|
|
|
|
অপহৃত পাঁচ বছরের মাহি মুক্ত ২৭ দিন পর
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
অপহরণ হওয়ার ২৭ দিন পর, ছোট্ট মাহিকে ফেরত দিল জঙ্গিরা। প্রায় মাসখানেক ধরে গভীর জঙ্গল-পাহাড়ে, জঙ্গি ডেরায় কাটিয়েও ভেঙে পড়েনি ৫ বছর বয়সী মাহি। বরং ঠান্ডা মাথায় পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছে অপহরণকারীদের নাম, চেহারার বর্ণনা।
ঘটনার শুরু গত ২৩ নভেম্বরে। বাক্সা জেলার দরঙামেলার শশীপুর এলাকায়, ডন বসকো স্কুলের সামনে দাঁড়িয়েছিল মাহি। কিন্তু বাড়ির লোক আসার আগেই দু’টি বাইকে চেপে চার যুবক তাকে তুলে নিয়ে যায়। সেই থেকে মেয়ের খোঁজ পাচ্ছিলেন না ভুটানের সামদ্রুপঝংকারের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী সঞ্জীব গোয়েল। পরে অপহরণকারীরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে মুক্তিপণ দাবি করে। এ দিকে, পুলিশ চেষ্টা চালিয়েও মাহির সন্ধান পায়নি। তবে সম্প্রতি, বিরসা কম্যান্ডো ফোর্স-এর দ্বিতীয় প্রধান নেতা মিথিয়াস হেমব্রম ধরা পড়ার পরে মাহি অপহরণকাণ্ডে সামান্য আলো পড়ে। মিথিয়াস জানান, মাহি বেঁচে রয়েছে। তার মুক্তিপণ বাবদ ৫ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যেই সঞ্জীববাবুর কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছে অপহরণকারীরা। তারপরেও মেয়েকে না ছাড়ায় ভেঙে পড়েন সঞ্জীববাবু। পুলিশও দিশাহারা হয়ে যায়।
আজ ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ সঞ্জীববাবুর মোবাইলে অচেনা নম্বর থেকে একটি ফোন আসে। বলা হয়, তাঁর মেয়ে ভারত-ভুটান সীমান্তের পাহাড়পুরে রয়েছে। ফোনে বলা এলাকায় এসে সঞ্জীববাবু সেই স্কুলের পোশাকেই মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। সেখান থেকে সোজা মেয়েকে নিয়ে বাড়ি চলে যান তিনি। পরে পুলিশ মাহিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশ ও সাংবাদিকদের মাহি জানায়, তাকে পাহাড়ের গভীর জঙ্গলে রেখেছিল অপহরণকারীরা। রাতে রাখা হত গাছের উপরের মাচায়। শীতের আচ্ছাদন বলতে ছিল বস্তা। খেতে দেওয়া হত ভাত। তাকে মারধর করা হয়নি। চার অপহরণকারীর নামও জানায় সে। মেয়ের আশা ছেড়ে দেওয়া সঞ্জীববাবু এখন মেয়েকে ফিরে পেয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “হয়তো আমার মেয়ের উপরে ওদেরও মায়া পড়ে গিয়েছিল। তাই প্রাণে না মেরে ফিরিয়ে দিয়েছে।”
পুলিশের মতে, মাহি যে অপহরণকারীদের কথা বলেছে তারা অসম পিপল্স আর্মি বা আপার সদস্য। সম্ভবত, বিরসা কম্যান্ডো ফোর্স ও আপা যৌথভাবে অপহরণকাণ্ডটি ঘটিয়েছে। মুক্তিপণ নিতে এসেছিল বিরসার দুই সদস্য। মাহির দেখভাল করে আপার সদস্যরা। আপাতত অপহরণকারীদের সন্ধানে তল্লাশিতে নেমেছে পুলিশ।
আর ২৭ দিন পরে, পরিবারের সবাইকে কাছে পেয়ে বেজায় খুশি ছোট্ট মাহি। কে বলবে, এই মেয়ে, পাহাড়-জঙ্গলে, চূড়ান্ত কষ্টে, ২৭টি শীতের রাত জঙ্গিদের সঙ্গে কাটিয়ে সদ্য ফিরেছে! |
|
|
|
|
|