|
|
|
|
ধর্ষণে দু’নম্বরে, নারী নির্যাতনে শীর্ষে বাংলা
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
শুধু দিল্লিই নয়। মহিলাদের উপর অত্যাচারের প্রশ্নে পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও। বলছে জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই ধর্ষণের ঘটনাকে সাজানো অভিযোগ বলে দাবি করুন না কেন, ২০১১-র হিসেব বলছে, ধর্ষণে দেশের মধ্যে দু’নম্বরে রয়েছে তাঁর রাজ্য। আর (ধর্ষণ, পণ বা অন্যান্য কারণে নিগ্রহ, খুন, পাচার এই সব ধরনের অপরাধ মিলিয়ে) নারী নির্যাতনে এই রাজ্য ছিল এক নম্বরে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য জানাচ্ছে, শুধু দিল্লি বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, গত কয়েক বছর ধরেই ধর্ষণ, নারী নির্যাতন বেড়েছে গোটা দেশেই। জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালে গোটা দেশে ধর্ষণ বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। আর সার্বিক ভাবে মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। দেশের চারটি বড় শহরের মধ্যে এগিয়ে থাকায় দিল্লিই এখন কার্যত ধর্ষণের রাজধানী। দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় গত এক বছরে ৫৭২টি ধর্ষণের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। মুম্বই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই ও কলকাতায় সংখ্যাটি যথাক্রমে ২২১, ৯৭, ৭৬ ও ৪৬টি।
শহর কলকাতা আপাত ভাবে নিরাপদ হলেও সামগ্রিক ভাবে গোটা রাজ্যের অবস্থা যে ভাল নয় সেটা বেশ স্পষ্ট পরিসংখ্যানেই। ২০১১ সালে রাজ্যে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে ২,৩৬৩টি। গোটা দেশে এর থেকে বেশি অভিযোগ এসেছে শুধু মধ্যপ্রদেশে (৩৪০৬টি)। আর গোটা দেশে গত বছর ধর্ষণের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে ২৪,২০৬টি। |
২০১১-য় নথিভুক্ত ধর্ষণ |
রাজ্যে
• মধ্যপ্রদেশ ৩,৪০৬ (১৪.১%)
•
পশ্চিমবঙ্গ ২,৩৬৩ (৯.৮%)
• উত্তরপ্রদেশ ২,০৪২ (৮.৪%)
• রাজস্থান ১,৮০০ (৭.৪%)
• অসম ১,৭০০ (৭%)
• অন্ধ্রপ্রদেশ ১,৪৪২ (৬%)
• কেরল ১,১৩২ (৪.৭%) |
শহরে
• দিল্লি ৫৭২ • মুম্বই ২২১
• ভোপাল ১০০ • বেঙ্গালুরু
৯৭
• জয়পুর ৯২ • পুণে ৭৯
• চেন্নাই ৭৬ • আমদাবাদ ৬০
• হায়দরাবাদ ৫৯ •
কলকাতা ৪৬
• তিরুঅনন্তপুরম ৩৯ • লখনউ ৩৮
• পটনা ২৭ |
* সূত্র: ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো |
নারী নির্যাতন |
•
প্রথম পশ্চিমবঙ্গ ২৯,১৩৩ • দ্বিতীয় অন্ধ্রপ্রদেশ ২৮,২৪৬
• তৃতীয় উত্তরপ্রদেশ ২২,৬৩৯ • সারা ভারতে ২,২৮,৬৫০ |
|
গোটা দেশে গত এক বছরে ২,২৮,৬৫০টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই ঘটেছে ২৯,১৩৩টি ঘটনা। সারা দেশের হিসেবে যা ১২.৭%। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের এই বাড়বাড়ন্তে স্বাভাবিক ভাবেই প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। উদ্বিগ্ন জাতীয় মহিলা কমিশন অবিলম্বে প্রতিটি রাজ্যের মুখমন্ত্রীকে এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করার জন্য চিঠি লিখতে চলেছেন। দিল্লির গণধর্ষণ-কাণ্ডে বিচলিত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ দোষীদের কড়া শাস্তি নিশ্চিত করতে ও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দেকে।
গত চার বছরে দেশে মহিলাদের উপর নির্যাতনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৩.৪ শতাংশ। জাতীয় মহিলা কমিশন ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এর সম্ভাব্য দু’টি কারণের কথা বলছে। এক, মহিলাদের উপর নির্যাতন আগের থেকে সত্যিই অনেক বেড়েছে। দুই, আগে মহিলারা নির্যাতিত হলে ঘটনার পর মানসিক ভাবে এতটাই গুটিয়ে যেতেন যে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর সাহস করতেন না। এখন আগের চেয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধি হওয়ায়, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ায় মহিলারা সাহস করে এগিয়ে এসে পুলিশে অভিযোগ নথিভুক্ত করছেন। এর ফলেও নারী নির্যাতনের অভিযোগ আগের থেকে অনেক বেশি পুলিশের খাতায় জমা পড়ছে।
তবে মহিলা কমিশনের বক্তব্য, “এই যুক্তি তর্কের খাতিরে মেনে নিলেও এটা তো সত্যি হত এক
বছরে এই সংখ্যক নারীর উপর নির্যাতন হয়েছে এ দেশে। এবং এটাও সত্যি এখনও শুধু প্রত্যন্ত অঞ্চলই কেবল নয় বড় শহরে মহিলা নির্যাতনের পরে অভিযোগ দায়ের করার সাহস পান না।” |
|
|
|
|
|