কিয়েভের পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি শান্ত নয়। এর মধ্যেই নতুন করে অশান্তি ছড়াচ্ছে ইউক্রেনের উপদ্বীপ ক্রিমিয়ায়। রাজধানী কিয়েভের মতো পূর্ব-পশ্চিমের দ্বন্দ্বে এখন টালমাটাল কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী এই অঞ্চলও। কালই সেখানে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে দু’পক্ষ। আর আজ কাকভোরে ক্রিমিয়ার আঞ্চলিক পার্লামেন্ট দখল করে নিয়েছে বন্দুকধারীরা। পার্লামেন্টে ঝোলানো হয়েছে রাশিয়ার পতাকাও।
আজ দুপুরেই কিয়েভে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমর্থিত মন্ত্রিসভা গঠনের দিকে এক ধাপ এগোলেন ইউক্রেনের নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। আর ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে দেশের আর এক প্রান্ত ক্রিমিয়ার আঞ্চলিক রাজধানী সিমফারোপোলে রুশ আধিপত্য স্থাপনের ইঙ্গিত মিলল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, আজ সকাল সকাল জনা পঞ্চাশ বন্দুকধারী পার্লামেন্টে ঢুকে পড়ে। অত সকালে পার্লামেন্ট চত্বর খালিই ছিল। পার্লামেন্টে টাঙানো হয় রুশ পতাকা। সরকারি দফতরগুলির দখলও নেয় তারা। বন্দুকধারীদের মাথায় ছিল কালো আর কমলা রঙের ফিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার জয়ের প্রতীক ছিল ওই ফিতে। ক্রিমিয়ায় এমনিতেই রুশরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। পার্লামেন্টে রুশপন্থী দুষ্কৃতীদের বাধা দেওয়ারও তাই তেমন কেউ ছিল না আজ। কৃষ্ণ সাগরের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রধানমন্ত্রী আনাতলি মোহিলওভ শুধু জানিয়েছেন, বন্দুকধারীদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তারা কার্যত পাত্তা দেয়নি তাঁকে। তাদের বক্তব্য ছিল, এই ধরনের কোনও আলোচনায় থাকার এক্তিয়ার মোহিলওভের নেই।
তবে সিমফারোপোলের ঘটনা জানার পরই কিয়েভে নড়েচড়ে বসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী আরসেন আভাকভও বিষয়টি রুশ আগ্রাসনের অংশ বলে মনে করছেন। ফেসবুক পোস্টে আজ তিনি জানিয়েছেন, কিয়েভেও যাতে একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তার দিকে নজর রাখছে অন্তর্বর্তী সরকার। পুলিশকেও এ বিষয়ে বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এ নিয়ে যাতে নতুন করে রক্তপাত না হয়, সে দিকটিও অন্তর্বর্তী সরকার বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছেন আভাকভ।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজই ইউক্রেনের গদিচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ প্রকাশ্যে রাশিয়ার কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। নিজেকে এখনও ইউক্রেনের বৈধ প্রেসিডেন্ট বলে দাবি করে ইয়ানুকোভিচ বলেছেন, “দেশের সন্ত্রাসবাদীরা আমার্য় খুন করতে পারে। তাই ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য রুশ সরকারের দ্বারস্থ হয়েছি।”
রাজধানী কিয়েভ এখন রাশিয়ার হাতছাড়া। এই পরিস্থিতিতে ক্রিমিয়ায় যে কোনও মূল্যে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে মরিয়া মস্কো। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছে আমেরিকাও। ওবামা প্রশাসনের স্পষ্ট বক্তব্য, ইউক্রেনে ‘বাইরের লোকের’ হস্তক্ষেপ বন্ধ হোক। গত কালই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেন সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় সেনা তৎপরতা দেখা গিয়েছিল। যদিও বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে মস্কো। |