ করিয়াছেন। কলিকাতা টার্মিনাল ফেসিলিটিজ কমিটি প্রথমে এই সার্কুলার রেলওয়ের প্রস্তাবটী উথ্থাপন করে।

• শিশু সমাজ কল্যাণ সমিতির নূতন স্বাস্থ্যকেন্দ্র: মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন রবিবার সকালে কলিকাতায় শিশু সমাজ কল্যাণ সমিতির নূতন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দ্বারোদ্ঘাটন করেন। এই কেন্দ্র ১১।৭।এ রামকৃষ্ণ দাস লেনে স্থাপিত হইয়াছে। সমিতির সম্পাদক ডঃ বি এন রায় জানান যে, এই কেন্দ্র দিবারাত্র এমার্জেন্সির জন্য খোলা থাকিবে, ইহাতে কয়েকটি বেড থাকিবে এবং এখানে ছোটখাট অস্ত্রোপচার করা হইবে। এই কেন্দ্রটি ছাড়া বিডন স্ট্রীট এবং বরাহনগরে সমিতির আরও দুইটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। সমিতি যে পদ্ধতিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের কম খরচে চিকিত্সার ব্যবস্থা করিয়াছেন, তাহা শ্রী সেনের খুব পছন্দ হয়।

সোমবার চতুর্থ আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উত্সবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে
ছোটরা ডঃ গোপাল রেড্ডি ও অন্যান্য অতিথিদের উত্সবের ‘বাজি’
পরাইয়া দিতেছে। কলিকাতার চারুকলা আকাদেমী ভবনে ঐ অনুষ্ঠান হয়।


কলিকাতা, বুধবার, ১৯শে ভাদ্র, ১৩৬৯ (১৪ই ভাদ্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) WEDNESDAY, SEPTEMBER 5, 1962
• শিয়ালদহ অঞ্চলে ছাত্র পুলিশে খণ্ডযুদ্ধ
১৩টি ট্রাম ভস্মীভূত ।। কাঁদানে গ্যাস ও লাঠি ।। ২২০ জন আহত ।। ২০০ জন ধৃত
সূত্রপাত এক সামান্য ঘটনায়, কিন্তু পরিণতি ভয়াবহ—মঙ্গলবার দুপুরের দিকে মহানগরীর শিয়ালদহ অঞ্চল রীতিমত রণক্ষেত্রের রূপ নেয়।
নয়-দশ ঘন্টা জুড়িয়া প্রথমে ছাত্র-পুলিসে, পরে পুলিসে ও সমাজবিরোধী জনতায় ইতস্তত একের পর এক খন্ডযুদ্ধ। এবং সেই সুপরিচিত দৃশ্য;—ট্রামের পর ট্রামপুড়িতেছে, মারমুখি জনতা, লাঠি হতে পুলিসের তাড়া, ইটপাটকেল বিনিময়, কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় ভারী আকাশ বাতাস। জনতা এবার আগাইতেছে, একবার সরিয়া পড়িতেছে। রণস্থল প্রধানত শিয়ালদহ স্টেশন প্রাঙ্গণ ও মির্জাপুর স্ট্রীট হইতে সার্কুলার রোড পর্যন্ত হ্যারিসন রোড।
দিনতামামি হিসাব এইঃ—১৩টি ট্রাম ও একটি পুলিস ভ্যান ভস্মীভূত, ১টি বাস গুমটি দগ্ধ, ২০০ জন গ্রেপ্তার, ২২০ জন অল্পবিস্তর আহত (তার মধ্যে পুলিস ৬০ জন) এবং কয়েকজন হাসপাতালে স্থানান্তরিত। এমন অভিযোগ পাওয়া গিয়াছে যে, হ্যারিসন রোডের দুই একটি দোকানও নাকি লুট হয়।
শিয়ালদহ স্টেশনে বিহ্বল যাত্রীর সংখ্যা কম ছিল না, সাধারণ নগরবাসীরও চরম দুর্ভোগ। অনেকে লালবাজারে আশ্রয় লন, স্কুল কলেজে বহু ছাত্রছাত্রী আটক পড়িয়া যান। ট্রাম বাস প্রথমে অন্য পথে ঘুরাইয়া দেওয়া হয়, পরে বেলা ৪টা নাগাদ ট্রাম রাজপথে আর ছিলই না। দুপুরে অনেক কলেজ ক্লাশ স্থগিত হয় এবং নৈশ ক্লাশ বন্ধও হইয়া যায়।

