চিকিৎসক, নার্সদের মারধরের অভিযোগ
রোগী মৃত্যু, ধুন্ধুমার হাসপাতালে
লা হয়েছিল দু’টিকেই ‘মাল্টিসুপার স্পেশ্যালিটি হসপিটাল’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণার এত দিন পরেও জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দু’টি হাসপাতালের যে তেমন ভোল পাল্টায়নি, বারবার সেই অভিযোগ তুলেছেন রোগী থেকে স্থানীয় বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার দুই রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ-বিক্ষোভে তেতে ওঠা রামপুরহাট ও বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল কার্যত সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিল। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ তুলে রীতিমতো হাঙ্গামা করলেন বিক্ষোভকারীরা। মারমুখী জনতার হাতে আক্রান্ত হলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এমনকী, অন্তঃসত্ত্বা এক নার্সকেও মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ।
বিক্ষোভকারীরা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুললেও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাবকেই দুষছেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। অভিযোগ, ঘোষণা অনুযায়ী পরিকাঠামো গড়ে তোলা দূরঅস্ত, যত দিন যাচ্ছে দু’টি হাসপাতালেরই মান ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে। কিন্তু, এত দিন বিক্ষোভ সামলে নিলেও এ দিন রোগীর পরিজনদের আক্রমণের মুখে পড়ে দু’টি হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও রীতিমতো ক্ষুব্ধ চিকিৎসক, নার্স। এক দিকে, তাঁরা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা চেয়ে সুপারকে ঘেরাও করলেন। অন্য দিকে, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা না পেলে কাজে যোগ দেবেন না বলে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিলেন আক্রান্ত চিকিৎসক। বস্তুত, ঘটনা দু’টিকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখতে নারাজ জেলার চিকিৎসক মহল। তাঁদের দাবি, এ দিনের ঘটনা জেলার বেহাল স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার প্রতিই ইঙ্গিত করছে।
নিরাপত্তা চেয়ে বোলপুরে সুপারকে ঘেরাও করেন চিকিৎসক ও নার্সরা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
জেলার সিএমওএইচ কার্তিক মণ্ডল বলেন, “জেলায় এই মুহূর্তে আরও ১৪০ জন চিকিৎসক দরকার। প্রয়োজনের তুলনায় সংখ্যা কম নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরও। স্বাভাবিক ভাবেই গোটা স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার উপর চাপ পড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো চিকিৎসক বা নার্স পরিস্থিতি সামলাতে পারছেন না। কিন্তু তার মানে এই নয় তাঁদের আক্রমণ করতে হবে। রোগীর পরিজনদের সহিষ্ণু হওয়া দরকার।”
বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের ঘটনায় এ দিনই সকালে সর্দি ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয় বোলপুরের মাস পাঁচেকের রাজদীপ বাগদি। ভর্তির পরে শিশুটিকে পরীক্ষা করেন হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ তন্ময় মণ্ডল। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই রাজদীপ মারা যায়। ওই শিশুর মৃত্যুর পরেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের পরিজন। হাসপাতাল চত্বরে শুরু হয় বিক্ষোভ। অভিযোগ, এক সময় বিক্ষোভকারীরা তন্ময়বাবুকে মারধর করে ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ে। সেখানে আক্রান্ত হন কর্তব্যরত নার্সেরাও। মার খান অপর্ণা পোড়েল, শোভা কৈবর্ত্য, মহিলা ও শিশু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সিস্টার-ইন-চার্জ মল্লিকা ঘোষাল। মল্লিকাদেবী অন্তঃসত্ত্বা, অভিযোগ তাঁকেও বাদ দেওয়া হয়নি। এর পরেই নিরাপত্তার দাবিতে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত হাসপাতাল সুপার প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যকে ঘেরাও করে রাখেন চিকিৎসক ও নার্সদের একাংশ। উপস্থিত হন মহকুমার সহ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়ন্ত শুকুল, বোলপুর থানার পুলিশ। পরে পুলিশ মোতায়েনের আশ্বাসে ঘেরাও উঠে যায়।
ওই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় রোগীর পরিবার কোনও লিখিত অভিযোগ করেনি। গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে তন্ময়বাবুর দাবি, “খবর পেয়েই ওই শিশুর চিকিৎসা শুরু করি। পরে আরও তিন বার গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। অবস্থা অবনতি হওয়ায় ১১টা নাগাদ বাড়ির লোকেদের শিশুটিকে বর্ধমান মেডিক্যালে স্থানান্তর করতে বলি।” গোটা ঘটনায় সিএমওএইচ-এর নির্দেশে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জয়ন্তবাবু বলেন, “তন্ময়বাবু যত দিন না কাজে যোগ দিচ্ছেন, তত দিন অন্য দুই চিকিৎসককে শিশু বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।” অন্য দিকে, প্রদীপ্তবাবু বলেন, “শুধু চিকিৎসক-নার্সদের মারধরই নয়, হামলাকারীরা হাসপাতালের পরিষেবাও বিপর্যস্ত করেছে। থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। পুলিশের কাছে নিরাপত্তাও চেয়েছি।” দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বান দিয়েছেন এসডিপিও (বোলপুর) সূর্যপ্রতাপ যাদব।
এ দিনই রোগী মৃত্যুকে ঘিরে হাঙ্গামার দ্বিতীয় ঘটনা রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে। এ ক্ষেত্রেও রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে কর্তব্যরত এক নার্সের উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুধবার সকালে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে চিকিৎসক আনন্দ মণ্ডলের অধীনে ভর্তি হন নলহাটির নবগ্রামের বাসিন্দা নিশানাথ মুখোপাধ্যায় (৫৭)। এ দিন সকালেই তিনি মারা যান। আত্মীয় গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “দেড় ঘণ্টা ধরে রোগী কষ্ট পাচ্ছিলেন। কিন্তু কোনও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি।” তাঁর মৃত্যুর কথা জানতে পেরেই রোগীর পরিজনেরা হাসপাতালে হাঙ্গামা শুরু করেন বলে অভিযোগ। কর্তব্যরত নার্স অনিমা সর্দার বলেন, “রোগীর পরিজনেরা হাত ধরে টানা হিঁচড়া শুরু করেন। গালিগালাজ করে মারতে উদ্যত হন। অন্য নার্সেরা এসে আমাকে বাঁচান।” এ ক্ষেত্রেও রোগীর পরিবার লিখিত অভিযোগ করেনি। অন্য দিকে, আনন্দবাবু বলেন, “রাতে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত ওই রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে বর্ধমানে রেফার করা হয়। কিন্তু পরিবার তাঁকে নিয়ে যায়নি।” এ দিকে নিগ্রহের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের একটা বড় অংশ। বোলপুরের মতোই তাঁরাও নিরাপত্তার দাবি তুলেছেন। হাসপাতাল সুপার হিমাদ্রি বলেন, “নিরাপত্তা কর্মী বাড়ানোর জন্য বহুবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি। হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ ক্যাম্পের অনুরোধও জানিয়েছি।” কোনওটিই এখনও কার্যকর হয়নি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.