শব্দ-বিধি ভেঙে মাধ্যমিকের মধ্যেই লাউডস্পিকার বাজিয়ে হল সরকারি অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার সাঁতুড়ির ঘটনা।
অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কারিগরি শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী উজ্জল বিশ্বাস, স্থানীয় বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি, সংশ্লিষ্ট দফতরের অধিকর্তা, রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক এবং সাঁতুড়ির বিডিও। মন্ত্রী, বিধায়কের নিরাপত্তার জন্য সভাস্থলে উপস্থিত পুলিশও। এ দিন দুপুরে এই অনুষ্ঠান করেই সাঁতুড়িতে প্রস্তাবিত আইটিআই-এর শিলান্যাস করেন কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী। হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ, পরীক্ষা চললে কোনও ভাবেই মাইক বাজানো যাবে না। বক্স ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে কোনও ঘেরা জায়গায়। সাঁতুড়ির বাসিন্দাদের একাংশের তাই প্রশ্ন, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে দু’টি করে সাউন্ডবক্স ও মাইক বাজিয়ে বিধি ভাঙলেন মন্ত্রী, বিধায়ক ও সরকারি আধিকারিকেরা। অনুষ্ঠানের শেষে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উজ্জ্বলবাবুর যুক্তি, “ফাঁকা এলাকায় অনুষ্ঠান হয়েছে। তা ছাড়া, এলাকায় কোনও পরীক্ষাকেন্দ্র নেই।” |
কিন্তু, মাধ্যমিকের মধ্যে মাইক বাজিয়ে কি বিধি ভাঙা হল না? মন্ত্রীর জবাব, “মানুষের মঙ্গলের জন্যই এই অনুষ্ঠান। আর মানুষের মঙ্গলের জন্য দুটো কথা বলতে পারব না, তা তো হয় না! যারা মাধ্যমিক দিতেই পারছে না, তাদের ভবিষ্যত গড়ার বিষয়ে আমাদের ভাবতেই হবে। এলাকায় শিক্ষার প্রসারের জন্যই এই অনুষ্ঠান হয়েছে।” বিধায়কের দাবি, রাজ্য সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে খুবই কম আওয়াজে মাইক ব্যবহার করা হয়েছে।
পুরুলিয়া সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই সাঁতুড়ি ব্লকে কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র (আইটিআই) গড়ার ঘোষণা করেছিলেন। সেই মতো সাঁতুড়ি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রর পাশে প্রায় চার একর জমিতে আইটিআই গড়ছে কারিগরি শিক্ষা দফতর। এ দিন প্রস্তাবিত আইটিআইয়ের শিলান্যাস করে উজ্জলবাবু জানান, এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এর জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বরাত পেয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা এইচসিএল। প্রত্যন্ত এই এলাকায় আইটিআই হলে পুরুলিয়ার পাশাপাশি লাগোয়া জেলা বাঁকুড়ার একাংশের ছাত্রছাত্রীরা সুবিধা পাবেন বলে জানিয়েছেন বিধায়ক পূর্ণচন্দ্রবাবু। অনুষ্ঠানে উপস্থিত কারিগরি শিক্ষা দফতরের অধিকর্তা হরিপ্রসন্ন দে জানান, আইটিআইগুলিতে যে-সব পাঠ্যক্রম পড়ানো হয়, সেগুলি এখানেও পড়ানো হবে।
আইটিআইয়ের জন্য চিহ্নিত সরকারি জমির মধ্যেই রয়েছে একটি বস্তি। ২৭টি দিনমজুর পরিবার বাস করে সেখানে। এ দিন অনুষ্ঠানস্থলের সামনে এসে ওই পরিবারগুলির একাংশের অভিযোগ, “প্রশাসনের লোকজন এসে বলে গিয়েছিল, অন্যত্র পাট্টা দিয়ে ঘর বানানোর টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু, মন্ত্রী এসে শিলান্যাস করে দ্রুত কাজ শুরুর কথা বলে গেলেও আমাদের অনেকে এখনও পাট্টা পাননি। টাকাও মেলেনি।” সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বিধুভূষণ শান্তিকারীর অবশ্য দাবি, “ইতিমধ্যেই ওই ২৭টি পরিবারকে জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব তহবিল থেকে তাদের ঘর বানিয়ে দেব আমরা।” বিধায়ক জানিয়েছেন, সকলের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের সম্মতি নিয়েই এই আইটিআই করা হচ্ছে। এখানে জমি সংক্রান্ত কোনও সমস্যা নেই। |