সব ভাল কিছুরও একটা শেষ থাকে। এটাই বাস্তব এবং সেটাকে মেনে নিতে হয়। সচিনের সিদ্ধান্তটাও তাই মেনে নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। তাও ভাল যে, ও ক্রিকেটকে চিরবিদায় জানায়নি। ওয়ান ডে-তে না হোক, টেস্টে তো ওকে দেখতে পাব। এটাই সান্ত্বনা। তাই রবিবার সকালে খবরটা শোনার পর থেকে ভারতীয় ক্রিকেটমহলে যেমন দুঃখ রয়েছে, তেমন রয়েছে স্বস্তিও। পাশাপাশি একটা ভয়ও থেকে গেল। অদূর ভবিষ্যতেই আবার টেস্ট ক্রিকেট থেকেও বিদায় নিয়ে নেবে না তো সচিন? উত্তর কারও জানা নেই।
আরও একটা আশঙ্কা থাকছে। পরপর কয়েক জন তারকা অবসর নেওয়ার পর এ বার সচিনও যখন ওয়ান ডে ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিল, এরপর ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা ক্রিকেট মাঠে আসবেন তো? এর উত্তর একমাত্র সময়েরই জানা। তবে সচিন তেন্ডুলকরের মতো মহাতারকার জায়গা পূরণ হওয়া যে সম্ভব নয়, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা মাঠে সচিনকে দেখতে না পাওয়ার কষ্ট সহ্য করতে পারবেন কি না, সেটাই দেখার। যাই বলুন, রবিবার সচিনের সিদ্ধান্তটা সারা দেশের কাছেই একটা বড় ধাক্কা। ফের কবে টেস্ট ক্রিকেটেও এ রকম ধাক্কা আসতে চলেছে, কে জানে।
২০১৫ বিশ্বকাপে নিজের জায়গায় কোনও তরুণ ক্রিকেটারকে জায়গা করে দিতেই অবসরের ঘোষণা, নিজের অবসর-বিবৃতিতে সচিন এই কথাই বলেছে। এর চেয়ে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত আর কী হতে পারে? পরের বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়ায়। হাতে এখনও সময় রয়েছে। ভারতকে সেখানে ফিট এবং তরুণ দল পাঠাতে হলে সামনের দু’বছরে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড সফরে পাঠিয়ে সেই দলটা তৈরি করতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার বাউন্স ও গতিতে ভরপুর উইকেটে ভারতীয় ক্রিকেটাররা যাতে মানিয়ে নিয়ে ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারে, সে জন্য তাদের সে ভাবে তৈরি করতে হবে। সেই কাজটা এখন থেকে শুরু করে দেওয়াই ভাল। ভারতীয় ক্রিকেট এখন সন্ধিক্ষণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই আগামী বিশ্বকাপ ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। |
ফেরা যাক সচিনে। আমি ভাগ্যবান যে, সচিনকে এত দিন ধরে দেখছি, ওর সঙ্গে এত দিন ধরে খেলেছি। ইন্দৌরে অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় শিবিরে ওর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। তখন থেকেই ওর মধ্যে যথেষ্ট প্রতিভা ছিল ঠিকই, কিন্তু এত উঁচুতে উঠবে ছেলেটা, তা তখন কেউ ভাবতে পেরেছিল? মনে তো হয় না।
অনেকে প্রতিভা নিয়েই জন্মায়। কিন্তু প্রতিভাকে একেবারে ঠিক মতো কাজে লাগিয়ে নিজেকে সর্বোচ্চ জায়গায় নিয়ে যাওয়াটাই আসল কথা। এই ব্যাপারে সচিনের চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে? খিদে, অধ্যাবসায় ও ত্যাগই ওর জীবনের মূল মন্ত্র। এগুলোই ওকে চিরকাল শীর্ষস্থানে রেখেছে। ক্রিকেট দুনিয়ায় সেরা জায়গায় থেকেও কখনও নিজেকে ক্রিকেটের চেয়ে বড় ভাবার ভুল করেনি সচিন। আপনা আপনিই সব হয়ে যাবে, এমনটা কখনও ভাবেনি ও। প্রতিটা রানের জন্য, প্রতিটা মুহূর্তের জন্য ওকে পরিশ্রম করতে দেখেছি। কখনও তৃপ্ত হতে দেখিনি। এমন এক ক্রিকেটার বিদায় নিলে তো সেই ক্ষতিপূরণ হওয়ার নয়।
যে দিন থেকে সচিন ওয়ান ডে ক্রিকেটে ওপেন করতে শুরু করেছে, সেই দিনটাই ওর ওয়ান ডে কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট। জানি না কার পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তিনি যেই হোন, তাঁকে ধন্যবাদ। ওপেন করতে নেমে যে স্বাধীনতা পেয়েছিল ও, সেটাই ওর ব্যাটিংয়ে আরও আগ্রাসন নিয়ে আসে। আখেরে এটা দলেরই কাজে আসে। খুচরো রানে দুর্দান্ত হলেও বাউন্ডারি মারতেই বেশি পছন্দ করত সচিন। প্র্যাক্টিসে যে প্রচুর দৌড়াদৌড়ি করত, তা নয়। কিন্তু ম্যাচে কয়েকটা বাড়তি রান নেওয়ার জন্য কী দৌড়ই না দৌড়াত। বয়স বাড়লেও এই প্রবণতাটা বিন্দুমাত্র কমেনি ওর।
সচিনের অবসর ভারতের ওয়ান ডে দলে কেমন প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজে ভারত কেমন খেলে, তাতেই বোঝা যাবে। পাকিস্তানিরাও নিশ্চয়ই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে ভারতীয় দল আবার কী ভাবে লড়াইয়ে ফিরবে, তা এই সিরিজেই বোঝা যাবে।
জানি না, কত দিন আর টেস্ট ক্রিকেটেও থাকবে সচিন। তবে একদা সতীর্থ ও বন্ধু হিসেবে আমার ওকে একটাই পরামর্শযখনই বিদায় নাও, মাথা ও ব্যাট উঁচু রেখে মাঠ ছেড়ো। কারণ, ভারতীয় ক্রিকেটে তুমি অতুলনীয়। |