দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ জুন ১৯৬২ থেকে ২০ জুলাই ১৯৬২ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।
• বড়বাজারে গুদামে মারাত্মক বিস্ফোরণ: বুধবার সকালে বড়বাজার দিগম্বর জৈন টেম্পল দ্রব্যের গুদামে এক মারাত্মক বিস্ফোরণের ফলে দুইজন নিহত এবং সাতজন আহত হন। আহতদের মধ্যে দুইটি শিশু এবং একজন স্ত্রীলোক আছে। গুদামের মালিককে গ্রেপ্তার করা হইয়াছে। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে চীফ ইনস্পেকটর অব এক্সপ্লোসিভ তদন্ত করিতেছেন।
তিনতলা বাড়ীর নীচ তলার সোরা, গন্ধক এবং কারবাইডের ঐ গুদামে সকাল সাড়ে ৬টায় এক প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটে এবং তালাবন্ধ গুদামের একদিকের দরজা ছিটকাইয়া পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে লেলিহান অগ্নিশিখা এবং ধূম্রজালে সমস্ত বাড়িটিকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে। খবর পাইয়া দমকল বাহিনী ছুটিয়া আসে। তিনটি ইঞ্জিনের সাহায্যে দমকল কর্মীরা প্রায় দেড় ঘন্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। ইতিমধ্যে গুদামের পাশের ঘরের দুই ব্যক্তি মারাত্মকরূপে অগ্নিদগ্ধ হয়। দোতালার উপরে দুইটি বালকবালিকা সহ মোট সাতজন আগুনে পুড়িয়া আহত হয়। স্থানীয় অধিবাসীরা বলেন কারবাইড গ্যাসে দুইজন সংজ্ঞা হারায় আহতদের মাড়োয়াড়ী রিলিফ সোসাইটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে সন্ধ্যা ৭-৩০টা নাগাদ ব্রিজবিহারী সিং (৪০) এবং চন্দ্রদ্বীপ চৌধুরী (৩৫) মারা যান। ইঁহারা দুইজনেই গুদামের পাশের ঘরে ছিলেন।
দুর্ঘটনার পরে ঘটনাস্থলে যাইয়া দেখি বাড়িটির বিরাট চত্বরে তখনও পোড়া কাঠ, কাপড় ইত্যাদি ইতস্তত বিক্ষিপ্ত পড়িয়া আছে। এক জায়গায় হতভাগ্য ব্যক্তিদের ঝলসান গায়ের চামড়া পড়িয়া থাকিতে দেখা যায়। আতঙ্কগ্রস্ত আবাসিকরা ঐগুলি দেখাইতে গিয়া শিহরিয়া উঠেন। দেখা গেল, সমস্ত বাড়ির দেওয়ালে সাদা চূর্ণ লাগিয়া আছে। স্থানীয় লোকেরা বলেন, উহা অ্যালুমিনিয়ামের গুড়া। তাঁহারা অভিযোগ করেন যে, ইতিপূর্বে ঐ গুদামটিতে তিনবার আগুন লাগিয়াছে। শেষবার আগুন লাগে ১৯৫৯ সালে। এই তিন তলা বসত বাড়িটির একশটি কামরায় প্রায় ছয়শত লোক বাস করেন। বাসগৃহের মধ্য হইতে দাহ্য পদার্থের গুদাম অপসারণের জন্য তাঁহারা বহু আবেদন নিবেদন করিয়াছেন, কিন্তু কোন ফল হয় নাই বলিয়া অধিবাসীদের অনেকে অভিযোগ করেন।
• কলিকাতা হাইকোর্টে
‘দুই লাইব্রেরী এক হউক’: কলিকাতা হাইকোর্টে ‘দুই লাইব্রেরী’ প্রথার অবসানের জন্য প্রধান বিচারপতি শ্রীহিমাংশু বসু উদ্যোগী হইয়াছেন। বৃহস্পতিবার তিনি এই উদ্দেশ্যে বার-লাইব্রেরী ক্লাব এবং বার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের নিকট দুইখানি চিঠি পাঠাইয়াছেন। তাঁহার বক্তব্য, অ্যাকাউন্ট আইন পাশ হইবার পর এই ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। উভয় লাইব্রেরীর কর্মকর্তারা যথাশীঘ্র সম্ভব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একীকরণের সূত্র স্থির করিতে পারিলে ভাল হয়। বার লাইব্রেরী ক্লাবে কেবলমাত্র ব্যারিস্টারদের প্রবেশাধিকার আছে। অন্যদিকে, বার অ্যাসোসিয়েশন লাইব্রেরী প্রধানত এ্যাডভোকেটরা ব্যবহার করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, কিছুদিন পূর্বে বার লাইব্রেরী ক্লাবে প্রবেশাধিকারের দাবী জানাইয়া কয়েকজন অ্যাডভোকেট একটি মামলা দায়ের করিয়াছিলেন। মামলাটি এখন সুপ্রীম কোর্টে।
• দূষিত পানীয় জলই কলেরার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ: জলের নামে তরল বিষ সরবরাহ করা হইতেছে বলিয়া শুক্রবার কলিকাতা কর্পোরেশনের সাপ্তাহিক সভায় জনৈক কাউন্সিলার এক গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেন।
উক্ত সদস্য এই অভিযোগ করেন যে, সম্প্রতি কর্পোরেশনের পক্ষ হইতে ১২০টি ক্ষেত্রে পরিস্রুত পানীয় জলের নমুনা পরীক্ষা করিয়া দেখা গিয়াছে যে, উহার মধ্যে ৫২টি ক্ষেত্রে কলেরার বীজাণুনাশক ক্লোরিন দেওয়া হয় নাই।
ইউ সি সি দলের সদস্য ডাঃ কৃষ্ণজীবন মজুমদার ঐ মর্মে অভিযোগ করিয়া বলেন যে দূষিত পানীয় জলের দরুন কাশীপুর, বেলেঘাটা, নারকেলডাঙ্গা, ট্যাংরা, মাণিকতলা এবং টালিগঞ্জ অঞ্চলে ইতিমধ্যেই কলেরা রোগের প্রকোপ দেখা দিয়াছে। গত ২রা জুনের মধ্যে কলিকাতায় ৬৭ জন কলেরা রোগাক্রান্ত হইয়া মারা গিয়াছেন।
রবিবার মহাজাতি সদনে অনুষ্ঠিত স্বর্গত ছবি বিশ্বাসের লোকসভায় ভাষণরত শ্রীমতী কানন দেবী।
মঞ্চে
এই সভার সভাপতি কলিকাতার মেয়র শ্রীমজুমদার (বাঁদিকে—সামনে), শেরিফ শ্রী বি এন রায়চৌধুরী
(বাম হইতে দ্বিতীয়), জাতীয় অধ্যাপক শ্রীসত্যেন্দ্রনাথ বসু, স্বায়ত্তশাসন মন্ত্রী শ্রীশৈলকুমার মুখার্জি,
স্পীকার শ্রীকেশবচন্দ্র বসু, শ্রীঅহীন্দ্র চৌধুরী প্রভৃতিকে দেখা যাইতেছে। ফটো: আনন্দবাজার
•
