উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ। আগামী আর্থিক বছরে ব্লকগুলি উন্নয়নের গতি কতটা স্বাভাবিক থাকবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিষদ কর্তারা। অভিযোগ উঠেছে, রাজ্যের একমাত্র বামফ্রন্ট পরিচালিত জেলা পরিষদকে বিপাকে ফেলতে ওই পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। সঙ্কট এড়াতে আগের মতো ফের উন্নয়ন পর্ষদের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ দিতে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ।
জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি নুরজাহান বেগম বলেন, “সম্প্রতি রাজ্য সরকার উন্নয়ন পর্ষদ থেকে আর কোনও আর্থিক সাহায্য করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। চিঠি পেয়ে আমরা হতাশ হয়েছি। ওই সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কেমন করে কাজ চলবে বুঝতে পারছি না।” তিনি জানান, চিঠি পাওয়ার পরেসরকারের কাছে ওই বরাদ্দ বন্ধ না করার আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সোমবারের বাজেট অধিবেশনেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। দ্রুত চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামাঞ্চলের পাকা রাস্তা, সেচখাল, সেতু ও স্কুল বাড়ি নির্মাণ সহ বিভিন্ন প্রকল্পে ২০১২-২০১৩ সালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা মিলেছিল। সেটা কমতে কমতে ২০১৩-১৪ সালে সেটা দাঁড়ায় ৫২লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা। ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরের বাজেটে এ খাতে টাকা পাওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জেলা পরিষদ কর্তাদের অভিযোগ, গ্রামস্তরে উন্নয়নের বিভিন্ন কাজ জেলা পরিষদকে করতে হয়। গ্রামবাসীর সঙ্গে পরিষদ সদস্যদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও তাঁদের মাধ্যমে প্রচুর প্রকল্প উঠে আসে। জেলা পরিষদ ওই প্রকল্পে কিছু কাজ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের আর্থিক সাহায্যে হত। সেই কাজ বন্ধ হলে ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় সমস্যা হবে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দ বন্ধ হওয়ায় রাজনৈতিক মহলেও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সলিল আচার্য বলেন, “রাজ্যে বামফ্রন্টের দখলে থাকা একমাত্র জেলা পরিষদকে আর্থিক দিক থেকে অকেজো করার জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদকে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। আমরা দলগতভাবে রাজ্য সরকারকে তাঁদের সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনা করে ফের আগের মতো উন্নয়ন পর্ষদের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য জেলা পরিষদকে আর্জি জানাতে বলেছি।” একই বঞ্চনার সুর কংগ্রেস নেতৃত্বের গলাতেও। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ঘোষ দোস্তিদার বলেন, “বামফ্রন্ট সরকারের সময় বঞ্চনা হলেও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ সচল ছিল। জেলা পরিষদ কিছু হলেও টাকা পেয়েছে। পঞ্চায়েতগুলি জানতে পারত তাঁরা রাস্তা বা নিকাশি ব্যবস্থার জন্য কত টাকা পাচ্ছে। এখন পর্ষদের নাম শোনা যায় না।” বঞ্চনার নালিশ মানতে নারাজ জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “বঞ্চনার কিছু নেই। রাজ্য নয়া পরিকাঠামো, ইঞ্জিনিয়ারিং সেল নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর তৈরি করেছে। তাঁরা যদি মনে করে থাকেন নিজেরা কাজ করতে পারবেন, তা হলে জেলা পরিষদের কাঁধে কেন তারা বোঝা চাপাবেন?” |