|
|
|
|
মেঝেয় মা-ছেলের দেহ, সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত বাবা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
মেঝেয় পড়েছিল মা ও ছেলের রক্তাক্ত দেহ। সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত বাবা। রবিবার সকালে তমলুক শহরের উত্তরচড়া শঙ্করআড়ার স্টিমারঘাট এলাকায় বাড়ি থেকে তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধার করল পুলিশ। মৃত ভানুলাল মনি (৫০) পেশায় জীবনবিমা কর্মী। মৃত সঙ্ঘমিত্রা মনি (২৬)তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। ছেলে সৌম্যদীপ্ত মনিও (৮) দ্বিতীয় পক্ষেরই। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক অশান্তির জেরে ভানুলাল নিজের স্ত্রী ও পুত্রকে খুন করে আত্মহত্যা করেছেন। তমলুকের এসডিপিও পারিজাত বিশ্বাস বলেন, “ওই ব্যক্তি স্ত্রী -পুত্রকে খুন করে আত্মহত্যা করেছেন বলেই মনে হচ্ছে। তদন্ত শুরু করা হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল ১০টার পরেও ভানুলালবাবুর পরিবারের কেউ বাড়ির বাইরে বের না হওয়ায় প্রতিবেশীরা সঙ্ঘমিত্রাদেবীর বাপের বাড়িতে ফোনে খবর দেন। তমলুক শহরেই আর এক মেয়ের বাড়িতে ছিলেন সঙ্ঘমিত্রাদেবীর মা। তিনি তড়িঘড়ি এসে দেখেন, দোতলায় একটি ঘরের মেঝেয় মেয়ে সঙ্ঘমিত্রা ও নাতি সৌম্যদীপ্তর রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। আর বিছানার উপর সিলিং ফ্যান থেকে জামাই ভানুলালবাবুর দেহ ঝুলছে। |
|
নিহত বধূর শোকার্ত পরিজন। —নিজস্ব চিত্র। |
খবর পেয়ে পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না -তদন্তের জন্য তমলুক জেলা হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনাস্থলে ভিড় করেন আশপাশের বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, আদতে ময়নার নারকেলদা গ্রামের বাসিন্দা ভানুলালবাবু প্রায় কুড়ি বছর ধরে তমলুক শহরে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন। ভানুলালবাবুর প্রথম পক্ষের স্ত্রী বছর দশেক আগে ক্যানসারে মারা যান। প্রথম পক্ষের এক ছেলে রয়েছে। তমলুক কলেজে মেসে থেকে পড়াশোনা করেন প্রথম পক্ষের ছেলে। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ভানুলালবাবু দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন ময়নার গড়সাফাত গ্রামের সঙ্ঘমিত্রাদেবীকে। কর্মসূত্রে গত এক বছর বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে ছিলেন তিনি। সম্প্রতি বদলি হয়ে ফের তমলুকে আসেন। গত সোমবারই কাজে যোগ দেন ভানুলালবাবু।
সঙ্ঘমিত্রাদেবীর মা পলিদেবী জানান, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে প্রথম পক্ষের শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে টানাপোড়েন চলছিল। স্ত্রীকেও সন্দেহ করতেন ভানুলালবাবু। এই নিয়ে অশান্তি হত। কয়েকমাস আগে ভানুলালবাবু চিকিৎসা করাতে ভেলোর গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর মানসিক চিকিৎসাও করানো হয়েছিল।
পলিদেবী বলেন, “শুক্রবার বিকেল থেকে আমি তমলুক শহরের টাউন স্কুলপাড়ায় ছোট মেয়ের বাড়িতে আছি। শনিবার বড় মেয়ে সঙ্ঘমিত্রা ও নাতি সৌম্যদীপ্তকে নিয়ে মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলাম। ওরা বাড়ি ফেরার পর রাত ১০টা নাগাদ ফের মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখনও অশান্তির আভাস পাইনি। রবিবার সকালে লোকজন ফোন করলে মেয়ের বাড়ি আসি। তারপরেই এই দৃশ্য দেখতে হল।”
এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির সামনে প্রচুর মানুষের ভিড়। সুসজ্জিত পাকা দোতলা বাড়ির একটি ঘরে ভানুলালবাবুর স্ত্রী ও পুত্রের রক্তাক্ত দেহ পাশাপাশি পড়ে রয়েছে। মেঝেয় প্রচুর রক্ত, চুলের গোছা পড়ে। সিলিং ফ্যান থেকে গলায় গামছার ফাঁস দেওয়া ভানুলালবাবুর দেহ ঝুলছে। তাঁর হাতে ও পোশাকে রক্ত লেগে রয়েছে। উদ্ধার হয়েছে রক্তমাখা একটা লোহার রডও। এ দিন ঘটনাস্থলে এসেছিলেন কাউন্সিলর রবীন্দ্রনাথ সেন ও পৃথ্বীশ নন্দী। দু’জনেই বলেন, “তমলুক শহরে এই ধরনের নৃশংস ঘটনা খুব কমই ঘটেছে। পুলিশ তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন করুক যত দ্রুত সম্ভব।” |
|
|
|
|
|