ছবি বিশ্বাস ভারতের শিল্পকে শীর্ষ-স্থানে তুলিয়াছেন:বাংলা চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ নট স্বর্গত ছবি বিশ্বাসের স্মরণে রবিবার মহাজাতি সদনে আহূত এক নাগরিক সভায় শোক প্রকাশ করা যায়। কলিকাতার শেরিফ শ্রী বি এন রায় চৌধুরী এই সভা আহ্বান করেন এবং ইহাতে পৌরোহিত্য করেন কলিকাতার মেয়র শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদার। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ রায় এবং কেন্দ্রীয় তথ্য মন্ত্রী শ্রী বি গোপাল রেড্ডিও পত্র মারফত্ শোক জ্ঞাপন করেন।
মেয়র স্বয়ং শোকজ্ঞাপন প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন এবং সভাস্থ সকলে দন্ডায়মান হইয়া প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। বিভিন্ন বস্তা স্বর্গত বিশ্বাসের স্মৃতিরক্ষার জন্য আবেদন জানাইলে মেয়র এই মর্মে আশ্বাস দেন যে, একটি স্মৃতিরক্ষা কমিটি গঠনের মাধ্যমে এই কাজে হাত দেওয়া হইবে। মেয়রের প্রস্তাবে স্বর্গত নটের আকস্মিক মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয় ও তাঁহার শোকার্ত পরিজনদিগকে সান্ত্বনা ও সহানুভূতি জানান হয়।
ছবি বিশ্বাস যে কী পরিমাণ জনপ্রিয়তা অর্জন করিয়াছিলেন এবং তাঁহার মর্মান্তিক মৃত্যুতে দেশবাসী কী গভীর আঘাত পাইয়াছেন তাহা এইদিনের শোকসভাটি প্রমাণ করিয়াছে। বিধানসভার স্পীকার হইতে আরম্ভ করিয়া সমাজের সকল স্তরের লোক—সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ—এই সভায় যোগ দেন। সভায় মোট দুইটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। •
কাশীপুর ও বরাহনগরের উন্নয়ন দাবি: বরানগর, ২৪শে জুন—বৃহত্তর কলিকাতা উন্নয়ন পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করিয়া কাশীপুর ও বরাহনগর অঞ্চলের উন্নয়নের দাবিতে নর্থ সুবার্বন হিতকারী সভার পক্ষ হইতে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর নিকট যে স্মারকলিপি প্রেরণ করা হইয়াছে গত রবিবার সন্ধ্যায় কাশীপুরে সভা কর্তৃক আয়োজিত এক সম্মেলনে তাহা ব্যাখ্যা করা হয়। উহাতে স্থানীয় কংগ্রেস এম এল এ ডাঃ সুশীল কুমার দাশগুপ্তও সমস্যার সমাধান দাবি করেন।
হিতকারী সভার সহ-সভাপতি শ্রীসুরেন্দ্রনাথ বসু জানান, কাশীপুর ও বরাহনগর দুইটি অঞ্চলের চার লক্ষাধিক লোকের জন্য এই অঞ্চলে পৌরব্যবস্থা হইতে শুরু করিয়া জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিবরটি দীর্ঘদিন ধরিয়া অবহেলিত। এই দুইটি অঞ্চলের রাস্তাঘাট পানীয় জল এবং নর্দমার জলনিকাশী ব্যবস্থা অচল হইবার উপক্রম হইয়া পড়িয়াছে। •
গঙ্গা নদীর উপর নূতন সেতু নির্মাণ: বৃহত্তর কলিকাতা এলাকায় যানবাহন চলাচলের সুবিধাকল্পে গঙ্গা নদীর উপর দিয়া একটি নূতন সেতু নির্মাণের জন্য খুঁটিনাটি বিষয়গুলি সম্পর্কে পর্যবেক্ষণকার্য চালাইতে যে অর্থ ব্যয় হইবে, বিশ্ব ব্যাঙ্ক তাহাতে সাহায্য করিতে সম্মত হইয়াছে।
ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই অর্থ সাহায্যের জন্য বিশ্বব্যাঙ্ককে অনুরোধ জানাইয়াছিলেন। পর্যবেক্ষণকার্য চালাইতে যে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হইবে, তাহার কোন অংশই ভারতের তহবিল হইতে লওয়া হইবে না—ব্যাঙ্ক হইতে এই আশ্বাস দেওয়া হইবে। যে সব ব্যয়ের জন্য বিশ্বব্যাঙ্ক হইতে অর্থ দেওয়া হইবে, তাহা ছাড়া আর সমস্ত ব্যয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার বহন করিবে।
এক সরকারী বিজ্ঞপ্তি হইতে জানা যায়, কলিকাতা ও গঙ্গার পশ্চিম তীরবর্তী শিল্পসমৃদ্ধ এলাকার মধ্যে মোটর যান চলাচলের বর্তমান প্রধান সংযোগ ব্যবস্থা—প্রসিদ্ধ হাওড়া ব্রিজের উপর যানবাহনের ভিড় কমাইবার জন্য একটি নূতন সেতুর জরুরী প্রয়োজন দেখা দিয়াছে।
• কলিকাতার কলেজী ছাত্রছাত্রীর
শতকরা ১০ জন মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত:
কলিকাতার কলেজী ছাত্রছাত্রীদের শতকরা দশজন ‘সাইকো নিউরোসিস’ বা মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত বলিয়া জানা যায়।
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব হেলথের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এই তথ্যই প্রকাশ পাইয়াছে। এই ছাত্র-ছাত্রীদের রোগ ডাক্তারী পরীক্ষায় ধরা পড়ে না। কিন্তু তাহারা মনে মনে নানা রোগ কন্পনা করিয়া আতঙ্কিত হইয়া পড়ে। বিভিন্ন পরীক্ষার আগেই নাকি এই ধরণের রোগগ্রস্তদের সংখ্যা বাড়িয়া যায়।
এই রোগীদের চিকিত্সার ব্যবস্থাও ভিন্নতর। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সকগণ ঘুমের ঔষধ অথবা অন্য কোনভাবে তাহাদের স্নায়বিক দুর্বলতা কমানোর চেষ্টা করিয়া থাকেন। • জঞ্জাল অপসারণ ও প্লাবন হইতে মহানগরীকে রক্ষা:অবিলম্বে লরীর সংখ্যা না বাড়াইলে কলিকাতা মহানগরীকে জঞ্জালের পাহাড় এবং সামান্য বর্ষণে জলপ্লাবনের হাত হইতে রক্ষা করা যাইবে না।
মহানগরীর জঞ্জাল ও ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী সমস্যা সমাধানের সুপারিশ সম্পর্কে রাজ্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত স্পেশাল সার্ভে কমিটির চেয়ারম্যান শ্রী জে এন তালুকদার ঐ অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন বলিয়া জানা যায়।
