নীল-সাদা কাপড়ে মোড়া গোটা চারেক স্টল। দু’পাশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় ছবি। উপরে গ্রামীণ মেলার বিজ্ঞাপন। একটি স্টলে কিছু লোকজন রয়েছেন। বাকি তিনটি ফাঁকা। দূরদূরান্তের গ্রাম থেকে লোকজন মেলায় এসে শূন্য স্টল দেখেই বাড়ি ফিরে গেলেন। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার হুড়া ব্লক অফিস চত্বরে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের আয়োজিত গ্রামীণ মেলায় এমন ছবিই দেখা গেল।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লক বা পঞ্চায়েত সমিতি থেকে সাধারণ মানুষ কী ধরনের পরিষেবা পেতে পারেন, সে ব্যাপারে তাঁদের সচেতন করা এই মেলার উদ্দেশ্য। একই সঙ্গে ওই এলাকায় কী ধরনের সম্পদ রয়েছে এবং সেই সম্পদ কাজে লাগিয়ে কী ভাবে উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করা যায় তা জানানোও অন্যতম লক্ষ্য। পাশাপাশি বর্তমান রাজ্য সরকার গত আড়াই বছরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় মানুষের জন্য কী কাজ করেছে তাও এই মেলার মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছে প্রশাসন। |
কিন্তু এ দিন হুড়ায় ওই মেলা চত্বরে গিয়ে অন্য অভিজ্ঞতা হল। মেলা বলতে এখানে শুধু চারটি স্টল রয়েছে। তার মধ্যে তিনটিই ফাঁকা। একটি স্টলে এক আধিকারিক টেবিলে খাতা রেখে লেখালিখি করছিলেন। তাঁকে ঘিরে মেলায় আসা কিছু মানুষের জটলা। ভদ্রলোক নিজের পরিচয় দিলেন রাজ্য সরকারের তপশিলি জাতি ও উপজাতি উন্নয়ন বিত্ত নিগমের ফিল্ড অফিসার। নাম সীতারাম প্রধান। তিনি বলেন, “মেলায় আমাদের স্টল নেই। অন্য দিন ব্লকের কমিউনিটি হলে বসে কাজ করি। এ দিন কমিউনিটি হলে জায়গা না মেলায় এখানে ফাঁকা প্যান্ডেল দেখে অফিসের কাজ সারছি।”
মাঠে ইতস্তত ঘোরাঘুরি করছিলেন কিছু লোকজন। তাঁদের মধ্যে সিয়াডি গ্রামের খেদন সর্দার বলেন, “আমাদের এলাকার এক পঞ্চায়েত সদস্য মেলায় আসতে বলেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন সরকার আমাদের জন্য কী কী কাজ করেছে, আরও কত সুবিধা পাওয়া যায়, তা মেলায় এলে জানা যাবে। কিন্তু কোথায় কী? এসে দেখছি কিছুই নেই। সব ফাঁকা।” জামবাদ থেকে এসেছিলেন সুদীপ মাহাতো, শামুকগড়িয়া গ্রাম থেকে নিতাই হাঁসদা। তাঁদের কথায়, “শুনেছিলাম এখানে একটা মেলা হবে। কিন্তু সবই তো দেখছি ফাঁকা। মেলা শেষ হয়ে গিয়েছে মনে হচ্ছে।” এলাকার ব্যবসায়ীরা জানালেন, ক’দিন ধরে প্যান্ডেল বাঁধা রয়েছে। তাঁদের মতে, কবে মেলা শুরু হল তাও জানি না। শেষ হয়ে গিয়েছে তাও তাঁদের কাছে স্পষ্ট নয়।
হুড়ার বিডিও সুব্রত পালিত অবশ্য জানিয়েছেন, ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে মেলা শুরু হয়েছে। শেষ হবে আজ শুক্রবার। তাঁর দাবি, “মেলা তো চলছে। আমরা মূলত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে নিয়েই মেলা করছি। অন্য দফতরগুলি মেলায় আসেনি।” আর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুভাষ মাহাতো বলছেন, “ভালই মেলা চলছে। লোকজন হয়তো কম হতে পারে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর লোকজন তো মেলায় রয়েছেন।”
এখানে সাত দিনের মেলা চললেও কোনও কোনও ব্লকে আবার তিন দিন কিংবা দু’দিনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। পাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সীমা বাউরি বলেন, “আমরা দু’দিন মেলা করেছি। মেলার জন্য অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় মেলা বেশিদিন করা যায়নি।” পুরুলিয়া ২ ব্লকের সভাপতি আনন্দ রাজোয়াড় বলেন, “নির্দেশ পাওয়ার পরে প্রস্তুতির সময় বড় একটা মেলেনি। আমরা প্রথম দু’দিন মেলা করছি।” নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণ প্রসাদ যাদব বলেন, “মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ায় মাইক বাজানো যাবে না বলে চার দিন মেলা করছি।” আবার সাঁতুড়ি ব্লক মেলা করেনি। যদিও বাঘমুণ্ডি, জয়পুর, কাশীপুর, বরাবাজার, পুরুলিয়া ১, আড়শা, ঝালদা ২, রঘুনাথপুর ১ ও ২ ব্লকে সাতদিন ধরেই মেলা হচ্ছে।
জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক শুভময় ভট্টাচার্য বলেন, “মেলা যে সাত দিন ধরে করতে হবে, এমন কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা ছিল না। মেলার জন্য অর্থ বরাদ্দও ছিল না।” |