নেপথ্যে তৃণমূল নেতারাই, অভিযোগ
ন্দেহটা দানা বেঁধেছিল সোমবার বিকেল থেকেই। বুধবার সন্ধ্যায় বোঝা গেল সেটা অনেকাংশেই সত্যি। সন্তোষপুরের ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠে ঘেরাও-বিক্ষোভের পিছনে রয়েছে স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ।
এ দিন ওই স্কুলের সামনে পূর্ব যাদবপুর নাগরিক মঞ্চের নামে সভার আয়োজন যাঁরা করেছিলেন, তাঁরা তৃণমূলের নেতা-কর্মী বলেই স্থানীয় সূত্রে খবর। সভায় দুর্নীতি-সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষিকা সম্পর্কে অপমানসূচক মন্তব্য করেই ক্ষান্ত থাকেননি তাঁরা। স্কুলের চার দিকে পোস্টার লাগিয়ে প্রধান শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করার দাবিও জানান।
উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে অকৃতকার্যদের পাশ করানোর দাবিতে সোমবার দুপুর থেকে টানা বাইশ ঘণ্টা শিক্ষিকাদের স্কুলে আটকে রাখায় প্রশ্ন উঠেছিল, কয়েক জন ছাত্রীর পক্ষে কি এ রকম অন্যায্য দাবিতে সংগঠিত বিক্ষোভ করা সম্ভব? স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের একাংশ সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, ছাত্রীদের বিক্ষোভে রাজনৈতিক উস্কানি রয়েছে। বুধবার সকাল থেকেই সেই সন্দেহ অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায়।
এ দিন সকালে স্কুলের বাইরে সাদা কাগজে কালো কালিতে টাইপ করা ১৭টি পোস্টার দেখা যায়। পোস্টারে গেরুয়া ও সবুজ রঙের দু’টি দাগ দেওয়া। যে ধরনের চিহ্ন এ রাজ্যে কংগ্রেস অথবা তৃণমূল মনোভাবাপন্ন সংগঠনই ব্যবহার করে। ওই সব পোস্টারে অকৃতকার্য ছাত্রীদের পাশ করানোর দাবি তেমন ছিল না। বরং ছিল প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ। সেই সঙ্গে পরিচালন সমিতির ভোট প্রসঙ্গ। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতী ঘোষ বলেন, “সোমবার রাতেই কয়েক জন বহিরাগত পরিচালন সমিতির নির্বাচন
নিয়ে গলা ফাটাচ্ছিল। এখন মনে হচ্ছে, বিক্ষোভ-ঘেরাওয়ের ঘটনায় বাইরে থেকে মদত রয়েছে।”
সন্ধ্যায় সভা সেই ধারণা আরও বদ্ধমূল করে। নীল-সাদা কাপড়ে মোড়া সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে এক স্বঘোষিত শিক্ষাবিদ বলেন, “প্রধান শিক্ষিকাকে বলছি, স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়।” পরীক্ষায় ফেল করার সঙ্গে জুড়ে দেন নিম্নবিত্ত মানুষের আবেগের প্রসঙ্গও।
প্রশ্ন উঠেছে, ছাত্রীদের পাশ করানোর আন্দোলনে জড়িয়ে পড়া এই নাগরিক মঞ্চ আদতে কী? ওই স্কুলের অভিভাবকেরাই জানিয়েছেন, সন্তোষপুর এলাকায় ‘মা-মাটি-মানুষ মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন ইতিমধ্যেই রয়েছে। তার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশ। ওই মঞ্চের অফিসে বসেই বিক্ষোভ-ঘেরাওয়ের ছক কষা হয়েছিল বলে তাঁদের অভিযোগ। এ দিন অবশ্য ‘মা-মাটি-মানুষ মঞ্চ’কে সামনে না-রেখে সভা হয় নাগরিক মঞ্চের নামে। যার কোনও অস্তিত্ব এত দিন পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু তার নেপথ্যে তৃণমূল নেতারাই রয়েছেন বলে স্থানীয় মানুষ এবং অভিভাবকরা দাবি করেছেন।
সন্তোষপুরের ঘটনা নিয়ে রাজ্য জুড়ে যখন সমালোচনার ঝড় বইছে, তখন এর পিছনে এলাকার তৃণমূল নেতাদের একাংশের জড়িত থাকার গুঞ্জনে অস্বস্তিতে পড়েন দলের শীর্ষ নেতারা। এ দিন সন্ধ্যার সভার যোগাযোগ আরও স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাঁরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৃণমূলের ভাইস চেয়ারম্যান শক্তি মণ্ডল দাবি করেন, “মা-মাটি-মানুষ মঞ্চের নামে যাঁরা সংগঠন করছেন, তাঁরা তৃণমূলের কেউ নন। ওঁরা তোলাবাজ।”
ছাত্রীদের বিক্ষোভে তৃণমূলের একাংশ জড়িয়ে পড়লেন কেন?
কয়েক জন অভিভাবক জানিয়েছেন, এর পিছনে মূল উদ্দেশ্য স্কুলের পরিচালন সমিতির দখল নেওয়া। প্রাথমিক ভাবে সেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন কলকাতা পুরসভার ১১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা তারকেশ্বর চক্রবর্তী। এলাকার বিধায়ক মণীশ গুপ্তের বিধায়ক তহবিলের টাকায় স্কুলের উন্নয়ন করা নিয়ে প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে। স্কুলের নানা বিষয়ে ক্রমশই নিজেকে জড়াচ্ছিলেন তিনি।
পরিচালন সমিতির ভোটের দৌড়ে তারকেশ্বরবাবু এগিয়ে যাচ্ছেন দেখে তৃণমূলে তাঁরই পাল্টা গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের অভিমত। তাঁরা বলছেন, টেস্টে অকৃতকার্য ছাত্রীদের বিক্ষোভকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন তারকেশ্বর-বিরোধীরা। এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, “বিক্ষোভের সময় ওই নেতাদের অনেকেই মোবাইলে ছাত্রীদের নির্দেশ দিচ্ছিলেন।” ওই তৃণমূল নেতাদের লক্ষ্য ছিল ছাত্রী দরদী সেজে পরিচালন সমিতির নির্বাচনে তারকেশ্বরবাবুর পালের হাওয়া কেড়ে নেওয়া। পাশাপাশি, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বর্তমান পরিচালন সমিতিকেও কোণঠাসা করে রাখা।
বস্তুত সেই লক্ষ্যে স্কুলের বাইরে লাগানো কয়েকটি পোস্টারে লেখা হয়েছে, “বহিরাগত এসএফআই কর্মীদের দিয়ে অবস্থানরত দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের উপরে আক্রমণ করা হল কেন, প্রধান শিক্ষিকা জবাব দাও!” যার পরিপ্রেক্ষিতে এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস বলেন, “আমরা এর সঙ্গে জড়িত নই। ইচ্ছাকৃত ভাবে আমাদের নাম জড়িয়ে রাজনীতি করা হয়েছে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.