সোমবার দুপুরে শ্রীতালুকদার কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় ভবনে মেয়র শ্রী রাজেন্দ্রনাথ মজুমদারের সহিত মহানগরীর বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি মেয়র শ্রী মজুমদারকে নাকি জানান যে, যে সকল কর্মচারী অযথা কাজে গাফিলতি দেখাইবেন তাঁহাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন। শ্রীতালুকদার আরও জানান যে, সার্ভে কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি যতটুকু খবর পাইয়াছেন তাহাতে জানিতে পারিয়াছেন যে, বহু ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত লরীচালক ও মিস্ত্রি না থাকার দরুন লরীগুলি অহেতুক অকেজো অবস্থায় পড়িয়া থাকে। ইহা ছাড়া লরীর অংশবিশেষ কর্পোরেশনের স্টোরে না থাকার দরুনও অনেক লরী অকেজো অবস্থায় পড়িয়া আছে। তিনি আরও বলেন যে, লরীগুলি দেখাশুনা করিবার জন্য প্রতিটি গ্যারেজে একজন করিয়া এ্যাসিট্যান্ট ইঞ্জিনীয়ার নিযুক্ত করা উচিত। তিনি বলেন যে, দক্ষ কর্মীদের বেতনের হার আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। শ্রমিকদের বেতনও কিছুটা বাড়াইতে পারিলে সুফল হইবে বলিয়া তিনি মনে করেন। ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী পরিস্কারের কাজের কিছুটা উন্নতি হইয়াছে বলিয়া তিনি জানান।
• কলিকাতা হইতে ডি-ভি-সি’র সদর দপ্তর মাইথনে স্থানান্তরে নির্দেশ: কলিকাতা হইতে বিহারে মাইথনে ডি ভি সি-র সদর দপ্তর স্থান্তরের চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে।
ডি ভি সি-র বিদায়ী ডেপুটী জেনারেল ম্যানেজারের স্বাক্ষরিত ২২ শে জুন তারিখের এক গোপন নির্দেশে বলা হইয়াছে যে, অবিলম্বে ডি ভি সি-র সদর দপ্তর মাইথনে স্থানান্তরিত হইবে। প্রথমে ডেপুটী জেনারেল ম্যানেজার অফিস, এ্যাডিশনাল চীফ ইঞ্জিনীয়ার অফিস সহ সংশ্লিষ্ট ছোট ছোট আরও ২/৩ টি অফিস মাইথনে স্থানান্তরিত করিতে হইবে। ক্রমে ক্রমে অন্যান্য বিভাগগুলি স্থানান্তরিত হইবে।
বিনামেঘে বজ্রাঘাতের মত এই নির্দেশ ডি-ভি-সি কর্মচারীদের মধ্যে দারুণ বিক্ষোভ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করিয়াছে। সদর দপ্তরে মোট ১১ শত কর্মী কাজ করেন।
ঐ সার্কুলারে আরও বলা হইয়াছে যে, বর্তমানে মাইথনে অবস্থিত ট্রান্সমিশন বিভাগসহ কয়েকটি অফিস পাঞ্চেত্ প্রোজেক্টে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই স্থানান্তরিত হইবে, এবং ঐ সকল খালি বাড়ীতে সদর দপ্তরের অফিস বসিবে। • কলিকাতা মহানগরীতে কলেরা মহামারীরুপে ঘোষণা:মঙ্গলবার কলিকাতা কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ মহানগরীতে কলেরা মহামারীরূপে ঘোষণা করেন। মোট ৮০টি ওয়ার্ডের মধ্যে শুধু ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড ব্যতীত অন্য সকল ওয়ার্ডেই এবার কলেরা রোগের প্রকোপ দেখা দিয়াছে।
গত দশ বছরের মধ্যে মহানগরীতে কলেরা এত ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করে নাই বলিয়া জানা যায়। ১৯৫৮ সালের পর কলিকাতা মহানগরীতে আবার কলেরা মহামারীরূপে আত্মপ্রকাশ করিল।
আমাদের হাওড়ার সংবাদদাতা জানাইতেছেন যে, হাওড়াতেও মে মাস হইতে অপ্রত্যাশিতভাবে কলেরা রোগের আবির্ভাব ঘটিয়াছে।
মাছি, পুকুরের জল এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পরিস্রুত জল সরবরাহের অভাবের দরুণ কলেরা মহামারীরূপে দেখা দিয়াছে বলিয়া কর্পোরেশনের স্ট্যান্ডিং হেলথ্ কমিটির চেয়ারম্যান ডঃ সুধাংশু শেঠ মনে করেন।
• কলেরা মহামারীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম:
কলিকাতা মহানগরীতে কলেরা মহামারীরূপে দেখা দেওয়ায় রাজ্য সরকার অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হইয়া পড়িয়াছেন এবং আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সকল লোককে কলেরা ও বসন্ত প্রতিষেধক টীকা দিবার জন্য রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর সিদ্ধান্ত করিয়াছেন।
কলিকাতা কর্পোরেশনের পরিচালনাধীনে ঐ অভিযান শুরু হইবে। তবে রাজ্য সরকারের পক্ষ হইতে এ ব্যাপারে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে সর্বতোভাবে সাহায্য করা হইবে।
এদিকে মেয়র শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদার এই বত্সরে যে সকল বড় নলকূপ চালু করার কথা, তাহা আগামী তিনদিনের মধ্যে কার্যকরী করিবার জন্য কমিশনার শ্রীপ্রবোধচন্দ্র মজুমদারকে নির্দেশ দিয়াছেন। অকেজো নলকূপগুলিও অবিলম্বে মেরামত করিবার জন্য মেয়র শ্রীমজুমদার সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়াছেন বলিয়া জানা যায়।
কর্পোরেশনের অ্যাম্বুলেন্স গাড়ীগুলি যাহাতে অনতিবিলম্বে মেরামত করা হয় সে সম্পর্কেও তিনি যথাযথ ব্যবস্থা অবলম্বন করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসারকে নির্দেশ দিয়াছেন। • কলিকাতায় কলেরা: কাটা ফল, পচা মাছ, খোলা খাবার— এরাই আপনার শত্রু, কলেরার রূপ নিয়ে কখন ঘাড়ে চেপে বসবে, কেউ জানে না। ভুলেও এদের ধারে কাছে ঘেসবেন না, সাবধান!
