বিরোধিতার সুর মিলিয়ে গিয়েছে পালাবদলের সঙ্গেই।
কলকাতায় বিগত পুর নির্বাচনের আগে পলিমারের নিকাশি পাইপ বসানো নিয়ে তদানীন্তন বাম পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগে সরব হয়েছিল তৃণমূল। অভিযোগ ছিল, বিদেশ থেকে পাইপ আমদানির কথা বলে হাওড়া থেকে তা এনে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ নিয়ে পুর অধিবেশনে একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলর সরব হয়েছিলেন, উপরন্তু বিষয়টি নিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো শীর্ষ তৃণমূল নেতা খাস পুরভবনে সাংবাদিক সম্মেলনও করেন। এমনকী, তৃণমূলের ২০১০ পুরভোটের নির্বাচনী ইস্তাহারেও এর উল্লেখ ছিল। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূলশাসিত পুরবোর্ডই সেই বিতর্কিত পাইপের ব্যবহার দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে। যা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের জবাব, “আমি এক্ষুনি কিছু বলতে পারব না। খোঁজ নিয়ে বলব।”
তবে ওই ধরনের পাইপ যে এখনও ব্যবহার হচ্ছে, মেয়র তা মেনে নিয়েছেন। পুর-নথি অনুযায়ী, ২০০৭-এ পুরসভার বাম জমানায় জেএনএনইউআরএমের টাকায় প্রকল্পটি শুরু হয়। পাইপে দুর্নীতি সম্পর্কে তদানীন্তন মিউনিসিপ্যাল অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল কাউন্সিলর অতীন ঘোষ তদন্ত করেছিলেন। অতীনবাবুরা তদন্ত-রিপোর্ট পাঠিয়ে ছিলেন রাজ্য সরকার ও কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-কে। এবং ঘটনায় জড়িত অফিসারদের শাস্তিদানের সুপারিশও করেছিলেন। কিন্তু তা আদৌ বাস্তবায়িত হয়নি বলে পুর-সচিবালয় সূত্রের খবর।
কী সেই বিশেষ পাইপ? যা নিয়ে এত হইচই?
পুর-সূত্রের খবর: মূলত উত্তর ও মধ্য কলকাতার অধিকাংশ রাস্তার নীচে নিকাশি ব্যবস্থা ইটের কাঠামোয় ঘেরা। ব্রিটিশ আমলে তৈরি ওই কাঠামোয় প্রচুর পলি জমে নিকাশি প্রক্রিয়াটাই প্রায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। নিকাশির উন্নয়নে বাম পুরবোর্ড কেন্দ্রীয় সাহায্য চেয়েছিল। প্রজেক্ট রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে দিল্লি সহায়তার আশ্বাস দেয়। সেই মতো পুরসভার প্রকল্প ও উন্নয়ন দফতর নিকাশিতে ওই বিশেষ পাইপ (গ্লাস রি-ইনফোর্সমেন্ট পলিমার, সংক্ষেপে জিআরপি) লাগানোর বরাত দেয়। তা বসানো শুরু হওয়ার পরে পাইপের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
সিএজি’র সাম্প্রতিক রিপোর্টেও বিষয়টি উঠে এসেছে। ‘দুর্নীতি’র অভিযোগের কোনও নিষ্পত্তি তো হয়ইনি, বরং সেই কাজের ধারা এখনও বহাল। এক পদস্থ পুর-ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “২০১০-এ তৃণমূল বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে কিছু দিন নিকাশির ওই কাজ বন্ধ ছিল। ফের জিআরপি লাইনার বসানো শুরু হয়েছে।” |