কলিকাতা, বৃহস্পতিবার, ২০শে ভাদ্র, ১৩৬৯ (১৫ই ভাদ্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) THURSDAY, SEPTEMBER 6, 1962
• নিবর্তন আইনে দুই দিনে তিনশত জন আটক: বুধবার কলিকাতা মোটামুটি শান্ত ছিল। দক্ষিণ কলিকাতার গড়িয়াহাট এলাকায় এবং ভবানীপুরের জগুবাবুর বাজারের নিকট ঢিল ছোড়ার দুই একটি ঘটনা ছাড়া বড় রকমের হাঙ্গামার কোন সংবাদ পাওয়া যায় নাই। মঙ্গল ও বুধবার দুই দিনে পুলিস শহরের বিভিন্ন এলাকা হইতে নিবর্তনমূলক আইনে ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করে।

• ‘বহ্ন্যত্সবের’ ব্যয়: মঙ্গলবারের হাঙ্গামায় ট্রাম কোম্পানীর ক্ষতির পরিমাণ কমসে কম ৮ লক্ষ টাকা। ঐদিন আগুনে পুড়িয়াছে দুই কোচের ১২ খানা এবং এক কোচের ১ খানা ট্রাম। এই তেরখানা গাড়ির ২৫ খানা কোচে দিনে কত যাত্রী চড়িত? ট্রাম কোম্পানী জানান, গড়ে ৩৫ হাজার অর্থাত্ এখন হইতে শহরের ৩৫ হাজার ট্রামযাত্রী হয় বাসে ভিড় বাড়াইবে, নয় অন্য ট্রামগাড়িতেই গাদাগাদি করিয়া ঝুলিবে।

কলিকাতা, শুক্রবার, ২১শে ভাদ্র, ১৩৬৯ (১৬ই ভাদ্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, SEPTEMBER 7, 1962
• বেলগাছিয়ার দুগ্ধ প্রতিষ্ঠানে কার্যারম্ভ: বেলগাছিয়ায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কেন্দ্রীয় দুগ্ধ প্রতিষ্ঠানটিতে বৃহস্পতিবার কাজ সুরু হয়। আজ, শুক্রবার হইতে ঐ কেন্দ্রে বোতল ভর্তি হইয়া প্রায় ৩০০ মণ দুধ কলিকাতা ও শহরতলীতে সরবরাহ করা হইবে। প্রাকাশ, প্রায় এক মাসের মধ্যেই বেলগাছিয়া কেন্দ্র হইতে দৈনিক প্রায় ২০০০ মণ দুধ সরবরাহ হইবে। এই কেন্দ্র হইতে দুগ্ধ সরবরাহের চুড়ান্ত লক্ষ—দৈনিক ৫০০০ মণ। ঐখানে আইসক্রীম ও সুগন্ধ দুধ উত্পাদনেরও পরিকল্পনা আছে।

• প্রয়োজন আছে, টাকাও যথেষ্ট আছে—নাই শুধু আন্তরিকতা: টাকা নাই বলিয়া অনেক কাজ হইয়া উঠে না—কিন্তু টাকা আছে—প্রয়োজন আছে—অথচ আন্তরিকতার অভাবে তাহার সদ্ব্যবহার হয় নাই। বৃহস্পতিবার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সেনেটের এক সভায় অভিযোগ করা হয় যে, দ্বিতীয় পরিকল্পনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের দেওয়া ১কোটি ৪৫লক্ষ টাকা খরচ করিতে পারেন নাই। ইহার ফলে নূতন নূতন গবেষণা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজগুলি বিঘ্নিত হইয়াছে। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয় যে, ১৯৫১ সালের আইন চালু হওয়ার পর হইতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষেত্রবিশেষে সরকার কিংবা ইউ-জি-সি-র আর্থিক সাহায্যের সুযোগ লইতে কিংবা অনুমোদিত পরিকল্পনার টাকা দ্রুত সদ্ব্যবহার করিতে পারে নাই। ফলে বিশেষত ইউ-জি-সি-র সমালোচনার পাত্র হইয়াছে।