কলেরারও পাখা আছে, মাছির পিঠে ভর দিয়ে ওড়ে। জঞ্জালে, নর্দমায়, আবর্জনায়। কর্পোরেশন কেন জঞ্জাল সাফ করেন না? এ নালিশ আপাতত মুলতুবি রেখে আবার বলছি সাবধান!
অপরিস্রুত জলের আর এক নাম কলেরা। কলেরার শত্রু ফোটানো জল। কলেরার বীজ গেলার আগে সাবধান, সাবধান, সাবধান!
এবং অবশেষে নিবেদন—
কলেরার টিকা নিন।
• তোড়জোড়েই রাত-ভোর এদিকে কলেরা হু হু করিয়া বাড়িতেছে: তোড়জোড়েই রাতভোর, এদিকে মহানগরীতে কলেরা হু হু করিয়া বাড়িয়া যাইতেছে। সরকার এবং পৌর-প্রতিষ্ঠানের কলেরা নিধন যজ্ঞের প্রস্তুতিপর্ব এখনও শেষ হয় নাই।
এদিকে রাজ্য সরকারের উত্কণ্ঠা মেয়রের উদ্বেগ, কমিশনারের নির্দেশ—সবকিছু উপেক্ষা করিয়া কলিকাতা শুক্রবারও সেই কলিকাতাই রহিয়া গিয়াছে। এইদিন গোটা শহর ঘুরিয়া দেখিলাম, পথে পথে সেই জঞ্জালের স্তূপ, বস্তিতে বস্তিতে জলের জন্যে হাহাকার এবং অলিতে গলিতে ভাঙা টিউবওয়েলের মিছিল।
আরও আছে। এইদিন এক নূতন দৃশ্যও দেখিয়াছে। কর্পোরেশনের অ্যাম্বুলেন্স বাহিনীর সদর দপ্তরের মাত্র এক ফার্লং-এর মধ্যে ফুটপাথের উপর অর্ধমৃত এক কলেরারোগী পড়িয়া আছে।
প্রকৃতিও বিরূপ। মেঘ আছে, বৃষ্টি নাই, আবহাওয়ার গুমট এবং রোগের প্রকোপ যথারীতি হু হু করিয়া বাড়িতেছে। আতঙ্কিত নগরবাসী টিকা লওয়ার জন্য ছোটাছুটি করিয়া ফিরিতেছেন।
• কলিকাতায় রাষ্ট্রপতি,
স্টেশনে বিপুল সম্বর্ধনা: শনিবার বিকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন একখানি স্পেশাল ট্রেনে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছিলে তাঁহাকে বিপুলভাবে সম্বর্ধনা জানান হয়। হাওড়া স্টেশল হইতে রাষ্ট্রপতি সোজা মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধানচন্দ্র রায়কে দেখিবার জন্য তাঁহার বাড়ীতে যান। বিধানচন্দ্র রায় গত কয়দিন বাড়ীর বাহির হইতেছেন না। স্টেশন হইতে ডঃ রায়ের বাড়ী পর্যন্ত পথের উভয় পার্শ্বে হাজার হাজার উত্সুক নরনারী কোথাও নীরবে কোথাও হাততালি সহকারে তাঁহাকে অভিবাদন জানায়। সমস্ত পথ একখানি খোলা গাড়ীতে ঋজু দেহ রাষ্ট্রপতি করজোড়ে দাঁড়াইয়া জনতার অকুণ্ঠ অভিবাদন গ্রহণ করেন।
রাষ্ট্রপতি ইহাই তাঁহার প্রথম কলিকাতা আগমন। • কলিকাতা হাইকোর্টের শততম জয়ন্তী:
আজ কলকাতা হাইকোর্টের জন্ম শতবার্ষিকী। আজ থেকে একশ’ বছর আগে ১৮৬২ সনের এমনি একটি দিনে বাংলা সহ গোটা পূর্ব ভারতের মানুষ সানন্দে রাজনীতিতে দু’টি মৃত্যুখবর শুনেছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল শ্রীমতী
নাইডুর সহিত রাষ্ট্রপতি ডাঃ রাধাকৃষ্ণন
হাওড়া স্টেশন ত্যাগ করিতেছেন।
ফটো: আনন্দবাজার
একটি কোম্পানি রাজত্বের অন্যতম স্মারক—কলকাতার বিখ্যাত সদর দেওয়ানি আদালত, অন্যটি খাস ইংলন্ডেশ্বরের নিজস্ব বিচারমঞ্চ সুপ্রীম কোর্ট।
এই অস্ফুট আনন্দ অবশেষে হর্ষধ্বনিতে পরিণত হল তখন যখন সুপ্রিম কোর্টের ভিতে, সেই ঐতিহাসিক বাড়ীটির কবরে ধীরে ধীরে কলকাতার আকাশে মাথা তুলে দাঁড়াল—নবযুগের প্রতীক, নতুন ধর্মাধিকরণ,—কলকাতা হাইকোর্ট। সেও ১৮৬২ সনেরই কথা। জন্ম ও মৃত্যুর এই ঘটনা দুটি প্রায় যুগপত্। • কবি নজরুলের পত্নী বিয়োগ: শ্রীমতী প্রমীলা ইসলাম মারা গিয়েছেন। শনিবার বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে, পাইকপাড়ায় মন্মথ দত্ত রোডের বাড়ীতে। বয়স হয়েছিল বাহান্ন।
বড় ছেলে সব্যসাচী ফুঁপিয়ে কাঁদছে, ছোট ছেলে অনিরুদ্ধের চোখে জল,—‘মা নেই!’ আর দীর্ঘ আটত্রিশ বছর যাঁর সঙ্গে ঘর করেছেন, সুখে দুঃখে ছায়ার মত পাশে পাশে ঘুরেছেন তিনি সেই জীবনসঙ্গীর জন্য চোখে এক ফোঁটাও জল নেই তাঁর, বিস্মৃতির পাথরে সব যেন জমাট বেঁধে আছে।
মৃত্যুর খবর পেয়ে তেতলা বাড়ির চৌকাঠে যখন দাঁড়ালাম, লাল সিঁদুরের বড় টিপটি সতীলক্ষ্মীর কপালে তখন জ্বল জ্বল করছে। বিছানায় উত্তরমুখী শয়ান সেই সুন্দর আনত চোখ দুটি নিমীলিত, গায়ের রঙ ফ্যাকাশে। চওড়া লালপেড়ে শাড়িখানা শাশুড়ীর গায়ে জড়িয়ে দিচ্ছেন এক বউ, অন্য জন গেছে আলতা আনতে— পায়ে পরাবে।
চিরনিদ্রায় কবিপত্নী প্রমীলা ইসলাম। নির্বিকার কবির দিকে চেয়ে আছেন বাল্যবন্ধু শৈলজানন্দ। ফটো:
আনন্দবাজার
• নবীন বাংলার রূপকার বিধানচন্দ্রের তিরোধান: ভারতের ভাগ্যাকাশে আচম্বিতে অশনি সম্পাত।
আমরা গভীর বেদনা ও দুঃখের সহিত জানাইতেছি যে, বাঙ্গলার অতিপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী মহানায়ক ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় আর ইহজগতে নাই।
রবিবার ১লা জুলাই যখন তাঁহার ৮১তম জন্মদিবস উপলক্ষে দেশ জুড়িয়া উত্সব চলিয়াছিল, তখনই দ্বিপ্রহরে বেলা ১২-৩ মিনিটে তিনি নির্মল চন্দ্র স্ট্রীটস্থ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুদিন আসিয়া জন্মদিনের সঙ্গে একাসনে বসে। বঙ্গমাতার বুক হইতে বর্তমানে বাঙ্গলার কর্ণধার, ভারতরত্ন বিধানচন্দ্রকে ছিনাইয়া লয়। অর্ধ-শতাব্দীরও অধিককাল ধরিয়া যে কর্মযোগী বাঙ্গলার রাষ্ট্র ও সমাজজীবনে এবং আর্তজনের সেবায় নিযুক্ত ছিলেন, তাঁহার চিরবিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্গলা দেশ এক বিরাট শূন্যতার মুখোমুখি আসিয়া দাঁড়ায়।গত ৯দিন ধরিয়া তিনি হৃদরোগ ও রক্তের নিম্ন চাপে ভুগিতেছিলেন। চিকিত্সকদের পরামর্শে তিনি পূর্ণ বিশ্রাম গ্রহণ করিতেছিলেন। রবিবার সকাল হইতেই তাঁহার অবস্থা খারাপের দিকে যাইতেছিল।
