দায়বদ্ধ বলেই সচিন বিশ্বকাপ জেতার পরেও খেলেছে
জীবনে কিছুই চিরস্থায়ী নয় যেমন ঠিক কথা। তেমনই এটাও ঠিক, সচিনের বয়স কমছে না। তা সত্ত্বেও আমার জীবনের সিস্টেমে রবিবার একটা ধাক্কা লাগল, যখন শুনলাম সচিন ওয়ান ডে থেকে অবসর নিয়েছে। ব্যাপারটা ঘটতই, কিন্তু সত্যিই সেই দিনটা যে দিন এল, কেমন যেন অবাক লাগছে!
সচিন কবে-কী ভাবে ওর কেরিয়ার শেষ করবে সেটা ওর নিজের চেয়ে ভাল জানার মতো জায়গায় কেউ নেই। ব্যক্তিগত ভাবে আমার যদিও সচিনকে সারা জীবন খেলতে দেখতেই ভাল লাগবে। তবু ওর সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। বিশেষ করে মাত্র কিছু দিন আগে আমার টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পথ ধরেই ওর এ দিনের সিদ্ধান্ত নেওয়াতে। সচিনের পক্ষে খুব সহজ ছিল গত বছর বিশ্বকাপ জেতার পরে ছেড়ে দেওয়া। তখন ও একেবারে সম্মানের চুড়োয় ছিল। প্রত্যেকে ধন্য ধন্য করছে। কিন্তু এখানেই সচিন তেন্ডুলকর নামের সৌন্দর্য!
ও কোনও দিন নিজেকে নিয়ে ভাবেনি। কোনও দিন ভাবেনি ওর ব্যক্তিগত কীর্তি নিয়ে। সচিন মানেইসর্বদা কী ভাবে ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য সর্বাধিক অবদান রাখা যায় এবং সেটা কখনও নিজের ভাবমূর্তির তোয়াক্কা না করেই। বিশ্বকাপ জেতার পর সচিনের ব্যক্তিগত প্রাপ্তি বলে ক্রিকেটে আর কিছুই পড়ে ছিল না। কিন্তু ক্রিকেট খেলাটার প্রতি তীব্র আবেগ আর ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতি গভীর ভালবাসা থেকে তারপরেও খেলে গিয়েছে। আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, কী মারাত্মক চোট-যন্ত্রণাকে হজম করে ও খেলে গিয়েছে। আমি নিশ্চিত ওই অবস্থায় নিশ্চয়ই ও অন্তত দু’-একবার ভেবেছে ওর শরীর আর টানতে পারছে নাএ বার সরে দাঁড়ানোই ভাল।
কিন্তু দলের জন্য সচিনের দায়বদ্ধতা এতটাই অবিশ্বাস্য রকমের বেশি যে, ও যে শুধু ওই ভয়ঙ্কর শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করে খেলে গিয়েছে তা-ই নয়। ধারাবাহিক ভাবে দেশের জন্য পারফর্ম করেছে। এতেই প্রমাণিত যে, ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ে সচিন কী অসীম রকম ভাবেভারতের হয়ে খেলাটা একজন খেলোয়াড়ের কাছে কতটা বেশি গৌরবের ব্যাপার।
শেষ কয়েক মাস সচিনের অবসর নিয়ে যে হারে কথা হয়েছে তাতে আমি গভীর ভাবে ব্যথিত। যত দিন না ও একশোতম আম্তর্জাতিক সেঞ্চুরিতে পৌঁছেছে, সবাই সেটা কবে হবে সেই নিয়ে চর্চা করেছে। যেই সচিন ওই দুর্লঙ্ঘ মাইলফলক ছুঁয়েছে, আলোচনাটা ঘুরে গিয়েছে, ও কবে অবসর নেবে? ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য যে মানুষটা এত করেছে তাকে নিয়ে এ রকম কথা দুর্ভাগ্যজনক। হ্যাঁ, সচিনের এখন কেরিয়ারের ভাল সময় যাচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু দেশকে ওর প্রচুর সম্মান এনে দেওয়াকে মাথায় রেখে আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, নিজের সাম্প্রতিক খারাপ ব্যাটিং ফর্ম সচিনকেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে।
আটানব্বইয়ে শারজায় সচিনের সেই মরুঝড়ের সময় মাঠের সবচেয়ে সেরা আসনটা আমি পাওয়ায় নিজেকে এখনও ধন্য মনে করি। কেননা, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সচিনের ওই ইনিংসটা আমি নন-স্ট্রাইকার প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখেছি। সে দিন যে ধরনের শট ও খেলেছিল, প্রতিটা শটে যে রকম পাওয়ার ছিল এককথায় অবিশ্বাস্য। খারাপ বা ভালপ্রায় সব বলই বাউন্ডারিতে আছড়ে পড়েছিল। ওভারের ফাঁকে আমি ওর সঙ্গে কোনও কথা বলতে গেলে ও প্রায় কোনও প্রত্যুত্তরই দিচ্ছিল না। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে সে দিন বুঝতে পারছিলাম, ও কী প্রচণ্ড রকম ফোকাসড রয়েছে। মাঠের টেনশন, গ্যালরির আওয়াজ কিছুই ওর মাথায় ঢুকছে না। সে দিন মাঠে যেন শুধু চারটে জিনিস ছিল সচিনের সামনেসচিন স্বয়ং। অস্ট্রেলিয়ান অ্যাটাক। বল। আর বাউন্ডারির দড়ি!