• কলিকাতায় দশ-তলা সরকারী দপ্তরখানা: কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তরের জন্য কলিকাতায় একটি দশ-তলা অট্টালিকা নির্মিত হইবে। কলিকাতার নিজাম প্যালেসে ২,২৭,০০০ বর্গ ফুট আয়তনের উপর এই অট্টালিকা স্থাপিত হইবে। কেন্দ্রীয় পূর্ত, গৃহনির্মাণ ও সরবরাহ মন্ত্রালয় উহার জন্য ৮৪ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করিয়াছেন।

কলিকাতা, শনিবার, ২২শে ভাদ্র, ১৩৬৯ (১৭ই ভাদ্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, SEPTEMBER 8, 1962
সি-এম-পি-ও প্রস্তাবের প্রথম পর্ব: কলিকাতা উন্নয়নের নানা সুপারিশ
-ছোট রেলে বদলে বড় রেল
-ক্যানিং অঞ্চলে মাছের চাষ
-তরিতরকারির উত্পাদন বৃদ্ধি
কলিকাতার উন্নয়নের জন্য সি-এম-পি-ও একটি রিপোর্ট তৈরী করিয়াছেন। ইহা তাঁহাদের মাস্টার প্ল্যান রচনার প্রথম পর্ব। কলিকাতার উপকন্ঠে কয়েকটি উপনগরী নির্মাণ, মার্টিনের ছোট রেলের পরিবর্তে বড় লাইন বসানো ক্যানিংএ মাছের চাষের এবং দক্ষিণাঞ্চলে তরিতরকারির উত্পাদন বাড়ানোর বিশেষ ব্যবস্থা ইত্যাদি সুপারিশ সহ রিপোর্টটি ১৫ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজ্য সরকারের অনুমোদনের জন্য পাঠান হইবে। রিপোর্টে দেখান হইয়াছে মহানগরীর চার পাশে প্রায় চার হাজার বর্গমাইল এলাকা প্রত্যক্ষভাবে কলিকাতার উপর নির্ভরশীল। কলিকাতাও খাদ্যের ব্যাপারে ঐ অঞ্চলের মুখ চাহিয়া থাকে। দক্ষিণ দিক হইতেই কলিকাতার প্রায় শতকরা আশি ভাগ তরিতরকারি আসে। মাছ ও ডিমের প্রধান সরবরাহ কেন্দ্র ক্যানিং।

কলিকাতা, রবিবার, ২৩শে ভাদ্র, ১৩৬৯ (১৮ই ভাদ্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) SUNDAY, SEPTEMBER 9, 1962
• কলিকাতায় এত ভিড় কেন, মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্লেষণ: কলিকাতার লোকসংখ্যা যেমন বাড়িয়াছে, সমাজ-বিরোধী লোকের সংখ্যাও বাড়িয়াছে তেমনই। পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা হইতেও সন্দেহজনক চরিত্রের লোক আসিয়া কলিকাতায় ভিড় করিতেছে। ফলে নাগরিক জীবনের সমস্যা জটিলতর হইয়া উঠিয়াছে। কলিকাতার অপরাধের সমস্যা সম্পর্কে আলোচনাকালে শনিবার মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্ল চন্দ্র সেন সাংবাদিকদের নিকট ঐরূপ মতামত প্রকাশ করেন। শ্রী সেন আরও বলেন যে, কলিকাতায় নানা দেশের নানা জাতির লোক বসবাস করে। এখানে গলিঘুজি খুব বেশী। বস্তীও রহিয়াছে। তাহা ছাড়া টাকাকড়ি, ধনদৌলতেরও ছড়াছড়ি এই কলিকাতায়। প্রধানত, সেইজন্যই সমাজ-বিরোধী এবং গুন্ডাশ্রেণীর লোকেরা কলিকাতায় আসিয়া ভিড় জমাইয়াছে। প্রতিকারের উপায়ের কথাও চিন্তা করা হইতেছে বলিয়া শ্রী সেন জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কলিকাতার রাস্তাঘাট চওড়া করা দরকার। কলিকাতার ভিড়ও কমাইতে হইবে। কলিকাতার সর্বাঙ্গীন উন্নয়ন সাধনের উপর এই সমস্যার সমাধান অনেকখানি নির্ভর করিতেছে।


মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন একটি দীপ জ্বালাইয়া শনিবার কলিকাতা
তথ্য কেন্দ্রে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জীবন সম্পর্কে একটি আলোকচিত্র
প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। ফটো: আনন্দবাজার


সোমবার, ৩১ ভাদ্র, ১৩৬৯ (মফস্বল—মঙ্গলবার, ১ আশ্বিন)
• ভো-কাট্টা: কলকাতার আকাশে আজ অনিবার্য একটি নৈমিত্তিক উপাদান গরহাজির। এ শহরের মাথার ওপরে আজ ধোঁয়া নেই; নানা রন্ধ্রে উদ্গত সেই কালো বিষ বাষ্প, ষার স্পর্শে কলকাতার আকাশে প্রাত্যহিক কালিমা।
নগরের আকাশ আজ সে কলঙ্ক মুক্ত, কারণ ভাদ্রের আজ ৩১ তারিখ এবং শহর আজ বিশ্বকর্মার করতলগত। নিজ নিজ যন্ত্র হাতে দেড় লক্ষাধিক কর্মী তাঁর পদপ্রান্তে সমবেত। ফলে শহরের সাড়ে তেরশ’ (হিসেবটা চার বছর আগের) কলের চাকা বন্ধ, চিমনী নিরব।
ধোঁয়া নেই। আকাশ তবুও শূণ্য নয়। বদলী হিসেবে সেখানে ছত্রভঙ্গ পঙ্গপালের ঝাঁকের মত ফরফর করে উড়ছে ঘুড়ি,— নগরের আনন্দ।
—ভো-ম্মা-রা!
—ভো-কাট্টা!
ঘুড়ি আর ঘুড়ি। কলকাতার আজ আর সব কাজ মূলতবী, সুতো ধরে শহর আজ গগনকারী। অন্তত দুপুর পর্যন্ত। কেননা, বাল্য থেকে কলকাতার সেটাই অভ্যেস,— ঐহিত্য।
কল নয়, কলকাতা ষখন কিল্লা-শহর বিশ্বকর্মা তখনও ছিলেন এ শহরে, এবং তাঁর পুজোর দিনে বুলবুলির লড়াই নয়, বেড়ালের বিয়ে নয়, ঘুড়িই ছিল— বাবুয়ানা, নব্য নাগরিকের গর্ব। সে গর্ব ক্রমে ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছিল— ওয়াজেদ আলির সঙ্গে লক্ষ্ণৌর খানদানি ঘুড়ি কারিগরদের হাতে পেয়ে। তাদের উত্তরপুরুষেরা এখনও কলকাতার এখানে-ওখানে ঘুড়ির কারখানা চালায় এবং কলকাতা এখনও তুল্য উত্সাহে এখানে ঘুড়ি উড়ায়।
সম্ভবত, ইদানীং আরও ব্যাপকভাবে। কেননা, কল বেড়েছে। হিসেবের সেই সাড়ে তিন হাজারই শেষ কথা নয়। তারপরেও বিস্তর আছে। ভাঙ্গা মোটর সারাইয়ের কারখানা, ছাপাখানা, এমন কি টাইপরাইটিং স্কুল পর্যন্ত। সেখানে সরস্বতীর মতই সমান মর্যাদা— বিশ্বকর্মার।
সুতরাং, অনিবার্য ভাবেই চালে চলনে কলকাতা আজ একটু অন্য রকমের।
কলকাতার আকাশে যখন আজ ঘুড়ি, ছাদে নানা বয়সের আকাশচারী— মাটিতে তখন পশ্চিমী ডাইনীদের বাহনের মত
দীর্ঘ ঝাঁটা হাতে রাশি রাশি ঘুড়ি-শিকারী। কিন্তু ছাদের সীমানা ভুলে মাটিতে লুটাবে, দু’চার জন পতঙ্গের রঙ্গে চলমান বাসট্রামের চাকার সামনেও আত্মবলি দান করবে। কিন্তু তবুও দুপুর অবধি আকাশের মায়াটা থাকবেই।
তারপর দুপুরে পুজো, রাত্রে ভোজ। বিশ্বকর্মার পার্বণে দুটোই সমান জরুরী। কারণ, বিশ্বকর্মা কলের ঠাকুর। দিন নেই, রাত্রি নেই,— কল চলে বারো মাস; কিন্তু পুজো তাঁর একদিনই।
সুতরাং, আজ যদি মাইক একটু জোরেই বাজে, কিংবা হঠাত্ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে কোন কোন বস্তুর বাজার দর তবে কলকাতা, খুঁত খুঁত করবে না। মনে রাখবেন, কলকাতা আর কিল্লা-শহর নয়, কলের শহর, এবং ৩১শে ভাদ্র বছরে এই মাত্র একদিন। এই আজকের দিনটি।

