তুলতুলে টেডি বিয়ারের গায়ে ছোট্ট একটা চিরকুট। তার নীচে লেখা ‘সান্তাক্লজের শুভেচ্ছা’। দেখেই ব্যারাকপুরের সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মুখে হাজার ওয়াটের বাল্ব জ্বলে উঠল। দরদাম না-করেই চার বছরের মেয়ে রিনির জন্য সেটি ‘প্যাক’ করে দিতে বললেন তিনি। নিউ মার্কেটের ভিড় ঠেলে সন্ধ্যায় শিয়ালদহে ফিরতি লোকাল ধরার তাড়া! বড়দিনের সকালে সান্তার তরফে এমন ভালুক পেলে মেয়ে যে কত খুশি হবে, বলতে বলতে তরুণ পিতা নিজেই আহ্লাদে আটখানা হয়ে উঠলেন।
আবহমান কালের বড়দিনের এই খুশির মেজাজেই রবিবার ধরা দিল কলকাতা। রাজ্য পর্যটন দফতরের সৌজন্যে গত দু’বছর ধরেই শহরের ক্রিসমাসে নতুন রঙের প্রলেপ। অন্তত দিন দশেক আগে থেকেই আলোর সাজে রূপসী পার্ক স্ট্রিট। পার্ক স্ট্রিটের কলকাতা ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালে এ বার বড়দিনের ‘মহালয়া’ হয়ে গিয়েছিল এক সপ্তাহ আগে। আর বড়দিনের আগে শেষ রবিবার, নিউ মার্কেটের ভিড় অষ্টমীর সন্ধ্যা মনে পড়িয়ে দিল।
|
থইথই ভিড় নিউ মার্কেটের এক কেকের দোকানে। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র |
রংচঙে ক্রিসমাস ট্রি, নানা রঙের ছোট-বড় তারা, বেলুন, বাঁশি, কাগজের বাহারি বেল্স, রঙিন কাগজে ছয়লাপ নিউ মার্কেট চত্বর। জ্যান্ত সান্তাক্লজ ও চার্লি চ্যাপলিনেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবহবিদদের পূর্বাভাস ব্যর্থ করে শহরে জাঁকিয়ে শীত পড়াতেও দ্বিগুণ ফুর্তি। কলকাতায় বিরল শীত ও বিরলতর শনশন উত্তুরে হাওয়ার আমেজের সম্মানেই ছুটির দিনের রাজপথ সুদৃশ্য জ্যাকেট-সোয়েটারের মিছিলে ঢেকে গেল। শীতের ফুর্তিতেই বড়দিনের কেনাকাটায় বাড়তি গতি। যা মালুম হল, নিউ মার্কেটের কেকের দোকানগুলিতে গিয়ে।
কী রকম সেখানের চিত্র? ‘নাহুম’ বা ‘ইম্পিরিয়াল’-এর মতো আদ্যিকালের দোকানে তিল ধারণের জায়গা নেই। বচ্ছরকার চেনা খদ্দেরও প্রচুর। চেনা মুখ দেখেই ইম্পিরিয়ালের পারভেজ রহমান এক গাল হেসে আপ্যায়ন করছেন। বড়দিন স্পেশাল প্লাম কেক, স্পেশাল ফ্রুট কেক ছাড়াও কুকিজ, ম্যাক্রুন বিকোচ্ছে হু-হু। এখন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ঘরে বিয়ের মরসুম। তাই নাহুমে বাদামের সাদা আইসিং-মাখা ওয়েডিং কেকেরও দারুণ কদর। বড়দিনের পার্টির জন্য নিউ মার্কেট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে টার্কি, সসেজের ব্যবস্থাও অনেকেই এ দিনই সেরে রেখেছেন।
শহরের আদ্যন্ত কসমোপলিটন মহল্লা বো-ব্যারাক্সেও সন্ধ্যা ঘনাতেই ঝলমলে আলোর সাজ। এ দিন সন্ধ্যায় গানবাজনার আসর বসল সেখানে।
নিউ মার্কেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করেছে এন্টালির অস্থায়ী দোকানগুলিও। পাশে তালতলা, রিপন স্ট্রিটের বাঙালি ক্রিশ্চান, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবারগুলি শুধু নয়, শহরতলি, মফস্সলের উৎসাহীদেরও সেখানে ভিড়। কলকাতার বড়দিন কিংবা বড়দিনের কলকাতা সবাইকেই আপন করে নিয়েছে।
|