খুনের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এ বার গুলিচালনার ঘটনা ঘটল বনগাঁর গোপালনগরের গঙ্গানন্দপুর এলাকায়। কয়েক দিন আগে স্থানীয় মহৎপুরে ওই ঘটনায় এলাকার মানুষ রীতিমতো নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছেন। গ্রামবাসীদের দাবি, ওই দিন রাতে ১০ থেকে ১২ রাউন্ড গুলি চলে। পরদিন এলাকায় দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের প্রতিবাদে বাসিন্দারা গোপালনগর থানায় গিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ করেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশের কাছে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে ফিরে আসেন তাঁরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সীমান্ত এলাকা এবং দেশের অন্যতম রফতানি বন্দর হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই এই মহকুমায় নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজকর্ম ঘটে। বিশেষ করে গরু পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। চাষের জমির উপর দিয়ে গরুর পাল নিয়ে যাওয়ায় ফসল নষ্ট তো হচ্ছেই। তার উপর পাচারকারীদের বাধা দিতে গিয়ে তাদের হাতে মারধর খেয়ে জখম হওয়া থেকে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। |
• ২২ মার্চ: মোটর সাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে বনগাঁর বক্সীপল্লিতে গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী।
• ২৭ মার্চ: খাবারে মাদক মিশিয়ে বাড়িতে চুরি বর্ণবেড়িয়ায়।
• ১১ অক্টোবর: বাড়ি ফেরার পথে খুন হন পরিমল বসু নামে এক সরকারি কর্মী।
• ১৮ মে: পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় এক ব্যক্তিকে গুলি করে খুন।
• ২৫ মে: বনগাঁর বাটার মোড়ে একটি সোনার দোকানে ডাকাতি। দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় জখম ন’জন পথচারী।
• ৮ নভেমম্বর: গোপালনগরের মামুদপুর বাজারে খুন হন তৃণমূল নেতা অরুণকুমার বিশ্বাস।
• ৩ ডিসেম্বর: গোপালনগরের সুন্দরপুরে যুবককে গুলি করে খুন।
• ১২ ডিসেম্বর: গোপালনগরের মহৎপুরে দুষ্কৃতীদের এলোপাথারি গুলি। |
|
এমনকী অতি সম্প্রতি বনগাঁ-চাকদহ রোডে সন্তোষপুরের কাছে পথ দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজন-সহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িয়েছে গরু পাচারকারীদের নাম। পাশাপাশি মাদক পাচারের দুষ্টচক্রও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কয়েক মাস আগেও চুরি-ছিনতাই, ডাকাতির জেরে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন বনগাঁবাসী। দিনে-দুপুরে ছিনতাই রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছয় যে ব্যাঙ্কে যেতে ভয় পেতে শুরু করেছিল মানুষ। তদন্তে দেখা গিয়েছিল এই সব দুষ্কৃতীদের অনেকেই বাংলাদেশে থেকে এসে এখানে চুরি-ছিনতাই করে ফের সীমান্ত পেরিয়ে সে দেশে ফিরে যায়। বাংলাদেশে থেকে দুষ্কৃতী আনাগোনার সঙ্গে বেড়েছে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমা। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তোলাবাজির অভিযোগও উঠছে হামেশাই।
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “সীমান্ত এলাকায় অপরাধ দমনে পুলিশ-বিএসএফ সমন্বয়ে টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। গরু পাচার রুখতে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। তবে মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। কয়েকটি ঘটনায় দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন খুন, ডাকাতির ঘটনার তদন্ত চলছে। দোষীরা রেহাই পাবে না।” |