সচিনের ওয়ান ডে ব্যাটিংয়ের অসাধারণ পরিবর্তনটা ঘটেছিল চুরানব্বইয়ে ও ওপেন করতে শুরু করা থেকে। হঠাৎই বিপক্ষ বোলারদের ওপর পাহাড়প্রমাণ চাপ এসে পড়ল। কেননা, সচিন প্রথম ডেলিভারি থেকেই ঝড় তোলা শুরু করেছিল। যার নিটফল দাঁড়াল, যে ম্যাচেই সচিন রান পেয়েছে, ভারত খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করার জায়গায় চলে গিয়েছে। বাউন্ডারি-ওভারবাউন্ডারি মারার বাইরেও সচিনের রানিং বিটুইন দ্য উইকেটসও দারুণ ছিল। ওয়ান ডে-তে ওর ব্যাটিং যেমন দলের ‘ব্যাটিং রোটেট’ দুর্দান্ত ভাবে করত, তেমনই বিপক্ষ বোলার আর ক্যাপ্টেনকে চরম হতাশ করে তুলত। সাঁইত্রিশ বছর বয়সে একদিনের আন্তর্জাতিকের ইতিহাসে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করাটা সচিনের ফিটনেস আর রানের খিদের জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। আর একটা কথা। একদিনের ক্রিকেটে সচিনের বোলিংও যে কতটা কার্যকর সেটা কিন্তু আমাদের ভুললে চলবে না। মিডিয়াম পেসার বা স্পিনারদুই ভূমিকাতেই। অনেক বার ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে বল হাতে সচিন খেলার রং পালটে দিয়েছে। যার মধ্যে সেরা হল ইডেনে হিরো কাপ সেমিফাইনাল। দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ ওভারে জেতার জন্য ৬ রান দরকার ছিল। সচিন দিয়েছিল মাত্র ৩।
আসলে সচিনের ক্রিকেট-চিন্তনটাই অসাধারণ। স্ট্রিট-স্মার্ট ক্রিকেটার। যে খেলাটার চেয়েই সব সময় এক বা দু’পা এগিয়ে। সচিনের অবসরে ওয়ান ডে ক্রিকেট দরিদ্র হল। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট এবং নিজের জন্য যেটা শ্রেষ্ঠ, সচিন সে-ই সিদ্ধান্তই নিয়েছে।
ভাল থেকো, বন্ধু!
ক্রিকেট ঈশ্বরকে কুর্নিশ
ক্রিকেট দুনিয়ার মহাতারকারা সচিন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে যা বলেছেন
ওয়াসিম আক্রম
জানি না ওকে কী ভাবে বল করা উচিত। একটা ইনসুইঙ্গার দিলাম। ও কভার দিয়ে আমাকে বাউন্ডারিতে পাঠাল। আউটসুইঙ্গার দিলাম। সেই কভার দিয়েই বাউন্ডারিতে পাঠাল।
ম্যাথু হেডেন
আমি ভগবানকে দেখেছি।
তিনি ভারতের হয়ে টেস্টে
চার নম্বরে ব্যাট করেন।
ব্রায়ান লারা
সচিন জিনিয়াস।
আমি নিছকই
রক্তমাংসের মানুষ।
অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার
বিশ্বে দু’ধরনের ব্যাটসম্যান
আছে। এক, সচিন তেন্ডুলকর।
দুই, বাকিরা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.