কিছুতেই ছন্দে ফিরছে না মহানগরের আবহাওয়া! সঙ্গে আমজনতার স্বাস্থ্যও।
রাস্তা হোক বা মেট্রোর কামরা। কমবেশি সবাই খুকখুক করে কাশছেন। কেউ বা নাক টানছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের সময়ে এটা পরিচিত ছবি। কিন্তু এ বছর যেন তার প্রকোপটা বেশি। এবং এর পিছনে দায়ী আবহাওয়ার ঘনঘন পরিবর্তন।
বস্তুত, এ বার শীতের মরসুমেও সে ভাবে টানা ঠান্ডা মেলেনি। পৌষ-মাঘেও বারবার তাপমাত্রার ওঠানামায় সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হন শহরবাসী। দিন কয়েক আগে দক্ষিণবঙ্গ থেকে শীত বিদায় নিয়েছে। কিন্তু আবহাওয়ার পরিবর্তন বা অসুখ পিছু ছাড়েনি।
গত রবিবারই দক্ষিণবঙ্গ তথা রাজ্য থেকে শীতের বিদায়-বার্তা ঘোষণা করেছে হাওয়া অফিস। তার পর থেকে দিনের তাপমাত্রা বাড়ছিল। কিন্তু গভীর রাত কিংবা ভোরে ঠান্ডা-ঠান্ডা ভাবটা রয়েই গিয়েছে। এতেই বাড়ছে রোগের প্রকোপ। যে প্রকোপ আরও বাড়াতে পারে আবহাওয়ার পরিবর্তন।
বৃহস্পতিবার হাওয়া অফিস বলেছে, মধ্য ভারতে একটি ঘূর্ণাবর্ত আছে। সেখান থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত এক নিম্নচাপ অক্ষরেখাও। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “নিম্নচাপ অক্ষরেখার জেরেই আকাশ মেঘলা। শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গের কোনও কোনও জেলায় বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।” হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, বুধবার রাতে পুরুলিয়া জেলায় বৃষ্টি হয়েছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের সময়ে এমনিতেই নানা রোগের ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া সক্রিয় হয়ে ওঠে। তার উপরে আবহাওয়ার ঘনঘন পরিবর্তন রোগের প্রকোপ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। সাধারণত, সন্ধ্যার পর থেকে গরম-গরম ভাব দেখে অনেকেই ঘরে ফ্যান বা এসি চালিয়ে রাখছেন। রাতে ঘুমোনোর সময়েও তা বন্ধ করছেন না। ফলে গভীর রাতে কিংবা ভোরে তাপমাত্রা আরও কমলে চট করে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। রোদ থেকে ঘরে ঢুকে ঠান্ডা জল কিংবা পানীয় খেয়েও ঠান্ডা লাগছে অনেকের।
চিকিৎসক প্রবীর বিশ্বাস বলছেন, “বেশির ভাগ রোগীই জ্বর-কাশি নিয়ে আসছেন। সঙ্গে গলাব্যথা।” ইদানীং প্রবীরবাবুর কাছে বেশ কিছু ডায়েরিয়ার রোগীও এসেছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, রোদে বেরিয়ে অনেকেই রাস্তাঘাটে অপরিস্রুত জল খাচ্ছেন। তা থেকেই ছড়াচ্ছে ডায়েরিয়া।
বাড়ছে শ্বাসনালির রোগও। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এসএসকেএমের চিকিৎসক জয়ন্ত দাশগুপ্ত বলেন, “ঋতু পরিবর্তনের সময়ে হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টের রোগীদের সমস্যা বাড়ে।”
চিকিৎসকদের পরামর্শ, এ সময়ে রোগ এড়াতে সাবধান হতে হবে। রাতে ঘুমোনোর সময়ে ফ্যান বা এসি না চালান। জ্বর হলে প্যারাসিটামল খান। দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাবেন না। তাতে সমস্যা বাড়তে পারে। রাস্তায় অপরিস্রুত জল এড়িয়ে চলুন। |