বিশ্ব-হিতে ভারত-চিন বিনিময়ে জোর প্রণবের
বীন্দ্র ভাবধারার উল্লেখ করে ভারত ও চিনের সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে নতুন করে মনে করিয়ে দিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। উপলক্ষ ছিল বুধবার শান্তিনিকেতনের উত্তরায়ণে রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তির একশো বছর উপলক্ষে আয়োজিত একটি আলোচনাসভা। নিজের বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি বারবারই তুলে আনলেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে চিনের যোগাযোগের প্রসঙ্গ। তারই সূত্রে তুলে ধরলেন দুই সুপ্রাচীন রাষ্ট্রের পারস্পরিক আদানপ্রদানের কথাও। প্রণববাবুর উপলব্ধি, “ভারত ও চিনের সম্পর্ক এখন একটি বিশেষ বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে। এই সময় দাঁড়িয়ে দুই দেশ নিজেদের ভাবনা ও সম্পদকে বিনিময় করলে বিশ্ব শান্তি ও কল্যাণের ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।”

এক মঞ্চে।—নিজস্ব চিত্র।
বিশ্বভারতী ও নয়া দিল্লির ইন্সটিটিউট অফ চাইনিজ স্টাডি-র যুগ্ম উদ্যোগে আয়োজিত এ দিনের অনুষ্ঠানটি মূলত ছিল একটি আলোচনাসভা ‘ভাইব্রেশন্স অফ টেগর অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড: কালচার অ্যান্ড লিটরেচার উইথ স্পেশাল রেফারেন্স টু চায়না’। তার আগেই ছিল রাষ্ট্রপতির ভাষণ। ভাষণের শুরুতেই প্রণববাবু বলেন, “সাহিত্য ও সংস্কৃতির আদানপ্রদানের মাধ্যমে একে অপরকে জেনে, সমগ্র বিশ্ব সভ্যতাকে জানার ভাবনা রবীন্দ্রনাথকে মুগ্ধ করেছিল।” বিশ্বভারতীতে দেশ, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে একটি বিশ্বজনীন সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র তৈরি করে রবীন্দ্রনাথ তাঁর সেই ভাবনারই বিকাশ ঘটিয়েছিলেন বলে তাঁর মন্তব্য।
প্রণববাবু তাঁর আলোচনায় তুলে ধরেন কী ভাবে রবীন্দ্রনাথের নোবেল পাওয়ার পরে দুই দেশের সম্পর্কের মোড় ঘুরে যায়। ১৯১৫ সালেই তাঁর কবিতা ও গল্পের অনুবাদ হতে থাকে চিনা ভাষায়। চিনের কাছে রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন ‘ভারতের সূর্য’। তাঁর মত, “বস্তুগত চাহিদা বা শক্তি অর্জনের জন্য নয়, নাগরিক কল্যাণেই এই দুই এশিয় প্রতিবেশীর সম্পর্ককে আরও জোরদার করা প্রয়োজনীয় বলে মনে করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।”
রাষ্ট্রপতির সারাদিন
• সকাল সাড়ে ১০টা। শান্তিনিকেতন থেকে হেলিকপ্টারে করে সিউড়িতে নিজের কলেজে। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি মঞ্চে ওঠেন। অনুষ্ঠানে ১ ঘণ্টা ছিলেন। এক ঘণ্টা পরে অনুষ্ঠান শেষে কলেজে ‘চা-চক্রে’ যোগ দেন। সেখানে ১০ মিনিট সময় কাটান।
• বেলা ১১.৫৫। চলে যান হেলিপ্যাডের দিকে।
• দুপুর ১২.৪০। শান্তিনিকেতনে নামেন তিনি। কয়েক মিনিটের জন্য রথীন্দ্র অতিথিগৃহে জিরিয়ে নেন।
• ১টা ৫ মিনিট। উত্তরায়ণে অনুষ্ঠান মঞ্চে যোগ দিয়ে নিজে বক্তব্য রাখেন।দুপুর ২.১৫ মিনিট পর্যন্ত মঞ্চে ছিলেন। উত্তরায়ণেই দুপুরের আহার সারেন লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বভারতীর উপচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত, চিত্রকর যোগেন চৌধুরী-সহ বিশিষ্টজনের সঙ্গে। আহারে ছিল লুচি, ভাত, বেগুন ভাজা, শুক্ত, মুগ ডাল, পছন্দের পোস্তর বড়া, চাটনি, গুড়ের সন্দেস, দই।
আহারের আগে যোগেন চৌধুরী নিজের হাতে আঁকা রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি তুলে দেন রাষ্ট্রপতির হাতে। সেই সময় বিশ্বভারতীর খেয়াল খাতায় বিশ্বভারতী সম্পর্কে কিছু লেখার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন উপাচার্য। তাতে তিনি শুধু সই করেন।
• বিকেল ৩.১০। শান্তিনিকেতন ছাড়েন রাষ্ট্রপতি।
এ দিন প্রণববাবু তাঁর ভাষণে বারবারই ‘বিশ্ববোধ’ তৈরির পেছনে রবীন্দ্রনাথের গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা সাধারণত নানা দেশ ও জাতির মধ্যে দূরতিক্রম্য সীমানাকেই দেখতে পাই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মতো মহান ব্যক্তিরাই তা অতিক্রমে বিশ্বাস জোগান। সাহিত্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি যে সাধারণ মানবিক আদর্শকেই প্রকাশ করে, তার সাহায্যেই ওই সীমানা সহজেই অতিক্রম করা যায়।” রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তিরও একশো বছর পার হয়ে গেল। কিন্তু এত বছরে কেটে গেলেও রবীন্দ্রনাথ তখন যেমন প্রাসঙ্গিক ছিলেন, এখনও তাঁর সেই প্রাসঙ্গিকতা অটুট রয়েছে বলেই মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি।

চিনে জনপ্রিয় ছিল রবীন্দ্র-কবিতা: অমর্ত্য

তান চুঙ-এর সঙ্গে করমর্দন। —নিজস্ব চিত্র।
রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তির শতবর্ষ। সেই উপলক্ষে বুধবার শান্তিনিকেতনের চিনা ভবনে আয়োজিত এক আলোচনাচক্রে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মন্তব্য, “রবীন্দ্রনাথ চিনের সঙ্গে এতটাই একাত্ম বোধ করেছিলেন যে পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ডাক দিয়েছিলেন তিনি।” চিনে যে সেই সময়ে রবীন্দ্র-কবিতাও বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছিল তা-ও মনে করিয়ে দেন তিনি। অমর্ত্য বলেন, “আশা করছি, চিন আগামী দিনে স্বাধীন চিন্তা ধারায় অগ্রগতি ঘটাবে। চিনের কাছ থেকে বিরাট কিছু শিক্ষা নেওয়ার আছে।” অমর্ত্য সেন ছাড়াও অনুষ্ঠানের অন্যতম বক্তা ছিলেন চিনাভবনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তান ইউন শান-এর ছেলে তান চুঙ। তাঁর মন্তব্য, “ভারত বা বাংলার তুলনায় চিনে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি অনেক বেশি সমাদৃত।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.