স্কুলে ৩০ বছর টানা শিক্ষকতা করছেন তিনি। এখন প্রধান শিক্ষিকা। ছাত্রীদের হাতে এ ভাবে হেনস্থা হননি কখনও। ঘেরাও হওয়া তো দূরস্থান। বুধবার বিকেলে স্কুলের গেটে তাঁর বিরুদ্ধে পোস্টার দেখে হতবাক সন্তোষপুরের ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতী ঘোষ।
প্রতিটি পোস্টার খুঁটিয়ে পড়েছেন। কী মনে হল তাঁর? ‘‘এ রকম একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে, আন্দাজ করছিলাম। সোমবার রাতেই ওরা পরিচালন সমিতির নির্বাচন নিয়ে গলা ফাটাচ্ছিল!” ওরা মানে কারা? শ্রীমতীদেবী বলেন, “সোমবার রাতে ছাত্রী এবং অভিভাবকেরা আমাদের আটকে রেখেছিলেন, সেখানে কিছু বহিরাগতও ছিলেন। তাঁদের মূল বক্তব্য ছিল, তিন দশক ধরে স্কুলের পরিচালন কমিটির পরিবর্তন হয়নি।” এখন কী মনে হচ্ছে? “৩০ বছর পড়াচ্ছি। আপনারা দেখছেন কী হচ্ছে। আপনারাই ভাল বুঝতে পারছেন।”
একটি পোস্টারে লেখা রয়েছে, পিকনিকের জন্য ২০০ টাকা না দিলে পাশ করানো হবে না বলে হুমকি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা। এই অভিযোগটাই সব থেকে দুঃখ দিয়েছে শ্রীমতীদেবীকে। “আমার অনেক ছাত্রীই পিকনিকের টাকা দিতে পারে না। সেটা আমি নিজের পকেট থেকে দিয়ে দিই। আমার জীবনে এমন সময় যেন না আসে যে ২০০ টাকার জন্য এ সব করতে হবে।” প্রতি বছর পিকনিকের দিনটা খুব আনন্দে কাটাতেন সবাই। এ দিনই পিকনিক হওয়ার কথা ছিল। এই পরিস্থিতিতে সেটা বাতিল করতে হয়েছে। |
এদিন সারা দিন উচ্চ মাঝ্যমিক শিক্ষা সংসদের সংসদের কাছে থেকে চিঠি পাবেন বলে বসেছিলেন শ্রীমতীদেবী। কিন্তু সেই চিঠি আসেনি। ফেল করা ছাত্রীরা বার বার তাঁর কাছে এসে তাঁদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। কোনও জবাব দিতে পারেননি। কিন্তু ফল পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়ে সংসদের চিঠি এলে কী করবেন? শ্রীমতীদেবীর ব্যাখ্যা, “কোনও ছাত্রীর প্রতি কোনও শিক্ষিকার প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব নেই। আমরা যে ভাবে ছাত্রীদের পাশ করানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি তা আমরাই জানি। ফলাফল পুনর্বিবেচনা করা হলে তার জেরে ভবিষ্যতে গভীর সমস্যা দেখা দিতে পারে।”
কী সমস্যা? শ্রীমতীদেবী বলেন, “এটা একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। সংসদ সভাপতি বদলে যাবেন, আমিও থাকব না। সমস্যাটা থাকবে।” |