গাঁ-গঞ্জ থেকে খেলোয়াড় তুলে আনতে পাড়ার ক্লাবগুলিকে আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। একই কারণে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে আর্থিক অনুদান পাচ্ছে রাজ্যের সব ক’টি ব্লক। সেই তালিকায় নবতম সংযোজন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়।
রাজ্যের যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছেন, খেলাধুলোর সাজসরঞ্জাম কেনা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য রাজ্যের ১০ হাজার ১৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। শুধু সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এই সাহায্য পাবে।
পাড়ার ক্লাবকে সরকারি অনুদান দেওয়ার সময়েও তার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এ বার প্রশ্ন উঠেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অর্থসাহায্য কেন?
অরূপবাবুর ব্যাখ্যা, “এক সময় এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের স্কুল-কলেজ থেকে খেলোয়াড় উঠে আসত। সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আবার সেই ব্যবস্থাকেই চাঙ্গা করার চেষ্টা হচ্ছে।” প্রশাসনের একটি অংশের মতে, শিক্ষা ক্ষেত্র, বিশেষত স্কুল পর্যায়ে শারীরশিক্ষা একটি আবশ্যিক বিষয়। বিভিন্ন জেলায় এমন অনেক স্কুল আছে, যাদের খেলার জায়গা থাকলেও ক্রীড়া-সরঞ্জাম নেই। অর্থের অভাবে ওই ধরনের স্কুল হয়তো একটা ফুটবল, একটা ক্রিকেট ব্যাটও কিনতে পারে না। সরকারের এই অর্থসাহায্যের পরিকল্পনা সেই সব স্কুলের পড়ুয়াদের উৎসাহিত করবে। শহরাঞ্চলে যে-সব স্কুলের খেলার মাঠ নেই, তারা ‘ইন্ডোর’ খেলাধুলোর সাজসরঞ্জাম কিনতে পারবে সরকারি টাকায়। পাড়ার ক্লাবকে অনুদান দেওয়ার সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই টাকা পাঠানোর তুলনাও করছেন এক শ্রেণির সরকারি কর্তা। নবান্নের কারও কারও মতে, কার্যত কোনও বাছবিছার না-করেই যে-ভাবে ক্লাবগুলিকে টাকা দেওয়া হচ্ছে, তা এক রকম জলেই যাচ্ছে। এতে খেলাধুলোর উন্নতির আশা কম। তার চেয়ে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সাহায্য করাটা অনেক ভাল সিদ্ধান্ত।
আর্থিক বছর শেষ হওয়ার আগের মাসে মন্ত্রীর এই অনুদান ঘোষণার পিছনে অবশ্য ভোটের অঙ্কও দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দিতে পারবেন না বলে মাত্র কয়েক দিন আগেই তাঁদের জন্য আবাসন ও স্বাস্থ্য বিমায় বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ঘোষণায় রাজ্য মন্ত্রিসভার সিলমোহর পড়তেও সময় লাগেনি। প্রশাসনের একটি অংশের মতে, সেই পথেই অনুদানের তালিকায় এ বার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করে ভোটের বাজারে সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছে শাসক গোষ্ঠী। সরকারের উদ্দেশ্য ইতিবাচক হলে অনেক আগেই এই ঘোষণা করা যেত বলে মনে করেন তাঁরা। অরূপবাবুর কথায়, “মার্চের মধ্যেই সব টাকা বরাদ্দ করে দেওয়া হবে।”
কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কত পাবে?
যুবকল্যাণ মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ৯৬৩১টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল পাঁচ হাজার, ৪৯৯টি কলেজ ১০ হাজার এবং ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় ২৫ হাজার টাকা করে সাহায্য পাবে। জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির টাকা জেলাশাসকের মাধ্যমে দেওয়া হবে। কলকাতার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাওনা টাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষা দফতরের হাতে। সরকারি সাহায্যে নিজেদের প্রয়োজনমতো ইন্ডোর বা আউটডোর খেলার সরঞ্জাম কিনতে পারবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি।
খেলাধুলোর সরঞ্জাম বাবদ এ বারেও আর্থিক অনুদান পাচ্ছে রাজ্যের সব ব্লক, কলকাতা-সহ সব পুরসভা এবং নোটিফায়েড সংস্থা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই গত বারের চেয়ে অনুদান বাড়ানো হয়েছে। এ বারেও মার্চের মধ্যে সাহায্য পেয়ে যাবে সব সংস্থা। তবে সরাসরি নয়, নগদেও নয়। জেলাশাসকের মাধ্যমে সরঞ্জাম কিনে দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রী জানান, নিয়ম অনুযায়ী ওই সব সংস্থার সঙ্গে কথা বলে স্থানীয় বিধায়ক জেলাশাসকের কাছে সরঞ্জামের তালিকা পেশ করেন। সেই অনুযায়ী জেলাশাসক তা কিনে সংশ্লিষ্ট সংস্থায় পাঠিয়ে দেন।
|
এভারেস্ট অভিযানে ন’জনকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দিল রাজ্যের যুবকল্যাণ দফতর। বৃহস্পতিবার নবান্নে ওই দফতরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ন’জন পর্বতারোহীর হাতে চেক তুলে দেন। অভিযান সফল হলে তাঁদের নাগরিক সংবর্ধনা এবং আরও এক লক্ষ টাকা করে নগদ পুরস্কার দেওয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, “অভিযাত্রী দল নির্বাচনের জন্য আমরা একটি পরামর্শদাতা কমিটি গঠন করেছি। তাদের সুপারিশ মেনেই টাকা দিচ্ছে সরকার।” |