|
|
|
|
টাকা-ক্ষমতার সস্তা আস্ফালন মুখ পোড়াচ্ছে দিল্লির
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
উন্নয়নের আলোর নীচেই অপরাধের আঁধার! রাজধানী দিল্লিতে এক দিকে যখন নগরায়ণের ঢেউ উঠেছে, অন্য দিকে তখন এই শহরের বুকেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ধর্ষণ।
কমনওয়েলথ গেমস ঘিরে গত কয়েক বছরে দিল্লির নাগরিক পরিকাঠামোর অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। শহরের কোণায় কোণায় ঝাঁ-চকচকে শপিং মল, আকাশছোঁয়া আবাসন। যেখানে এক একটি ফ্ল্যাটের দাম শুরুই হচ্ছে কোটি টাকা থেকে। সেই রাজধানী সম্পর্কেই জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য বলছে, ধর্ষণের হিসেবে অন্তত গত পাঁচ বছর ধরে দেশের অন্যান্য সমস্ত মেট্রো শহরকে পিছনে ফেলে রেকর্ড গড়েছে দিল্লি। যে কোনও বছরে কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাই ও বেঙ্গালুরুতে মোট ধর্ষণের ঘটনার চেয়ে শুধু দিল্লিতে ধর্ষণের সংখ্যা বেশি।
মেট্রো শহর শুধু নয়, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যকেও পিছনে ফেলেছে দিল্লি। রাজ্যগুলির আয়তন বেশি, লোকসংখ্যাও বেশি। অথচ দিল্লিতে যেখানে প্রতি এক লক্ষ মহিলার নিরিখে ধর্ষণের গড় ৭.২, সেখানে হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশে
এই সংখ্যাটা যথাক্রমে ৬.২, ৫.৪ ও ২.৫। পুলিশের হিসেব বলছে, ধর্ষণের পাশাপাশি অন্যান্য সব রকম যৌন নিগ্রহের ঘটনাও দিল্লিতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। |
ধর্ষণের
রাজধানী |
২০১০ : ৫০৭
২০১১ : ৫৭২
২০১২ : ৬৩৫ |
(১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত) |
|
কেন এই দুর্গতি দিল্লির?
রাজধানীর আদত বাসিন্দা থেকে সমাজতত্ত্ববিদ, মহিলাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা মনে করছেন, দিল্লির একটা বড় অংশের মানুষের হাতে হঠাৎ করে প্রচুর কাঁচা টাকা এসে গিয়েছে, যার অনেকটাই অসদুপায়ে আয় করা। বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, এই টাকার উৎস হল জমি-বাড়ির দালালি। সাম্প্রতিক ঘটনাটিতে ধৃতদের মধ্যে রয়েছে এক বাসচালক ও তার ভাই, এক ফলওয়ালা, এক জিম ইনস্ট্রাক্টর। চরিত্রগুলোকে কলকাতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে। এদের অনেকেরই হাতে আছে নানা ভাবে আয় করা টাকা, তার সঙ্গে রয়েছে দুর্বিনীত, বেপরোয়া মেজাজ। রাজধানীতে বাস করার ফলে রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক স্তরে যোগাযোগও তৈরি হয়েছে এদের অনেকের। টাকা আর ক্ষমতায় ভর করে এই শ্রেণির লোকেরা, বিশেষত উঠতি বয়সের যুবকরা নামছে অ্যাডভেঞ্চারে। এদের বিশ্বাস, পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ছাড় পাওয়া যাবে। কাজেই আইনের ভয় নেই। এমনিতেই দিল্লিতে শহরের আদি বাসিন্দার চেয়ে অন্যান্য রাজ্য থেকে পড়াশোনা, ব্যবসা বা চাকরি করতে আসা লোকের সংখ্যা বেশি। ফলে একই পাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যেও সামাজিক বন্ধন নেই। এমন নানা কারণেই দিল্লিতে ধর্ষণের ঘটনা এত বাড়ছে। এর জন্য কোনও রাজনৈতিক দলকে দায়ী করে লাভ নেই। এটা একটা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অসুখ বলে মনে করছেন সবাই।
অভিনেতা রাহুল বসু যেমন বলছেন, “দিল্লির মেয়েটির উপর অত্যাচার ও গণধর্ষণ প্রমাণ করে, মহিলাদের উপর নির্যাতনের একটা বিরক্তিকর শহুরে ধারা তৈরি হয়েছে।” দিল্লির গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী সেহবা ফারুকির মতে, “দিল্লির গ্রামগুলিতেও এখন হুহু করে নগরায়ণ হচ্ছে। যার ফলে এমন একটা নতুন শ্রেণির উদ্ভব হয়েছে, যারা উপরতলার মানুষ নয়, আবার চাকুরিজীবী বা সরল সাদাসিধে গ্রামবাসীও নয়। ধর্ষণের মতো বেশির ভাগ অপরাধই এদের অ্যাডভেঞ্চার আর পেশিশক্তির থেকে জন্ম নিচ্ছে।” জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মার সাফ কথা, “অল্প বয়স থেকেই মহিলাদের সম্মান করাতে শেখাতে হবে।” আবার সেন্টার ফর সোশ্যাল রিসার্চের ডিরেক্টর রঞ্জনা কুমারী মনে করেন, মহিলাদের উপর অপরাধের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি, এই ধরনের অপরাধ ঠেকাতে দিল্লির মতো শহরে, যেখানে বিভিন্ন ভাষাভাষীর বাস, সেখানে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশের নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করতে হবে। |
|
|
|
|
|