‘আকর্ষণীয়’ প্যাকেজের কথা শুনে ল্যান্ডফোনের জন্য বিএসএনএলে আবেদন করতে গিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলেন জোকার গৃহবধূ অঞ্জনা রায়। আবেদন জানানোর বেশ কয়েক দিন পরেও সংস্থার পক্ষ থেকে কোনও সাড়া না পেয়ে টেলিফোন এক্সচেঞ্জে খোঁজ নিতে যান তিনি। জানতে পারেন, প্যাকেজ থাকলেও গ্রাহককে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ল্যান্ডফোন সেট নেই সংস্থার কাছে। অফিসারেরা জানান, বাইরে থেকে সেট কিনে নিলে তিনি পরিষেবা পাবেন। কিন্তু বিএসএনএল সেট না দিতে পারলেও, সেটের মাসিক ভাড়া অঞ্জনাদেবীর থেকেই আদায় করা হবে। অর্থাৎ, বাজার থেকে কিনেও প্রতি মাসে বিএসএনএল-কে সেটের ভাড়া দিতে হবে গ্রাহককে।
প্রতিযোগিতায় মোবাইলের কাছে এমনিতেই হারতে বসেছে ল্যান্ডফোন। তাই গ্রাহকদের কাছে ল্যান্ডফোনের আকর্ষণ বাড়াতে নানা প্যাকেজের ব্যবস্থা করছে বিএসএনএল। কিন্তু অভিযোগ, পরিকল্পনার গোড়াতেই রয়েছে বড়সড় গলদ। তাই অঞ্জনাদেবীর মতো অভিজ্ঞতা হচ্ছে অনেকের। আরও অভিযোগ, যে সব গ্রাহকদের বাড়িতে ল্যান্ডফোন খারাপ হয়ে আছে, তাঁদের অনেকেই নতুন সেট পাচ্ছেন না।
ল্যান্ডফোনের চাহিদা বাড়াতে অনেক দিন ধরেই এর সঙ্গে জুড়েছে ‘ব্রডব্যান্ডের ইন্টারনেট পরিষেবা’ও। বিএসএনএল বা অন্যত্র থেকে মোডেম কিনে ল্যান্ডফোনের সঙ্গে জুড়ে দিলেই চলবে ইন্টারনেট। কিন্তু এত পরিকল্পনার মূলে যে ল্যান্ডফোন, তার সমস্যাতেই নাজেহাল ব্রডব্যান্ড গ্রাহকেরাও। গ্রাহকদের অভিযোগ, মাঝেমাঝেই বিকল হচ্ছে ফোন। মাসের পরে মাস খবর দিলেও কেউ সারাতে আসছেন না। ল্যান্ডফোন অকেজো হওয়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেটও। ‘যাব’, ‘যাচ্ছি’ করলেও ল্যান্ডফোন বদলে দেওয়া হচ্ছে না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, বিরক্ত গ্রাহকদের একাংশ এখন আর বিএসএনএল-এর সংযোগই রাখতে চাইছেন না।
বিএসএনএল-এর চিফ জেনারেল ম্যানেজার (সিজিএম) সোমনাথ মাইতি জানান, রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির জন্যই টেলিফোনের অপটিক্যাল ফাইবার ও কপার কেবলে সমস্যা হচ্ছে।
কসবায় থাকেন এমনই এক গ্রাহক যাঁর ল্যান্ডফোন মাঝে মধ্যেই খারাপ হয়ে যায়। তাঁর কথায়, “বাড়িতে ল্যান্ডফোন, ব্রডব্যান্ডের ইন্টারনেট প্রায় চার মাস ধরে খারাপ। অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এখন ফোনটা ছাড়তে পারলে বাঁচি।”
ল্যান্ডফোনের এই পরিস্থিতির কথা স্বীকার করছেন খোদ বিএসএনএল সিজিএম-ও। তিনি জানান, ২০০৮ এ ল্যান্ডফোনের গ্রাহক ছিল প্রায় সাড়ে ১৩ লক্ষ। এ বছরে তা সাড়ে ৯ লক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে তিনি আশাবাদী। সোমনাথবাবু বলেন, “যারা ল্যান্ডফোন ছাড়তে চান তাঁদের জন্য আমরা একটি ‘এগজিট ইন্টারভিউ’-এর ব্যবস্থা করেছি। কেন তাঁরা ল্যান্ডফোন ছাড়তে চাইছেন, বা এই পরিষেবা নিয়ে তাঁদের কী অভিযোগ তা সবিস্তার শোনা হয়। অভিযোগের উপরে ভিত্তি করে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আশা করছি, এতে গ্রাহকদের সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে।” |