এ বার ‘আমরা-ওরা’র বেড়া ভাঙল হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতিতে।
বেড়া ভাঙলেন উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অশোক ঘোষ। রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই সিপিএম নেতাদের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল সরকার ওই সমবায় সমিতির পরিচালন বোর্ড ভেঙে দিয়েছিল। সম্প্রতি অশোকবাবুর সুপারিশ মেনে রাজ্য সরকার ওই সমবায়ে যে মনোনীত বোর্ড তৈরি করেছে, তাতে জায়গা পেয়েছেন অধিকাংশ সিপিএম নেতা।
এ ক্ষেত্রে উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়কের যুক্তি, “সমবায়ের নিয়ম অনুযায়ী বোর্ডে সদস্য মনোনীত হয় ব্যবহারকারী সদস্য ও কর্মচারী সদস্যদের মধ্যে থেকে। দুই ক্ষেত্রেই আমাদের দলের উপযুক্ত সদস্য ছিল না। তাই সিপিএম নেতাদের নামই সরকারের কাছে পাঠাতে হয়েছিল।”
রাজ্যের সমবায় ও অভ্যন্তরীণ জলপথ মন্ত্রী হায়দর আজিজ সফির অবশ্য দাবি, তিনি জানতেন না যে, পরিচালন বোর্ডে সিপিএম নেতাদের নাম রয়েছে। তিনি বলেন, “আমার কাছে যাঁদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তাঁদের উপযুক্ত মনে করেই বোর্ডের সদস্য মনোনীত করেছি। সিপিএম নেতারা আছে জানলে করতাম না।”
এ দিকে, উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়কের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতিতে জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি অরূপেশ ভট্টচার্যের গোষ্ঠী ও অশোক ঘোষের গোষ্ঠীর অর্ন্তদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। অরূপেশ গোষ্ঠীর অভিযোগ, ওই সমবায়ে বর্তমানে আইএনটিটিইউসি-র বহু সদস্য রয়েছেন। অথচ, বোর্ডে তাঁদের জায়গা দেওয়া হয়নি। অশোকবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর অভিযোগ, আসলে অরূপেশ গোষ্ঠীর ডানা ছাঁটতেই এ ভাবে মনোনীত বোর্ডে সিপিএমের লোক ঢোকানো হয়েছে। তা করায় থমকে গিয়েছে ওই সমিতির আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত যাবতীয় তদন্ত।
হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতিতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে বামফ্রন্ট আমলেই। তখন সিটু-র অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে প্রায় বন্ধ হতে বসে লঞ্চ চলাচল। এর মধ্যে সিটুর নেতৃত্বে তৎকালীন বোর্ডের কর্মকর্তা সিপিএম নেতাদের অফিসে আটকে রেখে জোর করে ৪০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করে নেয়। এই নিয়ে পুলিশে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগও দায়ের হয়।
এর মধ্যে ২০১১ সালের মে মাসে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। তিন মাসের মধ্যেই রাজ্য সরকার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে সিপিএম প্রভাবিত বোর্ড ভেঙে দিয়ে এক জন সরকারি প্রশাসক নিয়োগ করে। সমবায় দফতরকে আর্থিক অনিয়মের ব্যাপারে কয়েক জন কর্মীর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্তও শুরু হয়। সমবায় দফতর সূত্রে খবর, যাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়, তাঁদের এক জন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতার আত্মীয়। অভিযোগ, সেই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার আগেই গত ২৫ অক্টোবর রাজ্য সরকার একটি মনোনীত পরিচালন বোর্ড গঠন করে। তাতে যাঁদের সদস্য মনোনীত করা হয়, তাঁরা অধিকাংশই হাওড়ার প্রভাবশালী সিপিএম নেতা। ৯ জনের ওই বোর্ডে একমাত্র চেয়ারম্যান হিসেবে যাঁকে রাখা হয়, তিনি ওই সমিতির আইএনটিটিইউসি নেতা ও কর্মী প্রণব ঘোষ। যিনি উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অশোক ঘোষের অনুগামী বলে পরিচিত।
জেলা আইএনটিটিইউসি সভাপতি অরূপেশ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, জেলার নেতাদের অন্ধকারে রেখে এই বোর্ড তৈরি হয়েছে। অরূপেশবাবুর প্রশ্ন, “যে দলের কিছু নেতার বিরুদ্ধে ওই সমবায়ে চুরি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, সে দলের নেতাদের কেন বোর্ডে জায়গা দেওয়া হল? কেনই বা তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হল না? এ নিয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।” |