টেলিভিশনে অ্যানালগ সিগন্যাল বন্ধের সময়সীমা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। টিভিতে সেট টপ বক্স লাগানোর সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন বুধবার খারিজ করে দিয়েছে উচ্চ আদালত। ফলে ২৭ ডিসেম্বর রাত ১২টার পরে ওই বক্স ছাড়া টিভি না-চলারই কথা। তবে আদালত জানিয়েছে, কেন্দ্র সময়সীমা বাড়াতে চাইলে বাড়াতে পারে। কিন্তু আদালত এমন কোনও নির্দেশ দেবে না।
কেন্দ্র আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, ২৮ ডিসেম্বর থেকে সেট টপ বক্স ছাড়া টিভি সম্প্রচার চলবে না। ওই সময়সীমা তারা মানবে না বলে জানিয়ে দেয় রাজ্য। কিন্তু হাইকোর্টের এ দিনের রায়ের পরে রাজ্য সরকার অস্বস্তিতে পড়ে গেল। কেন্দ্র ও রাজ্যের কাজিয়ায় বিপাকে পড়েছে মাল্টি সিস্টেম অপারেটর (এমএসও) সংস্থাগুলি। টিভি দর্শকেরাও বিভ্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে এ দিনই সন্ধ্যায় কলকাতা মেট্রো এলাকার সব এমএসও নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসে। পরে নিজেদের অসহায়তার কথা জানিয়ে কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছে একটি চিঠি পাঠায়।
টিভিতে অ্যানালগ না ডিজিটাল সিগন্যাল সম্প্রচার করা হবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে বলে জনস্বার্থের মামলা করেন এক আইনজীবী। এ দিন তারই শুনানি হয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে। আবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন জায়গায় সেট টপ বক্সের বিভিন্ন রকম দাম নেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া ডিজিটাল সিগন্যালের মাধ্যমে টিভি সম্প্রচারের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি। বিভিন্ন চ্যানেলের মাসিক ভাড়া নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এই সব সমস্যা বা বিভ্রান্তির সুরাহার পরেই যাতে অ্যানালগ সম্প্রচার বন্ধ করা হয়, সেই নির্দেশ দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয় আদালতে। সেই সঙ্গে আর্জি জানানো হয়, সেট টপ বক্স লাগানোর সময়সীমা বাড়িয়ে আদালত অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করুক।
কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। আদালত জানিয়ে দেয়, ডিজিটাল সম্প্রচারের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা কিংবা যন্ত্রের দাম স্থির করে দেওয়ার বিষয়ে রাজ্যকে চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে হবে। তবে কোনও ভাবেই সেট টপ বক্স লাগানোর সময়সীমা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া যাবে না। বিচারপতিরা আরও জানান, কেন্দ্রীয় সরকার যদি সময়সীমা বাড়াতে চায়, বাড়াতে পারে। কিন্তু এই নিয়ে আদালত নির্দেশ জারি করবে না।
কেন্দ্র সেট টপ বক্স চালু করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে সব চেয়ে বেশি সরব হয়েছিলেন রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এ দিন হাইকোর্টের রায়ের পরে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “এমএসও এবং কেব্ল অপারেটরদের নিয়ে শীঘ্রই বৈঠক করব। সেখানেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে। তার আগে কিছু বলছি না।”
হাইকোর্টে সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় শহরের সব এমএসও সংস্থার প্রধান কর্তারা সল্টলেকে বৈঠক করেন। অ্যানালগ সম্প্রচার বন্ধের উপরে রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে। বিভিন্ন প্রতিনিধিদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক শহরের এমএসও সংস্থাগুলির কাছ থেকে মুচলেকা লিখিয়ে নিয়েছে। তারা বলে দিয়েছে, সেট টপ বক্স লাগানোর সময়সীমা এর আগে অনেক বারই বাড়ানো হয়েছে। অনন্ত সময় ধরে সময় বাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ২৭ ডিসেম্বর রাত ১২টার মধ্যে দফায় দফায় অ্যানালগ সিগন্যাল বন্ধ করার কাজ সেরে ফেলতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার কড়া ফতোয়া জারি করেছে, ওই সময়সীমা মানা হবে না।
অ্যানালগ সম্প্রচার বন্ধ করলে এমএসও সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুমকি দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। এই জাঁতাকলে পড়ে এমএসও-রা কী করবে, তাদের ব্যবসার নিরাপত্তাই বা কী ভাবে রক্ষিত হবে, তা জানতে চেয়ে কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে। |