আমরি হাসপাতালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর কেটে গিয়েছে এক বছর। অনেক মানুষের প্রাণের বিনিময়ে নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। রাজ্য জুড়ে সরকারি হাসপাতালে ঢেলে সাজার তোড়জোড় শুরু হয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। কিন্তু সত্যিই কী কোনও বদল হয়েছে জেলা হাসপাতালগুলির?
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে প্রতি দিন কয়েকশো মানুষ আসেন। হাসপাতাল চত্বরে রয়েছে মোট চারটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। কিন্তু হঠাৎ যদি আগুন লাগে তা হলে কী কাজে লাগবে ওই যন্ত্রগুলি? সন্দেহ প্রকাশ করলেন স্বয়ং হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার অরিত্র দও! তিনি বলেন, “আমরি হাসপাতালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে জেলা প্রশাসন ও দমকল বিভাগের পক্ষ থেকে পরিদর্শন করে অনেকগুলি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। প্রস্তাবগুলি পাঠানো হয় দমকলের উপর মহল পর্যন্ত। কিন্তু অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবহারের কোনও প্রশিক্ষণই এই হাসপাতালে দেওয়া হয়নি। পূর্ত দফতরের কাছে একটি জলাধারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তার উত্তর এখনও আসেনি।”
হাসপাতালে নিয়ে দেখা গেল, যে সব জায়গা থেকে আগুন লাগার সম্ভাবনা বেশি সেখানে কিন্তু নেই কোনও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। যেখানে মিটার বক্সগুলি রয়েছে, তার পাশে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের বদলে রয়েছে সাইকেল ও হাসপাতালে ব্যবহৃত দ্রব্য সামগ্রী। যে ওয়ার্ডগুলিতে রোগী ভর্তি থাকেন, তার কাছেও কোনও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র চোখে পড়ল না। রোগীদের ব্যবহারের জন্য রাখা অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া নেই কোনও অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার। চারটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মধ্যে একটি রয়েছে জরুরি বিভাগে, দু’টি এক্স-রে বিভাগে ও একটি রয়েছে বিদ্যুৎ ট্রান্সফর্মারের কাছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, যদি কোনও কারণে হাসপাতালে আগুন লাগে, তা হলে দমকলকে জল নিতে হবে হাসপাতালের চার তলায় রোগীদের ব্যবহারের জলাধার থেকে। হাসপাতালের উপর তলায় যদি কোনও কারণে আগুন লাগে, তা হলে রোগীদের বের করে আনার জন্য নেই আলাদা সিঁড়ি। হাসপাতালের স্যুইচ বোর্ডগুলিরও অবস্থা বেহাল।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে চন্দননগরের দমকল বিভাগের ওসি সমীর দাস বলেন, “একটা মহকুমা হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলার জন্য স্থায়ী প্রকল্পের প্রয়োজন। কয়েকটা অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার যথেষ্ট নয়। অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার থাকলেও উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত ব্যবহারের অভাবে প্রাথমিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতাল। প্রয়োজন স্থায়ী জলাধার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে অগ্নিনিরোধক যন্ত্রপাতি। হাসপাতালের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। আমরা সেই আবেদন আমাদের উচ্চপদস্থ কর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।” এই যেখানে পরিস্থিতি, সেখানে ভাগ্যের ভরসাতেই থাকতে বাধ্য হচ্ছে রোগী ও তাঁদের পরিবার। |