|
|
|
|
|
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় স্থগিতাদেশ রদ
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বলবৎ স্থগিতাদেশ খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। অর্থাৎ, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ নিজেদের নির্ধারিত দিনেই শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিতে পারবে। বুধবার আদালতের এই নির্দেশের পরে পর্ষদ-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ বার তাঁরা নতুন পরীক্ষার দিন স্থির করে যথাসময়ে সংশিষ্ট সকলকে অবহিত করবেন।
হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্তের সিঙ্গল বেঞ্চের জারি করা স্থগিতাদেশ রদ করলেও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত এ দিন বেঁধে দিয়েছে বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি তরুণ দাঁ’র ডিভিশন বেঞ্চ। শর্তগুলো হল: সফল পরীক্ষার্থীদের দু’টো আলাদা মেধা-তালিকা বানাতে হবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের জন্য একটা, প্রশিক্ষণহীনদের জন্য একটা। আগে প্রথম তালিকা থেকে নিয়োগ হবে। পরে দ্বিতীয় তালিকার প্রার্থীদের চাকরি দিতে পারবে পর্ষদ। এবং বিচারপতি করগুপ্তের আদালতে মূল মামলার ফলাফলের উপরেই যে ওই সব চাকরির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে, ডিভিশন বেঞ্চ তা-ও জানাতে ভোলেনি। তাই এ দিনের নির্দেশ রাজ্য সরকারের পক্ষে স্বস্তিদায়ক হলেও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়ারও বিশেষ অবকাশ নেই বলে আইন ও প্রশাসনের কোনও কোনও মহল মনে করছে।
পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষকের প্রায় ৪৪ হাজার পদ খালি। মোট আবেদনকারী ৫৫ লক্ষ, যাঁদের ১৪ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের অর্থ: তালিম-পাওয়া (অর্থাৎ দু’বছরের ডিপ্লোমা-ইন-এলিমেন্টারি এডুকেশন, সংক্ষেপে ডিএলএড পাঠ্যক্রম উত্তীর্ণ) ১৪ হাজার প্রার্থীর মধ্যে যাঁরা পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে মেধা-তালিকায় ঠাঁই করে নিতে পারবেন, তাঁরা প্রথমে নিয়োগপত্র পাবেন। তার পরে প্রশিক্ষণহীন কৃতকার্যদের তালিকা থেকে নিয়োগ শুরু হবে।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রাথমিক শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে গত ১৫ অক্টোবর সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পর্ষদ। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষায় বসতে হবে ডিএলএড’দেরও। কিন্তু পরীক্ষা ছাড়াই প্রশিক্ষিতদের নিয়োগের দাবিতে হাইকোর্টে যান ১ হাজার ডিএলএড আবেদনকারী। ওঁদের যুক্তি ছিল, এনসিটিই-র নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সঙ্গে অন্যদের পরীক্ষা নেওয়া যায় না। ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)-এর আইনজীবীও তাঁদের সমর্থন করেন। অন্য দিকে পর্ষদের বক্তব্য ছিল, প্রশিক্ষিতদের স্বীকৃতি দিতেই তাঁদের নিয়োগ-পরীক্ষায় অতিরিক্ত ২০ নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শেষমেশ আবেদনকারীদের বক্তব্যকে আপাতগ্রাহ্য ধরে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত জানিয়ে দেন, পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষক পদে কোনও পরীক্ষা পর্ষদ নিতে পারবে না। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছিলেন, ৫৫ লক্ষ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নিতে কয়েক কোটি টাকা খরচ হবে। চূড়ান্ত রায় রাজ্যের বিপক্ষে গেলে টাকাটা জলে যাবে।
সিঙ্গল বেঞ্চের স্থগিতাদেশটিকে পর্ষদ ও রাজ্য সরকার পৃথক ভাবে চ্যালেঞ্জ করেছিল বিচারপতি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। তাতে বলা হয়, সকলের জন্য শিক্ষার অধিকার আইনে সংবিধানের ২১(ক) ধারা মোতাবেক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা রাজ্য সরকারই ঠিক করবে, সেখানে এনসিটিই বা অন্য কেউ নাক গলাতে পারে না। সংবিধানিক দায়িত্ব বড়, নাকি অর্থ খরচ, বেঞ্চের সামনে সে প্রশ্নও রাখা হয়েছিল। দু’পক্ষের সওয়াল শেষে ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন স্থগিতাদেশ খারিজ করে দিয়ে বলেছে: বহু ছেলে-মেয়ে চাকরি পাবে। শিক্ষকের অভাবে অনেক স্কুল চালানো যাচ্ছে না, রাজ্য সরকারের হাতে টাকাও রয়েছে। তাই পরীক্ষা বন্ধ করার কোনও মূল্য নেই। আর এই নির্দেশের মাধ্যমে হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের ব্যাখ্যাকেই কিছুটা মান্যতা দিল বলে আইনজীবী মহলের একাংশের অভিমত। আবার নিয়োগ-পরীক্ষা গ্রহণে সবুজ সঙ্কেত দিলেও ডিভিশন বেঞ্চ কিন্তু এ দিন জানিয়ে দিয়েছে, বিচারপতি করগুপ্তের আদালতে থাকা মূল মামলাটির নিষ্পত্তির উপরেই প্রার্থীদের চাকরির ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। সে ক্ষেত্রে মামলায় সরকারপক্ষের হার হলে রাজ্যকে ফের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করতে হবে।
পর্ষদ কী বলছে? প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছিল, নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া হবে ২৩ ডিসেম্বর। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন দিনক্ষণ এখনও স্থির হয়নি। পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য জানান, ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ খতিয়ে দেখে তাঁরা পরীক্ষার নতুন দিন চূড়ান্ত করবেন।
|
হাইকোর্টের শর্ত
• প্রশিক্ষিত, প্রশিক্ষণহীনদের জন্য দু’টি মেধা-তালিকা
• আগে তালিমপ্রাপ্তদের তালিকা থেকে নিয়োগ
• পরে প্রশিক্ষণহীনদের তালিকা থেকে চাকরি |
|
|
|
|
|
|