নেপাল থেকে প্রতিদিনই চোরাপথে চিনা পণ্য ঢুকছে শিলিগুড়িতে। অভিযোগ উঠেছে, বিনা শুল্কের পণ্যের দাপটে মার খাচ্ছে অপেক্ষাকৃত বেশি মূল্যের ভারতীয় পণ্য। রেলপথে এই পণ্য ঢুকছে শিলিগুড়িতে। এই পণ্য আনতে ব্যবহার করা হচ্ছে নকশালবাড়ি-শিলিগুড়ি জংশন রুটের সমস্ত ট্রেনগুলিকে। ‘ক্যারিয়ার’ বা বাহক দিয়ে এই চিনা পণ্য শহরে ঢুকছে। আর এই পণ্য আমদানিতে পুলিশের একাংশ পাচারকারীদের প্রত্যক্ষ মদত দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায়ীদের তরফে। পুলিশের পক্ষ থেকে পাচারের সমস্যার কথা স্বীকারও করা হয়েছে। তবে নজরদারির অভাবের বিষয়টি অবশ্য স্বীকার করতে চাননি। শিলিগুড়ির রেল পুলিশের সুপার উজ্জ্বল ভৌমিক বলেন, “সব সময় আমাদের নজরদারি চলে। মাঝে মধ্যেই অভিযান চালিয়ে প্রচুর পণ্য উদ্ধার করা হয়। তবে কর্মীর অভাব থাকায় মাঝে মধ্যে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।”
তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনও বাহকই গ্রেফতার হন না বলে অভিযোগ। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, পুলিশ ইচ্ছে করেই এদের গ্রেফতার করে না। বিধান মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, “অনেকে চিনা পণ্যই বেশি বিক্রি করেন। কারণ এর কোনও বিক্রয়মূল্য থাকে না। লাভও আকাশছোঁয়া।” অন্য আর এক ব্যবসায়ী বলেন, “এইসব মালের প্রতিই আমাদের আগ্রহ বেশি। কারণ পুরোটাই চোরাই। কিনতে হয় অর্ধেকের কম দামে। দেখতেও হুবহু নামী ব্র্যান্ডের মতই। ফলে মানুষের মধ্যে চাহিদাও বেশি।” এক ব্যবসায়ী স্বীকারও করে নিলেন, “নানা জায়গায় ভাগ দিয়েও যা থাকে তাতেও ভালই লাভ হয়।”
পুলিশেরই একটি সূত্রের খবর, এইসব পণ্য নেপাল থেকে এনে প্রতিদিন নকশালবাড়ি থানায় হাজিরা দিয়ে স্টেশনে জমা করা হয়। এরপর ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়, শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে। নকশালবাড়ি স্টেশনে দিনে মোট পাঁচটি ট্রেন দাঁড়ায়। আলুয়াবাড়ি-নিউ জলপাইগুড়ি, কাটিহার-শিলিগুড়ি জংশন, রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট-নিউ জলপাইগুড়ি, কাটিহার-শিলিগুড়ি প্যাসেঞ্জার। এই ট্রেনগুলি নকশালবাড়ি স্টেশনে এলেই পুলিশের মদতেই প্রতিটি কামরায় বোঝাই হয়ে যায় পেল্লাই সাইজের বস্তা ও কাপড়ের পুঁটুলিতে। কখনও যাত্রীরা আপত্তি করলে, ওইসব চোরাই মাল লোহার শিক বাঁকিয়ে তৈরি হুক দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় জানালার গায়ে। বাহকের কাজে মহিলারাই বেশি যুক্ত। এ বিষয়ে দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “আমার এই বিষয়টি জানা নেই। বিশদে খোঁজ নিয়ে দেখব।” নিউ জলপাইগুড়ি যাত্রী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দীপক মহান্তি অভিযোগ করেন, “এইসব পণ্য আমদানি করতে গিয়ে প্রতিদিন পুলিশের সঙ্গে দর কষাকষি চলে বাহকদের। দরে না পোষালে মহিলা বাহকদের মারধরও করেন তাঁরা।” এক বাহক নিজেই জানালেন, “ট্রেনের আয় থেকে লাভের ভাগ পান বিভিন্ন থানার অফিসাররাও। তাঁদের সঙ্গে দরে না পোষালে পণ্য লুঠ করে নেন তাঁরা। ফলে পুলিশকে সমঝে চলতে হয়।” শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন পাচারের বিষয়ে জানেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি গোটা ব্যপারটি খতিয়ে দেখব।” শুধু শিলিগুড়িই নয় জংশন থেকে বাসে করে পণ্য চলে যায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। উত্তরবঙ্গের বালুরঘাট, রায়গঞ্জ, জয়গাঁ, বীরপাড়া, ধূপগুড়িতে চিনা পণ্যের চাহিদা রয়েছে। |