ঐদিন ডাঃ রায়ের মৃত্যুসংবাদ প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার বাসভবনের সম্মুখে অস্বাভাবিক ভীড় জমিয়া যায়। দুপুরের দিকে অবস্থার অবনতি ঘটিতেছে—এই সংবাদ পাইয়া রাষ্ট্রপতি ডঃ রাধাকৃষ্ণন এবং রাজ্যপাল শ্রমতী পদ্মজা নাইডু তত্ক্ষনাত্ রাজভবন হইতে তাঁহার বাসভবনে যাত্রা করেন। কিন্তু পৌঁছাইবার পূর্বেই সব শেষ হইয়া যায়। যে ‘ধন্বন্তরি’ চিকিত্সক অসংখ্য রোগীকে মৃত্যুর মুখ হইতে ফিরাইয়া আনিয়াছেন, মহাকালের আহ্বানে তিনি মরণসাগর পায়ে চলিয়া গেলেন।
• ‘ভীষণ দুঃখে ডালি ভরে নিয়ে তোমার অর্ঘ্য সাজাব’...বিস্তারিত • শেষ দর্শনাকাঙ্খায় নগরীর পথে পথে বেদনা-বিহ্বল লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশ: শোকাকুল জনতার বন্দে মাতরম্ ধ্বনি এবং সামরিক বাহিনীর শেষ অভিবাদনের মধ্যে বিধানচন্দ্রের মরদেহ কেওড়তলা শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লীতে প্রবেশ করে, লক্ষ লক্ষ অনুরাগীর শেষ দেখার পথ রোধ করিয়া চুল্লীর দ্বার নামিয়া আসে, চিরকালের মত তিনি চোখের আড়ালে চলিয়া যান।
সোমবার বেলা দুইটায় পূর্ণ মর্যাদার সহিত ভারতের সর্বজনশ্রদ্ধেয় নেতা ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। মাত্র দেড় ঘন্টার মধ্যে এই শতকের পুরুষসিংহ ‘আশী বছরের যুবার’ সব শেষ হইয়া যায়।
মুখাগ্নি করেন, ডাঃ রায়ের অন্যতম ভ্রাতুষ্পুত্র শ্রীসুকুমার রায়। রাষ্ট্রপতি ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন, রাজ্যপাল শ্রীমতী পদ্মজা নাইডু, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রী ভি কে কৃষ্ণ মেনন বিহারের চারজন মন্ত্রী সহ মুখ্যমন্ত্রী শ্রীবিনোদানন্দ ঝাঁ, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী শ্রীঅশোক সেন, কলিকাতার মেয়র শ্রীরাজেন মজুমদার, খাদ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন সহ পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রীদল নীরবে, নত মস্তকে দাঁড়াইয়া থাকেন। তাঁহাদের অনেকের চোখেই তখন জল।
ওদিকে বিশাল জনসমুদ্রও শোকে উদ্বেল। বিধানসভা ভবন হইতে নানা পথ ঘুরিয়া কেওড়াতলা মহাশ্মশান পর্যন্ত দীর্ঘ সাত মাইল পথ জুড়িয়া এই শোকযাত্রায় এইদিন যে ভিড় হইয়াছিল, অনেকের মতে কলিকাতার ইতিহাসে ইহা রেকর্ড। সাঁইত্রিশ বছর আগে দেশবন্ধুর শবযাত্রার স্মৃতিকথাও নানা লোকের মুখে শোনা যায়। •
চিতাভস্ম: ডাঃ রায়ের চিতাভস্ম আপাততঃ একটি তাম্রপাত্রে রক্ষিত হইবে, পরে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে ডাঃ রায়ের যে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হইবে সেখানে উহা সমাহিত হইবে। সোমবার মেয়র শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদার ইহা জানান।
ঐদিন শ্রী মজুমদার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে এতত্সংক্রান্ত একটি খসড়া নয়া রাষ্ট্রপতি ডঃ রাধাকৃষ্ণন এবং রাজ্যপাল শ্রীমতী পদ্মজা নাইডুকে দেখান। তিনি পরে পি টি আইকে জানান যে, তাঁহারা ঐ খসড়া অনুমোদন করিয়াছেন বলিয়া তাঁহার মনে হয়। তিনি আরও বলেন, কলিকাতা পৌরসংস্থা ইতিমধ্যে ডাঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির জন্য নির্বাপিত স্থানের বিপরীত দিকে দানস্বরূপ একটি স্থান নির্দিষ্ট করিয়াছেন।
• কলকাতায় রথের মেলা:
সম্ভবত সংসারের তাই নিয়ম। মানুষ চলে যায়, জগত্ মুহূর্তে বিস্বাদ হয়ে যায়, কিন্তু রথ তবুও থামে না, ঘর্ঘর রব তুলে যথারীতি সে এগিয়ে আসে।
এবারও এসেছে। দু’দিন আগেও মনে হয়েছিল হয়ত এবার আর আসবে না। কেওড়াতলার পথে পরশু নগরের যে মুখ দেখেছে মহাকাল তারপর আর তার রথের চাকা বৌ-বাজারে থামবে না। রথ এবার কলকাতায় আর ভেঁপু বাজাতে আসবে না।
কিন্তু এসেছে। অবশ্য বরাবরের মত সরবে নয়, নিঃশব্দে। কখন চালা উঠেছিল, কখন নাগরদোলা বসেছিল, নার্সারির গাছে গাছে ফুটপাথে কখন বাগিচা রচিত হয়েছিল—কেউ জানে না। জানার সময় ছিল না, মনও না। কিন্তু কাল ভোরে দুয়ার খোলামাত্র দেখা গেল কলকাতার রথ এসে গেছে। সার্কুলার রোডের বাতাসে পোড়া তেল আর ভাজা পাপড়ের গন্ধ, তালপাতার বাঁশী আর সার্কাসওয়ালার প্রস্তুতিতে অন্য ছন্দ।
দুপুর থেকে ট্রাম বাস সেই ঘোরেই যেন মন্থর ছিল। অবাক বিস্ময়ে ড্রাইভার সহ যাত্রীরা সেই দৃশ্যই দেখতে দেখতে যাচ্ছিল। কোথাও ঝাঝরি কড়াই, কোথাও ধামাকুলো। এপারে নার্সারিওয়ালারা, ওপারে—ফার্নিচারওয়ালা, এদিকে পাখীর দোকান, ওদিকে রঙ্গীন মাছের। সার্কুলার রোডে কাল সত্যিই অভাবিত আয়োজন— কলকাতার চিরাচরিত রথের মেলা। ছোটরা টিনের রথ কিনছে, বড়রা ঝাউয়ের চারা দর করছেন।
