দানিয়ুবের তীরে ভিয়েনা শহর। প্রায় ১৭ লক্ষ নাগরিকের বসবাস এখানে। তবু কেউই বোধ হয় জানতেন না পায়ের তলায় ঘুমিয়ে রয়েছে ১৮০০ বছরের পুরনো ইতিহাস।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যে অস্ট্রিয়ার রাজধানীর পূর্ব প্রান্তে খোঁজ মিলল দ্বিতীয় শতকের প্রথমার্ধে তৈরি বিশালাকার এক রোমান গ্ল্যাডিয়েটর স্কুলের। আকারে, আয়তনে অনায়াসেই যার তুলনা চলে রোমান কলোসিয়ামের পিছনে অবস্থিত গ্ল্যাডিয়েটর স্কুলটির সঙ্গে। প্রায় ২৮০০ বর্গ মিটার
এলাকা জুড়ে রয়েছে ভিয়েনার এই গ্ল্যাডিয়েটর স্কুল। সম্প্রতি ইউরোপের এক দল গবেষক দানিয়ুব নদী তীরের উপগ্রহ চিত্র পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে হঠাৎই এই রোমান স্থাপত্যটির সন্ধান পান।
পাঁচিল ঘেরা গ্ল্যাডিয়েটর স্কুলটি দানিয়ুবের তীরে ‘রোমান কারনুনতাম’-এর অ্যাম্ফিথিয়েটার অংশবিশেষ বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। ইতিহাস বলছে, ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম ওই অ্যাম্ফিথিয়েটারটির সন্ধান মেলে ১৯২৩ থেকে ১৯৩০-এর মধ্যে।
সেই অ্যাম্ফিথিয়েটারের দর্শক আসন সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩০০০। ভিয়েনা থেকে ‘কারনুনতাম’-এ আসার মূল সড়কটির বাঁ দিকেই গ্ল্যাডিয়েটর স্কুলটি প্রথম সন্ধান মেলে উপগ্রহ চিত্রে। আর তার পরেই শুরু হয় খোঁড়াখুঁড়ি।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানাচ্ছেন, স্কুল চত্বরের একদম মাঝামাঝি জায়গায় ছিল প্রায় ১৯ মিটার চওড়া একটি প্রশিক্ষণ প্রাঙ্গণ। সেখানেই নিয়মিত তালিম দেওয়া হত গ্ল্যাডিয়েটরদের। তার কিছু দূরেই ৩০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত একটি প্রশাসনিক ভবনের সন্ধান মিলেছে। এই প্রশাসনিক ভবনের গায়েই ছিল গ্ল্যাডিয়েটর স্কুলটির মালিকের বাড়ি। প্রশিক্ষণ প্রাঙ্গণের চারধারে গড়ে তোলা হয়েছিল স্কুলবাড়িগুলি। তবে প্রশিক্ষণরত গ্ল্যাডিয়েটরদের থাকার ব্যবস্থা ছিল শোচনীয়। স্কুলবাড়িগুলির মধ্যে ৫ বর্গমিটার মাপের ছোট ছোট খুপরি ঘরে দিন কাটত তাঁদের। তবে স্কুল চত্বরের নিকাশি ব্যবস্থা ছিল উন্নত মানের। ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার হওয়া জলের পাইপ তারই প্রমাণ দেয়।
দানিয়ুবের তীরে অবস্থিত এই গ্ল্যাডিয়েটর স্কুলটির আবিষ্কার রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এক আনকোরা অধ্যায়ের সূচনা করল বলেই মনে করছেন গবেষকরা। |