‘ফাঁকা হয়ে যাওয়া ওয়ান ডে ড্রেসিংরুমে এর
পর চোখের জল ধরে রাখব কী করে’
ক্তা যুবরাজ সিংহ। রোববার দুপুরে খবর শোনার পর থেকে যাঁর মনে হচ্ছে বুঝি কোনও নিকট আত্মীয় বিয়োগ ঘটল! আইটিসি গার্ডেনিয়া হোটেলে এসে ঢোকার পাঁচ মিনিটের মধ্যে তাঁর কুড়ি তলার ঘরে বসে সচিন সম্পর্কিত এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিলেন যুবরাজ। অসম্ভব আবেগপ্রবণ দেখাল তাঁকে...।
খবরটা প্রথম জানতে পারা: আমি তো জানতাম না। কোনও আঁচও পাইনি। মুম্বইয়ের হোটেল থেকে বাসে করে আমাদের টিম এয়ারপোর্টে এসেছিল। হঠাৎ টুইটারে দেখলাম। এখন সচিন যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তেই নিয়েছে। আমি সেখানে বলার কে? তবে আমার মনে হয় না পুরোপুরি অবসর নিয়ে ফেলল বলে। আমার ধারণা, অস্ট্রেলিয়া সিরিজটা খেলবে। সচিনের কখন ছাড়া উচিত, কোনটা খেলা উচিত, সে ব্যাপারে জ্ঞান দেওয়ার আমি যুবরাজ সিংহ কেউ নই। তবে আজকের সিদ্ধান্তটা আমার কাছে সহজবোধ্য। মাস্টার একটা ফর্ম্যাটেই এ বার মন দেবে।
ওয়ান ডে-তে সচিন: বাসে আসার সময় আমি আর ধোনি কথা বলছিলাম, যে লোকটা একা যা রান করেছে (১৮,৪২৬ রান), আমরা তিন জন্ম মিলেও করতে পারব না! জীবনে কেউ ওর ধারেকাছেও পৌঁছতে পারবে না! সেঞ্চুরি করেছে উনপঞ্চাশটা! খেলছে তেইশ বছর ধরে। অথচ অ্যাভারেজ ৪৫-এর ওপর সব সময়। চার প্রজন্মের বেশি ধরে বিশ্বের যাবতীয় বোলারদের চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। নিয়ে জিতেছে। ভাবাই যায় না! গ্রেটেস্ট অফ অল টাইম তো অতি অবশ্যই। টেস্ট ক্রিকেটের রান আর সেঞ্চুরিগুলো বাদই দিচ্ছি। শুধু সচিনের ওয়ান ডে কীর্তির কথা ভাবলেই মুখটা হাঁ হয়ে যায়! আর হাঁ-টা বন্ধ হয় না! মুখ খোলা থেকে যায়!
ইদানীংকালে রান না পাওয়া: এত লম্বা কেরিয়ারের মাঝেমধ্যে খাদের কিনারে গিয়ে দাঁড়ানোটা অনিবার্য। সচিনের তাই হচ্ছিল। ভাগ্য খারাপ, টেস্ট সিরিজে দু’একটা বল এমন পেয়েছে যা সেট হওয়া ব্যাটসম্যানেরও সমস্যা। তাতে প্র্যাক্টিসে ওর একাগ্রতা আর এনার্জি এক বিন্দু কমে যায়নি। ইডেনেও দেখেছি এমন ভাবে তৈরি হচ্ছে যেন এটাই জীবনের প্রথম ম্যাচ। দেখেছি আর মনে মনে বাহবা দিয়েছি যে, এ জিনিস দু’চোখ ভরে দেখে নেওয়ার নিয়মিত সুযোগ পাচ্ছি। আমার এবং টিমের বাকিদের পরিষ্কার অভিমত হল, সচিন তেন্ডুলকরই ভারতীয় ক্রিকেটের হৃদপিণ্ড। হৃদপিণ্ডটাই যদি না থাকে, কী থাকল, আমি খুব নিশ্চিত নই। রিসেন্টলি সচিনকে নিয়ে যেমন সমালোচনা হচ্ছিল তাতে আমি বেশ উত্তেজিতই হয়ে পড়ছিলাম। ড্রেসিংরুমেও ক্ষোভ লক্ষ্য করেছি। টিমমেটরা কেউ কেউ বলেছে, হচ্ছেটা কী। যে লোকটা ক্রিকেটের জীবন্ত আগ্রহ তাকে নিয়েও কিনা প্রকাশ্যে টানাটানি করছে!
টেস্ট ক্রিকেটে ভবিষ্যৎ: এখনও সচিন যদি বড় রান করে দেয়, আমি এতটুকু আশ্চর্য হব না। আমি মনে করি এখনও বিশ্ব ক্রিকেটে টেকনিক্যালি সেরা ব্যাটসম্যানের নাম তেন্ডুলকর। সবার ওপরে। সাম্প্রতিক রানের খরা মাথায় রেখেও বলছি। চাইলে আরও দু’বছর ও টেস্ট ক্রিকেট খেলে দেবে। নেটে সে দিনও দেখেছি স্ট্রোকের কী মসৃণ মেজাজ। ঠিকঠাক টাইমিং। আমি নিশ্চয়ই অবুঝ নই যে বলব কেউ অনন্তকাল খেলতে পারবে। কিন্তু আমি এটুকু বুঝি, সচিনের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেট অবশিষ্ট রয়েছে।
ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতা: আমি কখনও মানুষ তেন্ডুলকরকে ভুলতে পারব না। জীবনের চরমতম বিপর্যয়ে সচিন যে ভাবে আমার পাশে ছিল, অকল্পনীয়! কেমোথেরাপির ওই সময়টা রোজ ফোন করত। উৎসাহ দিত। আমেরিকা থেকে আমি যখন লন্ডন আসি, সচিন সোজা ফ্লাইট ধরে চলে এসেছিল। শুধু আমার সঙ্গে দেখা করবে বলে। তা-ও পরে শুনেছি, বারবার রিহার্সাল দিয়েছে কী ভাবে আমায় প্রথম ‘ফেস’ করবে। আর করে এমন একটা ভাব দেখাবে যেন কিছুই হয়নি। সচিনের ভয় ছিল, ও না হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে! আজ সচিনের ওয়ান ডে থেকে অবসর নেওয়ার খবর শুনে মনে হচ্ছে নিকট কোনও আত্মীয়কে বুঝি হারালাম!
সচিনহীন টিম ইন্ডিয়ার ড্রেসিংরুম: আমি শুধু ক্রিকেট বাদ দিলাম। ভারত দেশটার জন্যও সচিন যে কী পরিমাণ বিদেশে সদর্থক বিজ্ঞাপন, তা যারা জানে তারা জানে। যে পরিমাণ আনন্দ আর গভীর সুখ দিয়েছে, তার কোনও তুলনাই হয় না। সচিন বাদ দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট জাস্ট ভাবা যায় না। আর ও ছাড়া টিম ইন্ডিয়া ড্রেসিংরুমই বা কেমন দাঁড়াবে? ভেতরটাই তো পুরো ফাঁকা হয়ে গেল। আমি তো জানি না ভেতরটা পুরো ফাঁপা হয়ে যাওয়া সেই ড্রেসিংরুমে বসে আমি চোখের জল ধরে রাখব কী করে?




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.