বিধানসভায় মারধর, ধস্তাধস্তির পরে বিরোধীরা নকল অধিবেশন বসিয়েছিলেন। এ বার নকল অধিবেশন দেখা গেল কলকাতা পুরসভাতেও।
ত্রিফলা আলো লাগানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের আনা মুলতুবি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেননি পুর চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার প্রতিবাদে বুধবার অধিবেশন বয়কট করে পুর চেয়ারম্যানের ঘরের সামনে নকল অধিবেশন করেন বাম কাউন্সিলরেরা। তাঁদের বক্তব্য, মুলতুবি প্রস্তাব বাতিল করে নিজের পদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখেননি চেয়ারম্যান। তবে চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দবাবু বলেন, “বিষয়টি নিয়ে জনস্বার্থের মামলা হয়েছে। তাই প্রসঙ্গটিকে আলোচ্যের তালিকায় রাখা হয়নি। এবং অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই সেটা বিরোধী দলনেত্রীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।”
এ দিন ছিল পুরসভার মাসিক অধিবেশন। সভায় কাউন্সিলরদের তোলা ১৬টি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর্ব চলাকালীন বিরোধী বাম ও কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা হাজির ছিলেন। আইপিএল জয়ী কেকেআর-এর কর্তা শাহরুখ খান এবং তাঁর দলকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য পুরসভার ভাঁড়ার থেকে টাকা খরচের বিষয়টি জরুরি পরিষেবার মধ্যে পড়ে কি না, মেয়রের কাছে তা জানতে চান সিপিএমের কাউন্সিলর ঝুমা দাস। জবাবে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কলকাতা শহরের একটা ঐতিহ্য আছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এটা করা হয়েছে।” ওই দলের খোলায়াড়দের পুরস্কার বাবদ যে-সব সোনার সামগ্রী দেওয়া হয়েছে, সেগুলো কি দরপত্র ডেকে বানানো হয়েছিল? মেয়র জানান, তাড়াহুড়োর জন্য দরপত্র ডাকা যায়নি। মেয়রের তহবিল থেকে ওই খাতে ৫৯ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। |
অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হতেই সিপিএম কাউন্সিলর তথা পুরসভার তিন নম্বর বরোর চেয়ারম্যান ত্রিফলা আলো নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনার জন্য চেয়ারম্যানের অনুমতি চান। চেয়ারম্যান জানিয়ে দেন, ওই বিষয়ে মুলতুবি প্রস্তাব নিয়ে কোনও আলোচনা হবে না। হইচই শুরু করে দেন বাম কাউন্সিলরেরা। তা সত্ত্বেও চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে দিতে রাজি না-হওয়ায় বাম কাউন্সিলরেরা সভাকক্ষ ত্যাগ করেন।
বাম শিবির তাতেই ক্ষান্ত হয়নি। চেয়ারম্যানের ঘরের সামনে ওই মুলতুবি প্রস্তাব নিয়ে নকল অধিবেশন শুরু করে দেয় তারা। চেয়ারম্যান সাজেন সিপিএমের প্রবীণ কাউন্সিলর অমল মিত্র। আর মেয়র সাজানো হয় তিন নম্বর বরোর চেয়ারম্যান রাজীব বিশ্বাসকে। রাজীববাবুও এ দিন মেয়রের মতোই পোশাক পরে এসেছিলেন। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে ওই নকল অধিবেশন চলে। তা দেখতে পুরসভার লনে ভিড় বাড়ে কর্মীদের। এক সময় পাশ দিয়ে চলে যান আসল মেয়র শোভনবাবুও। তবে নকল অধিবেশনের দিকে এক বারও তাকাননি। পুর চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দবাবু পরে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে অগস্টে এক বার আলোচনা হয়ে গিয়েছে। এখন মামলা হয়েছে। বিষয়টি বিচারাধীন। তাই এই নিয়ে আলোচনা করা যায়নি।” |