• কলিকাতায় কলেরার প্রকোপ অব্যাহত: কলিকাতা কর্পোরেশনের নানা তোড়জোড় এবং মহামারী প্রতিরোধের জন্য দশদিনের মধ্যে নানা জরুরী কাজ সম্পন্ন করার সরকারী নির্দেশ সত্ত্বেও শহরে কলেরার প্রকোপ হ্রাস পাইবার কোন লক্ষণ দেখা যাইতেছে না। বরং গত সপ্তাহে কলেরা রোগ আক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা এই বছরের ‘রেকর্ড’ সৃষ্টি করিয়াছে।
গত ৩০শে জুন যে সপ্তাহ শেষ হইয়াছে সেই সময় ৪৪৪ জন কলেরায় আক্রান্ত হয় এবং ১১৩ জন ঐ রোগে মারা যায়। তাহার পূর্ব সপ্তাহে যথাক্রমে ৩৫৩ জন আক্রান্ত হয় এবং ৮৯ জন মারা যায়।
• কলিকাতায় আবার বিদ্যুত্ সঙ্কট: কলিকাতা ও শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুত্ সঙ্কট চরম আকার লইতেছে বলিয়া মনে হয়। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের আশঙ্কা, অচিরেই সম্ভবত গত বত্সরের মত অবস্থার উদ্ভব হইতে পারে।
বর্তমানে যে অবস্থার উদ্ভব হইয়াছে, উহার পটভূমিকায় কলিকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে সব শিল্প সংস্থায় উচ্চশক্তিসম্পন্ন বিদ্যুত ব্যবহার করা হয়, সেই সকল ক্ষেত্রে বিদ্যুত্শক্তি সরবরাহ বিকাল পাঁচটা হইতে রাত্রি দশটা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখিবার বিষয় কলিকাতা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন কর্তৃক বিশেষভাবে বিবেচনা করা হইতেছে বলিয়া জানা যায়।
বৃহস্পতিবার উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ কলিকাতায় বিভিন্ন অঞ্চলে বিকাল ও সন্ধ্যায় এক বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়িয়া সাময়িকভাবে বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ থাকিবার ফলে ‘নিষ্প্রদীপ’ অবস্থার উদ্ভব হয় এবং নাগরিক জীবনযাত্রা সহসা স্তব্ধ হইয়া যায়। আলীপুর-এসপ্ল্যানেড রুটে ট্রাম চলাচল প্রায় দেড় ঘন্টা বন্ধ থাকে। কলিকাতা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন হইতে জানান হয় যে, এইদিন ১২ মেগাওয়াট কম বিদ্যুত্-শক্তি ছাড়া হয়। তাহার ফলেই ঐ বিভ্রাট ঘটে।
• কলিকাতা পৌরসভার হরিজন শ্রমিকদের গৃহ নির্মাণ: কলিকাতা কর্পোরেশনের হরিজন শ্রমিকদের গৃহ নির্মাণের জন্য কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের ৮৩,৩৩,৫০০ টাকার একটি পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন করিয়াছেন।
ঐ সকল শ্রমিকের অধিকাংশই কনজারভেন্সী মজদুর এবং উহাদের মোটসংখ্যা হইবে প্রায় ১৪,০০০।
আপাতত ১৪০০ ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হইবে এবং প্রতি ছয়জন হিসাবে প্রায় ৮,৫০০ শ্রমিকের বাসস্থানের সঙ্কুলান হইবে বলিয়া আশা করা যায়। বর্তমানে কর্পোরেশনের নিজস্ব বাসভবনে প্রায় ২৫০০ শ্রমিক বাস করে।
মোট টাকার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে ৩১,২৫,০০০ টাকা গ্র্যান্ট এবং সমপরিমাণ টাকা ঋণ হিসাবে দিতে রাজি হইয়াছেন। ইহা ছাড়া অতিরিক্ত ১০,৪০,০০০ টাকার সাহায্যের জন্য কর্পোরেশনের পক্ষ হইতে কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট আবেদন জানানো হইবে। বাকী ব্যয় কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বহন করিবেন।
পশ্চিমবঙ্গের অস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন শনিবার
মহাজাতি সদনে
সর্বজনশ্রদ্ধেয় জননায়ক ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের
তৈলচিত্রে মাল্যার্ঘ অর্পণ করিতেছেন। ফটো: আনন্দবাজার
• কলিকাতায় কলেরার টিকা দেওয়ার কাজে শৈথিল্য: এক পক্ষকাল হইল কলিকাতায় কলেরা মহামারীরূপে ঘোষিত হইয়াছে।কিন্তু ইহা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত মহানগরীর শতকরা ৫০ জনকেও কলেরার টীকা দেওয়া হয় না বলিয়া জানা যায়।
অন্যান্য বছর জুন মাসের মধ্যে মহানগরীতে ২০ হইতে ২৫ লক্ষ লোককে কলেরার টীকা দেওয়া হইয়া থাকে। এবছর এত কম লোককে টীকা দেওয়া হইয়াছে সে সম্পর্কে রাজ্য সরকারের নিকট কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ যুক্তিসঙ্গত কোনও কারণ দেখাইতে পারেন নাই বলিয়া প্রকাশ।
এই অবস্থায় রাজ্য সরকার কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে ৪০ জন টীকাদার দিতে রাজি হইয়াছেন। ইতিমধ্যেই কর্পোরেশনের বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্ট হেলথ্ অফিসারের সহয়োগিতায় রাজ্য সরকার ১৫০ জন টীকাদার কাজ সুরু করিয়াছেন। মোট ৩০ লক্ষ লোকের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৪,৭০,০০০ লোককে কলেরার টীকা দেওয়া হইয়াছে। • কলিকাতায় পানীয় জলের সমস্যা: অনেকেই মনে করিতেছেন বাহাত্তর ইঞ্চি জলের পাইপ বসালোর কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানীয় জলের সমস্যা সম্পর্কে তাঁহাদের যে ‘ভাবনা’ তাহা চিরতরে দূরূভূত হইবে। কারণ কর্পোরেশনের পক্ষ হইতে নাকি বলা হইয়াছে যে, ঐপাইপের মাধ্যমে বর্তমান অপেক্ষা প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ জল সরবরাহ করা সম্ভবপর হইবে। আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে ঐ পাইপ বসানোর কাজ শেষ হওয়ার কথা।
