খুচরো ব্যবসা নিয়ে নয়া সুর মোদীর
র্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থেকে পালিয়ে গিয়ে নয়, বরং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে তাকে মোকাবিলা করার মন্ত্র শোনালেন নরেন্দ্র মোদী। আর সেটা করতে গিয়ে প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি নিজে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির কট্টর বিরোধী নন। যা এক অর্থে তাঁর আগের অবস্থান থেকে সরে আসা। কারণ, বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার ঘোষিত ভাবেই দেশের খুচরো বাজারে বহুজাতিক সংস্থার প্রবেশের বিরোধী। সেই অবস্থান মেনেই মোদীর রাজ্য গুজরাতে এই ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নি নিষিদ্ধ। রাজস্থানে ক্ষমতায় এসে বসুন্ধরা রাজেও একই পথের পথিক।
ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে এ দিনই ছিল রাজধানীতে মোদীর শেষ কর্মসূচি। ব্যবসায়ী সমিতি কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স-এর সভায় মোদী আজ প্রায় ভাবী প্রধানমন্ত্রীর সুরেই কথা বলছিলেন। বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, হিন্দুত্ব নয়, রামমন্দির নয়। মেরুকরণের রাজনীতি নয়, সংখ্যালঘুদের কাছে ক্ষমাভিক্ষাও নয়। তাঁর আসল স্লোগান অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর সংস্কার। এবং ক্ষমতায় এলে তাঁর সরকারের অর্থনৈতিক মডেল কী হবে, তারও একটি রূপরেখা এ দিন পেশ করে গেলেন তিনি। ‘অসংখ্য অপ্রয়োজনীয় জটিল’ আইনকানুন বাতিল করে ব্যবসা-বাণিজ্যের রাস্তা সুগম করার প্রতিশ্রুতি দিলেন।
এর আগে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে বিরোধিতাই করে এসেছে বিজেপি। এ ব্যাপারে সঙ্ঘ পরিবারের তরফেও যথেষ্ট চাপ ছিল তাদের উপরে। মোদী কিন্তু আজ সেই অবস্থান বদলেরই ইঙ্গিত দিলেন। মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রতি তাঁর পরামর্শ রইল বৃহৎ রিটেল চেন-এর সঙ্গে হাত মেলান এবং অনলাইন বিপণনে জোর দিন। প্রতিযোগিতা থেকে পালিয়ে না গিয়ে মাঠে নামুন।
ব্যবসায়ী সমিতির সভায় সংবর্ধনা নরেন্দ্র মোদীকে। মঞ্চে উপস্থিত বিজেপি
নেতা মুরলীমনোহর জোশীও। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
দেশের ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ বিজেপি-র সমর্থক। মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতও ব্যবসা-প্রধান। বিদেশি রিটেল চেন এলে দেশীয় ব্যবসায়ীরা মার খাবেন, এমন আশঙ্কার শরিক তাঁদের বড় অংশই। মোদী নিজেও সে কথা খুব ভাল করেই জানেন। এ দিন তিনি কবুল করলেন, “আমি জানি না, এ সব কথা বলা রাজনৈতিক ভাবে আমার জন্য লাভদায়ক হচ্ছে কি না।” কিন্তু প্রশাসক হিসেবে মোদী যে বাস্তবতাকে স্বীকার করেই চলতে চান, সেটাও তিনি এ দিন স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
