দুধসাদা সেডান রবিবাসরীয় নির্জন রাতের বুক চিরে চেতলার কাছে দুর্গাপুর ব্রিজ দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল। জাঁকিয়ে পড়া শীতে গাড়ির সব কাচ তোলা। ভিতরে জোরেই বাজছে সাউন্ড সিস্টেম। রিয়ার মিররে চালক দেখলেন, দু’টি মোটরবাইকে পুলিশ তাড়া করেছে তাঁকে। অসম্ভব ঘাবড়ে গিয়ে থামালেন গাড়ি। নিউ আলিপুরের ওই বাসিন্দা বুঝতে পারছিলেন না, যে পথ ধরে প্রায় রোজ যাতায়াত করেন, সেখানে কী এমন ঘটল। তল্লাশির পরে দুই পুলিশকর্মী জানালেন, কাচ তোলা ছিল আর জোরে গান চলছিল বলে তাঁদের সন্দেহ হয়।
দিল্লির ধর্ষণ-কাণ্ডের পরে এ ভাবেই সতর্ক থাকছে কলকাতা পুলিশ। উৎসবের সময়ে সাধারণ মানুষ যাতে সর্বত্র পুলিশকর্মীদের চোখের সামনে পান, সেই ব্যবস্থাও করছে লালবাজার। উৎসবের মরসুমে বাগবাজার থেকে বেহালা, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় পৌনে দুশোটি পুলিশ পিকেট থাকছে। যেখানে সাধারণত রাতে গোটা শহরে ৬০টি মতো পিকেট থাকে। নতুন পিকেটগুলি রবিবার রাতেই চালু হয়ে গিয়েছে। রোজ রাত আটটা থেকে পরদিন ভোর চারটে-পাঁচটা পর্যন্ত সেগুলি কাজ করবে। থাকবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এক-একটি পিকেটে সর্বোচ্চ আট জন থেকে সর্বনিম্ন দু’জন পুলিশকর্মী থাকবেন। সেই হিসেবে বর্ষশেষের কলকাতার নৈশ-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন হয়েছেন হাজারের বেশি পুলিশকর্মী।
|
পথে পুলিশ-প্রহরা। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র |
পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা বলেন, “দিল্লির মতো ঘটনা এখানে ঘটতে দেওয়া যাবে না। তাই এত ব্যবস্থা। পথে যত বেশি পুলিশ থাকবে, মহিলাদের উপরে অপরাধ তত কমবে।” যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষের বক্তব্য, “দিল্লির মতো ঘটনা রুখতে সতর্কতামূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি। সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা বহু জায়গায় ছড়িয়ে থাকবেন।”
এ শহরেও বর্ষশেষের উন্মাদনা কোনও কোনও সময়ে কী ভাবে অপরাধে পর্যবসিত হয়, ১০ বছর আগে ইভটিজিং রুখতে গিয়ে সার্জেন্ট বাপি সেনের খুন হওয়া ছিল তার বড় উদাহরণ। তার চার বছর পরে, সেই ৩১ ডিসেম্বর পার্ক স্ট্রিটে মহিলাদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে দুই সেনা জওয়ানকে পুলিশ গ্রেফতার করলে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে একদল সেনা থানায় চড়াও হয়ে পুলিশদের মারধর করে। দুই সহকর্মীকে কার্যত ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে পার্ক স্ট্রিটের এক নাইটক্লাব থেকে এক মহিলাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে ধর্ষণের সাক্ষীও থেকেছে এই শহর।
পিকেটে কোথাও কোথাও পুলিশ যেমন মোতায়েন থাকবে, কোথাও আবার মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরবেন তাঁরা। কোনও সন্দেহজনক যানবাহন দেখলে, ভিতর থেকে কেউ সাহায্য চাইছেন মনে হলে মোটরসাইকেলে পুলিশ সেটির পিছু নিয়ে আটকাবে ও তল্লাশি করবে। সেই সঙ্গে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বাস, প্রাইভেট গাড়ি, ট্যাক্সি ও মোটরসাইকেল থামিয়েও তল্লাশি চালানো হবে।
শহরের ৭২টি জায়গায় নিয়মিত গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চলে। বর্ষশেষের রাতের কলকাতায় আরও ৪৮টি অর্থাৎ, মোট ১২০টি জায়গায় এ রকম তল্লাশি চালানো হবে। তা ছাড়া, এই প্রথম ফাঁকা জায়গার বাস টার্মিনাসেও নজর রাখা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি তালুক থেকে মহিলা কর্মীদের নিয়ে বাস তাঁদের যে সব মোড়ে নামায়, সেখানেও থাকছে পুলিশ।
সেই সঙ্গে পানশালার মালিকদের পুলিশ বলেছে, কোনও খদ্দের কোনও গায়িকার সঙ্গে অভব্যতা করলে পুলিশকে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হবে। না হলে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ পরে জানতে পারলে সেই পানশালার মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
|