একজন ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলছেন প্রায় নিয়মিত। ওয়ান ডে টিমেও ঢুকে পড়ছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি- টোয়েন্টি এবং ওয়ান ডে টিমে আছেন। তাঁর কাছে জাতীয় দলের চৌহদ্দি অপরিচিত নয়।
অন্য জন ডিসেম্বরের রবিবারটা কোনও দিন ভুলতে পারবেন না। স্থানীয় ক্রিকেটে ম্যাচ ছিল। গাড়িতে আসতে আসতে পাশে বসা সৌরাশিস লাহিড়ি তাঁকে প্রথম বলেন, “খবরটা শুনেছিস? তুই ইন্ডিয়া টিমে!” শুনে বিশ্বাস হয়নি প্রথমে।
দু’জনেই পেসার, বাংলারও বটে। বাংলা ক্রিকেটে আজ পর্যন্ত যা হয়নি, সেটা ঘটিয়ে ফেলেছেন এঁরা দুই।
এঁরাঅশোক দিন্দা ও সামি আহমেদ। ভারতীয় দলে এই প্রথম বাংলা থেকে এক নয়, একসঙ্গে এক জোড়া পেসার!
বিহ্বল সামি কোনওমতে বলছেন, “এই দিনটাই দেখতে চেয়েছিলাম। এই মুহূর্তটার জন্যই তো এত খাটাখাটনি। এত পরিশ্রম। কলকাতায় এসে বছরের পর বছর পড়ে থাকা।”
রবিবার সকালে যখন আরবসাগরের পারে নির্বাচনী বৈঠক চলছে, সামি তখন বেরোচ্ছেন হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিটের গেস্টহাউস থেকে। ময়দানে ম্যাচ আছে। সামান্য, খুব সামান্য একটা আশা লুকিয়ে ছিল মনের মধ্যে। “আসলে অনেক তরুণ পেসার সুযোগ পাচ্ছে এখন। রঞ্জিতে এ বার প্রচুর উইকেট পেয়েছি। একটা আশা ছিল যে, আমিও ডাক পেতে পারি। পেয়ে গেলাম,” রবিবার দুপুরে ময়দানের হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে বলতে বলতে হেসে ফেলেন সামি। |
জীবনটা যাঁর মোটেও এত দিন হেসেখেলে কাটেনি।
সামি বাংলার বটে, কিন্তু বাঙালি নন। উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে তাঁর উঠে আসা। ছোটবেলায় রোজ একুশ-একুশ বিয়াল্লিশ কিলোমিটার যাতায়াত করতেন, ক্রিকেট খেলার জন্য। উত্তরপ্রদেশ থেকে সামির ছোটবেলার কোচ বদরুদ্দিন ফোনে বলছিলেন, “ছোট থেকেই ওর মধ্যে একটা জেদ দেখতাম। দুপুর দু’টো থেকে ম্যাচ থাকলে, বারোটায় এসে হাজির হত। একা-একা প্র্যাক্টিস করে যেত।” মোরাদাবাদে পরিকাঠামোর সুবিধে ছিল না। বদরুদ্দিনই তাঁকে পাঠান কলকাতায়। কিন্তু এখানেও শুরুটা সহজ ছিল না। অনূর্ধ্ব-২২ টিমে ঢুকতে পারেননি। শেষে নজরে পড়েন লক্ষ্মীরতন শুক্লর। লক্ষ্মী ডেকে জিজ্ঞেস করেন, “তোমার পেস ভাল। কোথাকার ছেলে তুমি?” লক্ষ্মীর সওয়ালেই শেষ পর্যন্ত অনূর্ধ্ব-২২ টিমে খেলা। তার পর বাংলা, ভারত ‘এ’, বাকিটা ইতিহাস।
যে ইতিহাস সৃষ্টির ‘পাসওয়ার্ড’ সামির কাছে একটাই। পরিশ্রম, শুধুই কঠোর পরিশ্রম। “ওটার বিকল্প নেই। পরিশ্রমে ফাঁকি দিলে কোথাওই এগোনো যায় না। এই যেমন সামনের ক’টা দিন ডেল স্টেইনের বোলিংয়ের ডিভিডি দেখব। স্টেইন আমার আদর্শ। ওর মতো লাইন-লেংথ আর গতি যদি কোনও দিন তুলতে পারি, জানব কমপ্লিট বোলার হয়েছি।”
তা হলে স্টেইন-মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে ‘মিশন পাকিস্তান’? সামির কথা তো তেমনই শোনাচ্ছে। |
টি-টোয়েন্টি দল: ধোনি (অধিনায়ক), গম্ভীর, রাহানে, যুবরাজ , বোহিত, রায়না, কোহলি, জাদেজা, অশ্বিন, দিন্দা, ইশান্ত, ভুবনেশ্বর কুমার, আওয়ানা, চাওলা, রায়ডু। একদিনের ক্রিকেট দল: ধোনি (অধিনায়ক), সহবাগ, গম্ভীর, কোহলি, যুবরাজ, রোহিত, রায়না, জাদেজা, অশ্বিন, ইশান্ত, রাহানে, দিন্দা, ভুবনেশ্বর কুমার, সামি আহমেদ, অমিত মিশ্র |