সেই বাস্তবতাটা কী? “ছোট শহরের ক্রেতারাও এখন ব্র্যান্ডেড জিনিসপত্র কিনতে চান। এই সত্যিটা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকার পথ খোঁজা আমাদের লক্ষ্য হতে পারে না। আমাদের সেটাকে মোকাবিলা করতে হবে।” কী ভাবে সেটা সম্ভব? মোদী বলছেন, এক জন ছোট ব্যবসায়ীর পক্ষে বড় শোরুম খোলা হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু বড় শোরুমের সঙ্গে হাত মেলানোর কথা ভাবতে পারেন তাঁরা। অনলাইন কেনাবেচায় জোর দিতে পারেন। “নিজের ছোট দোকানের মধ্যেই গড়ে তুলতে পারেন আপনার ভার্চুয়াল মল।”
তবে কি সঙ্ঘ পরিবারের অর্থনৈতিক মডেল একেবারে ফেলে দিলেন মোদী? না, সুকৌশলে তিনি সেটাকেও ব্যবহার করেছেন নিজের লক্ষ্যে। বিরোধীদের একটি অংশ বলে থাকে, মোদীর উন্নয়ন-তত্ত্বে গরিবদের স্থান নেই। শিল্পোদ্যোগীদের সঙ্গে মোদীর ঘনিষ্ঠতার দিকটি সামনে এনে তাঁরা বলতে চান, এই কর্মযজ্ঞে আম আদমির জায়গা নেই। মোদী আজ সেই সমালোচনার উত্তর দিতে গিয়ে সঙ্ঘ পরিবারের মডেলকে কাজে লাগালেন ঘরোয়া বাজার চাঙ্গা করার কথা বললেন। গ্রাম-শহর, ধনী-দরিদ্র ভেদ ঘুচিয়ে সকলকে নিয়ে উন্নয়নের কথা বললেন। ‘আত্মা গ্রামের, সুবিধা শহরের’ স্লোগান দিলেন বিনিয়োগ মানেই কেবল বড় শিল্প নয়, উন্নয়নের সুফল প্রত্যন্ত এলাকাতেও ছড়িয়ে দিতে হবে।
এর আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম মোদীর অর্থনীতি-জ্ঞান নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, মোদীর জ্ঞানগম্যির বহর একটি স্ট্যাম্পের পিছনে এঁটে যাবে। এর জবাব মোদী আজ দিয়েছেন। বললেন, “আমার জ্ঞান আরও কম। স্ট্যাম্পও লাগবে না, একটা শব্দেই কাজ চলে যাবে।” কী সেই শব্দ? গাঁধীর ভাবনায় সরকারকে যে ভাবে জনতার ট্রাস্টি বা অছির ভূমিকা নেওয়ার কথা ছিল, সেটাই উদ্ধৃত করলেন মোদী। বললেন, জনতাই মালিক। সরকার যদি তাদের অছি হয়ে থাকে, তা হলেই সকলের উন্নয়ন হবে। “মুঝে কোই বহুত গ্রন্থোঁ কি জরুরত নেহি হ্যায়। গ্রন্থওয়ালোঁকো ম্যায় রাখ লুঙ্গা আপনে পাস...।” অর্থাৎ নিজে পণ্ডিত না হয়ে দরকারে পণ্ডিতদের মত নিয়ে চলবেন বুঝিয়ে দিলেন সেটা।
কথার ছত্রে ছত্রে রাজনৈতিক বার্তাও ছিল স্পষ্ট। দিল্লি থেকে দেশ চালানো নয়, রাজ্যের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বললেন মোদী। আঞ্চলিক দলগুলির মন জয়ে বললেন, প্রধানমন্ত্রী ও সব মুখ্যমন্ত্রী মিলেই একটি টিম গড়ার পক্ষপাতী তিনি। পাশাপাশি এ-ও বললেন, প্রয়োজনে কঠোর হতে পিছপা হবেন না। “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি কারও চাপে মাথা নোয়াই না। অনেক সময়ই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেটি নিতে না পারলে গদিতে বসাই উচিত নয়।”
মোদীর ইঙ্গিত স্পষ্টতই মনমোহন সিংহের দিকে। মনমোহনের কথার প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, জোট সরকারের বাধ্যবাধকতা দুর্নীতির সাফাই হতে পারে না। তা হলে দুর্নীতির দায়ে কংগ্রেসের রেলমন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে হতো না। মোদীর দাবি, জোট সরকার কী ভাবে চালাতে হয় অটলবিহারী বাজপেয়ী সেটা করে দেখিয়েছেন।
আর, তাঁর কথার্বাতায় সামগ্রিক ভাবে বেরিয়ে আসছিল একটা বার্তাই। মোদীও করে দেখাতে চান এবং তার সুযোগ যে পাবেন, সে বিষয়ে তিনি নিজে যেন প্রায় নিশ্চিতই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.