কিন্তু তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে ঐ ধারণা ঠিক নহে। উক্ত মহলের আলোচনায় প্রকাশ পলকায় নতুন পানীয় জলের শোধনাগারটি নির্মান না হওয়া পর্যন্ত মহানগরীতে এক ফোঁটা জল বেশী পাওয়া যাইবে না। ঐ শোধনানাগার নির্মানের কাজে এখনও হাত দেওয়া হয় নাই বলিয়া জানা যায়। অথচ অতিরিক্ত পরিশ্রুত জল রাখিবার জন্য আ শোধনাগার নির্মান করা একান্ত প্রয়োজন বলিয়া অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
• বিধানচন্দ্র স্মৃতি রক্ষা তহবিলে বরিবার পর্যন্ত ৭ লক্ষ টাকা সংগ্রহীত: ডাঃ বিদানচন্দ্র রায় স্মৃতিরক্ষা তহবিলে বরিবার পর্যন্ত প্রায় ৭ লক্ষ টাকা সংগৃহীত হইয়াছে। রবিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে অনুষ্ঠিত স্মৃতিরক্ষা কমিটির প্রথম বৈঠকে কমিটির তহবিলে এ পর্যন্ত ঐ পরিমাণ অর্থ সংগৃহীত হইয়াছে বলিয়া জানানো হয়।
বৈঠকে কমিটির পক্ষ হইতে ঐ তহবিলে দেশবাসীকে মুক্তহস্তে দান করিবার অনুরোধ জানাইয়া এক আবেদন প্রচার করা হয়।
ঐদিন একজন দাতা কর্তৃক এক লক্ষ টাকা স্মৃতিরক্ষা তহবিলে দালের কথা ঘোষণা করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন জানান যে, শ্রী এন ডি বাঙ্গুর ঐ তহবিলে এক লক্ষ টাকা দানের প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন।
• গ্রাম শহরের সামঞ্জস্য রাখিয়া বাংলার সমুন্নতি: পশ্চিমবঙ্গের নতুন মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন সোমবার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী রূপে তাঁহার প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে এইরূপ ঘোষণা করেন যে, রাজ্যের পল্লী এবং শহরাঞ্চল সম্পর্কে তাঁহারা একটা সামঞ্জস্য রক্ষা করিয়া একই সঙ্গে উন্নয়ন কাজগুলি চালাইয়া যাইতে চাহেন।
ডাঃ রায়ের পরলোকগমনের পর কলিকাতা মেট্রোপলিটান পরিকল্পনা সংস্থার (সি-এম-পি-ও) ভবিষ্যত্ সম্পর্কে কোন কোন মহলে যে সামান্য সংশয়ের সৃষ্টি হইয়াছিল তাহার নিরসন করিয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসেন বলেন যে, তাঁহারা ঐ পরিকল্পনার কাজ শেষ করিতে চাহেন।
স্বর্গত নেতা ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের নীতিই তাঁহারা অনুসরণ করিতে চাহেন, এইরূপ সুস্পষ্ট মন্তব্য করিয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসেন আরও বলেনযে, ডাঃ রায়ের উন্নয়নমূলক পরিকল্পনাগুলি বাস্তবে রূপায়িত করিয়া যে উন্নততর বাংলা গড়িয়া তুলিবার জল্য তিনি(ডাঃ রায়) সারাজীবন কাজ করিয়াছেন, সেই লক্ষ্যের প্রতি অগ্রসর হওয়াই তাঁহাদের কাজ হইবে।
• কলিকাতার কলেজ সমুহে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সমস্যা: কলিকাতার কলেজসমুহে ছাত্রভর্তি সমস্যা সম্পর্কে ছাত্র ও অভিভাবকমহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হইয়াছে। গত বত্সরের মত এবারও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমস্যাটির মোকাবিলার জ্লয প্রস্তুত হইতেছেন। প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর সমস্যা জটিলতর হইবে বলিয়া অশঙ্কা করা হইতেছে।
ইতিমধ্যে বৃহত্ কলেজগুলিতে প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় শ্রেনী এবং তিন বত্সরের ডিগ্রীকোর্সের প্রথম বার্ষিক শ্রেনীতে ভর্তির ব্যাপারে জায়গা নাই রব উঠিয়াছে, বাছিয়া বাছিয়া ছাত্র ভর্তির হিড়িক পড়িয়াছে। ফলে কম নম্বর পাইয়া যাহারা পাশ করিয়াছে, তাহাদের কলেজে কলেজে ধর্ণা দিতে হইতেছে বলিয়া খবর পাওয়া যাইতেছে। ইউ-জি-সি’র পরিকল্পনা অনুসারে এবারও বৃহত্ কলেজগুলিতে আসনের সংখ্যা কিছু কমান হইয়াছে বলিয়া জানা যায়।
এ সম্পর্কে বৃহস্পতিবার ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের(ডি এস ও) পক্ষ হইতে একটি বিবৃতি দেওয়া হইয়াছে।উহাতে বলা হইয়াছে, ‘‘ বিগত কয়েক বত্সরের ন্যায় এই বত্সরও বহু সংখ্যক ছাত্রছাত্রী বিভিন্ কলেজে স্থানাভাবের জন্য শিক্ষার সুযোগ হইতে বঞ্চিত হইতে চলিয়াছে। • বাতিল না করিয়া সরকার পৌরসভার ক্ষমতা দখল করিতে পারেন না: রাজ্য সরকার কলিকাতা কর্পোরেশনের কিছু কিছু ক্ষমতা খাড়িয়া লইতে উদ্যোগী হইয়াছেন বলিয়া যো খবর সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহাতে কর্পোরেশনের কাউন্সিলার মহলে গভীর অসন্তোষের সৃষ্টি হইয়াছে।
এই দিন কর্পোরেশনে কংগ্রেস ও বিরোধী অউ সি সি দলের কোন কাউন্সিলারের আলাপ আলোচনায় ঐ অসন্তোষ প্রকাশ পায়।