মঙ্গলবার, ১ আশ্বিন, ১৩৬৯ (মফস্বল— বুধবার, ২ আশ্বিন)
• কলিকাতার পরিবহণ সঙ্কটের স্বরূপ: বৃহত্তর কলিকাতায় যানবাহনের জ্যামজমাট এবং রাজপথে দুর্ঘটনা এড়াইবার জন্য এখনই অন্তত ত্রিশটি রাস্তার মোড় চওড়া করা দরকার। নিরাপত্তামূলক নূতন সিগন্যালও প্রয়োজন। বৃহত্তর কলিকাতার যানবাহন এবং পরিবহন সমস্যা সম্পর্কে পি এস পি-ওর রিপোর্টে এই সব সুপারিশ করা হইয়াছে। রিপোর্টে জানা যায়। গত পাঁচ বত্সরে বৃহত্তর কলিকাতায় ৭৬২১৭টি পথ দুর্ঘটনায় ২২৭৮ জন মারা গিয়াছেন। আহতের সংখ্যা ৩০,৫৬৬। যে সব এলাকায় ফুটপাত অবরোধ করিয়া রাখা হইয়াছে দুর্ঘটনার সংখ্যা সেখানেই বেশী। রিপোর্টে প্রকাশ পাইয়াছে, কর্মস্থলে হাজির হইতে মধ্যবিত্ত কর্মীদেরই সব চেয়ে বেশী দূরের পথ যাইতে হয়। বৃহত্তর কলিকাতার শ্রমিকদের শতকরা ৬৯.৭ জন কাজের জায়গায় যাইবার জন্য কিছুই খরচ করে না।

বুধবার, ২ আশ্বিন, ১৩৬৯ (মফস্বল—বৃহস্পতিবার, ৩ আশ্বিন)
• পূজার আগে সমাজবিরোধীদের ধরিবার উদ্যোগ: পূজার আগে সমাজবিরোধী ব্যক্তিদের ধরিবার জন্য কলিকাতা পুলিশ একটি ‘স্পেশাল স্কোয়াড’ গঠন করিয়াছে।
গত ২রা সেপ্টেম্বর হইতে প্রায় এক হাজার ব্যক্তিকে শহর হইতে সমাজবিরোধী অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হইয়াছে। গত বার ৭০০ জনকে ও সময় ধরা হইয়াছিল। এবারের সংখ্যা কিছু বেশী হইতে পারে বলিয়া আশা করা যায়। পূজার বাজারে জনবহুল পথে বিশেষ করিয়া দোকানে দোকানে সাদা পোষাক-পরা পুলিশ এখন সর্বদাই নজর রাখিয়াছে।

বৃহস্পতিবার, ২ আশ্বিন, ১৩৬৯ (২৯ ভাদ্র, ১৮৮৪ শক)
• পৌরসভার ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সার্বজনীন পূজা বানচাল হইবার উপক্রম: কলিকাতায় কি এবার সার্বজনীন দূর্গোত্সব হইতে পারিবে না? বুধবার কর্পোরেশনের মুলতুবী সভায় স্ট্যান্ডিং টাউন প্ল্যানিং কমিটির চেয়ারম্যান শ্রীগণপতি সূর (কং) ঐ মর্মে এক প্রশ্ন উত্থাপন করিলে সভায় বেশ কিছুটা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সভার শুরুতেই শ্রী সূর এই অভিযোগ করেন যে, পূজামণ্ডপ এবং ফুটপাত ঘেরার ব্যাপারে কমিশনার কতকগুলি ক্ষেত্রে কর্পোরেশনের প্রস্তাব অমান্য করিয়াছেন।


এ বারের বিশেষ সংযোজন
প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট চণ্ডী লাহিড়ীর কিছু ব্যাঙ্গচিত্র

তির্যক
 
আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল প্রবন্ধের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।
 
 
 


 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.