মোয়র শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদার এক সাক্ষাত্কারে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিনিধির নিকট জানান যে, কর্পোরেশন বাতিল ঘোষণা না করিয়া রাজ্য সরকার কর্পোরেশনের কোন একটি বিশেষ দপ্তরের পরিচালনার ভার নিজ হাতে লইতে পারেন না। তিনি বলেন, প্রয়োজন হইলে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের সহিত বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ আলোচনা করিতে পারেন। রাজ্য সরকার মনে করিলে আবর্জনা পরিষ্কার করিবার জন্য কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে স্থায়ী এমম্বুলেন্স ইত্যাদি দিয়া সাহায্য করিতে পারেন।
পরিশেষে মেয়র শ্রী মজুমদার বলেনয, রাজ্য সরকার কর্পোরেশন বাতিল না করিয়া কর্পোরেশনের কোন দপ্তরের পরিচালনার ভার লইলে তিনি ইহাতে ঘোর আপত্তি করিবেন।
মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন রবিবার সকালে লবন হ্রদ উদ্ধার কার্য পরিদর্শন করেন।
চিত্রে উপমন্ত্রী শ্রীমতী মায়া বন্দ্যোপাধ্যায়, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন মন্ত্রী শ্রীশৈল মুখোপাধ্যায়
ও জনৈক যুগোস্লাভ বিশেষজ্ঞকেও দেখা যাইতেছে। ফটো: আনন্দবাজার
• লবন হ্রদ উদ্ধার কার্য: রবিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন লবন হ্রদ উদ্ধারকার্য পরিদর্শন করেন। চিত্পুর লেকের নিকট যেখান হইতে বালি জলের সঙ্গে মিশাইয়া পাম্পের সাহায্যে হ্রদ এলাকায় চালান করা হইতেছে তিনি সেই স্থানটিও পরিদর্শন করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সহিত পূর্ত-মন্ত্রী শ্রীখগেন দাশগুপ্ত ও শ্রীশৈলকুমার মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন।
উদ্ধারকার্যের পর ঐ এলাকায় সতি স্থাপনের যে প্ল্যান তৈয়ারী হইতেছে শ্রীসেন বিশেষ আগ্রহ সহকারে তাহা লক্ষ্য করেন। কয়েকজন অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার বর্তমানে ঐ প্ল্যানটি তৈয়ারী করিতেছেন।
এখন পর্যন্ত ৬০ একর এলাকা উদ্ধার করা হইয়াছে। মোট পৌণে চার বর্গ মাইল অথবা ২৪১৩ একর এলাকা উদ্ধার করিবার প্রস্তাব আছে। উদ্ধারকার্যের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসমুহ যুগোস্লাভিয়া ও জাপান হইতে আনা হইয়াছে।
• শিশু হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব: ডাঃ বিধানচ্ন্দ্র রায়ের স্মৃতিরক্ষার্থে যে একটি শিশু হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব হইয়াছে, প্রধানমন্ত্রী শ্রীজওহরলাল নেহরু তাহা সমর্থন করিয়া প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শ্রীঅতুল্য ঘোষের নিকট একখানি পত্র প্রেরণ করিয়াছেন। নন্দীপাহাড় হইতে ১৫ই জুলাই তারিখে লিখিত পত্রে শ্রী নেহরু শিশু হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাবটি ডাঃ রায়ের স্মৃতিরক্ষায় উপযুক্ত ব্যবস্থা বলিয়া মন্তব্য করিয়াছেন।
শ্রী নেহরু তাঁহার পত্রে বলেন যে, ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের স্মৃতিতে এমন একটি সংস্থা গড়িয়া তোলা উচিত, যাহা তাঁহার লক্ষ্য ও আদর্শের উপযোগী হয়। ডাঃ রায়ের স্মৃতিরক্ষার ব্যাপারে পশ্চিম বাঙ্গলার জনসাধারণ নিঃসন্দেহে আগ্রহশীল হইবেন, কিন্তু স্মৃতিরক্ষা তহবিলে দানের আবেদন শুধু পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রাখিয়া সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে উহা প্রচার করা কর্তব্য।
• মহানগরীতে আবর্জনার বিরুদ্ধে অভিযানের উদ্যোগ: মহানগরীতে আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে সহায়তা করিবার জন্য বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর এক হাজার সদস্য কলিকাতায় পৌঁছিয়াছেন। দুর্গাপুর, মাজদিয়া, বনগাঁ এবং বসিরহাট হইতে তাঁহাদের আনা হইয়াছে। শনিবার সকাল হইতে ইঁহারা কাজ শুরু করিবেন।
টালা পার্কে সৈন্যবাহিনীর পরিত্যক্ত শিবিরে সাতশত এবং তারাতলা শিবিরে তিনশত সদস্যের থাকিবার ব্যবস্থা করা হইয়াছে। আজ তাঁহারা সকলে কলেরার টীকা লন।
বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী তাঁহারা শনিবার (২১শে জুলাই) সকাল সাড়ে পাঁচটার সময় এক এবং চার নম্বর ডিস্ট্রিক্টে কাজ শুরু করিবেন। মোট একশতখানি লরীর মধ্যে ৬৫খানি টালা পার্কের সদস্যদের কাজ করিবার জন্য এবং বাকী ৩৫খানি তারাতলা শিবিরের সদস্যদের কাজের জন্য দেওয়া হইবে। প্রত্যেক লরীতে একজন করিয়া গ্রুপ অফিসার থাকিবেন। তাণহার অধীনে থাকিয়া পাঁচজন সদস্য কাজ করিবেন। ঐ সকল সদস্য সকালে কাজে বাহির হইবার পূর্বে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড অফিসে হাজির হইবেন।
মসলা নিকেতন
নয়নাভিরাম এই বাগানবাড়ীর মডেলটি তৈরী হইয়েছে দারুচিনি প্রভৃতি মসলাযোগে। ইঁট কাঠের বদলে যে সব মসলা এখানে ব্যবহৃত হইয়াছে তার মধ্যে আছে দারুচিনি ছাড়াও তেজপাতা, লবঙ্গ, ছোট এলাচ, বড় এলাচ, সুপারি এবং মৌরি। তৈরী করিয়াছেন ২১নং জয়নারায়ণ টি পি লেন, নারিকেলডাঙ্গার শ্রীশৈলেন্দ্রনাখ মিত্র। ফটো: আনন্দবাজার
আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল প্রবন্ধের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website
may be copied or reproduced without permission.