শীতে কাঁচা পাতার পরিমাণ কমবে বলে লোকসান কমাতে মালিক পক্ষ বাগান ছেড়েছেন বলে অভিযোগ তুলল ডুয়ার্সের বান্দাপানি চা বাগানের শ্রমিক পক্ষ। শনিবার নিরাপত্তার অভাবের কারণ দেখিয়ে সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস ঝুলিয়ে ম্যানেজার সহ সহকারী তিন ম্যানেজার বাগান ছেড়ে চলে যান। সোমবার সকালে অনেক শ্রমিক পাতা তুলতে গিয়ে বাগান বন্ধ বলে জানতে পারেন। দেওয়ালির মুখে বাগান বন্ধ হওয়ায় মাথায় হাত ১১২৬ জন শ্রমিক ও তাদের পরিবারের লোকজনের। শ্রম দফতরের উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম শ্রম আধিকারিক মহম্মদ রিজানুর বলেন, “বাগানটি দ্রুত চালু করার জন্য শুক্রবার বীরপাড়া সহকারী শ্রম আধিকারিকের দফতরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকেছি।” শ্রমিকদের তরফে জানানো হয়েছে, বাগানের অধিকাংশ চা গাছের বয়স সত্তরের বেশি। বেশ কয়েক বছর ধরে ওই বুড়ো গাছগুলি থেকে তেমন ভাবে পাতা মিলছিল না। পরিচর্যার পেছনে খরচ করছিল মালিকপক্ষ। ফলে চা উৎপাদন তলানিতে ঠেকে। দু’মাসের বেতন বকেয়া সহ ২৪টি রেশন-সহ পুজোর বোনাস দেননি কর্তৃপক্ষ। প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য শ্রমিকদের মজুরি থেকে কেটে নেওয়া আড়াই কোটি টাকা বকেয়া।
|
সোমবার সকালে শ্রমিকেরা পাতা তুলতে গিয়ে জানতে পারেন যে বাগান বন্ধ। ছবি: রাজকুমার মোদক। |
শীতকাল পড়ছে, গাছ থেকে পাতা মেলা আরও কমতে থাকবে। শ্রমিকদের মজুরি দিলে কর্তৃপক্ষের আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তাই শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে মালিক পক্ষ বাগান ছেড়েছে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। বাগান সূত্রের খবর, ১৮৯৭ সালে একটি ইউরোপিয়ান মালিক পক্ষ চা চাষ শুরু করেন। মোট জমির পরিমাণ ১২৬০ হেক্টর। চা উপাদন হয় ৫০০ হেক্টর জমিতে অধিকাংশ গাছের বয়স সত্তর থেকে আশি বছর। ১৯৯৪ সালেও ওই গাছ থেকে বছরে ৮ লক্ষ কিলোগ্রাম চা পাতা মিলত। তবে গাছগুলি পুরনো হতে থাকে ওই গাছ থেকে চা মেলা কমতে থাকে। পুরনো গাছ উপড়ে নতুন গাছ লাগানোর উপর কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব না দিয়ে লভ্যাংশ ঘরে তোলে। এর মধ্যে দু’বার মালিকানা বদল হয়। বছর দেড়েক আগে শিলিগুড়ির এক মানি মার্কেটিং কোম্পানি বাগানটির মালিকানা নেয়। বছর তিনেক আগে ১০০ হেক্টর চা গাছ উপড়ে মাত্র অর্ধেক জমিতে নতুন গাছ বোনেন কর্তৃপক্ষ। দুই বছর ধরে নিয়মিত গাছের পরিচর্যা তেমন ভাবে হত না। তাদের অভিযোগ, নতুন মালিক পক্ষ যে ৩ জন সহকারী ম্যানেজার নিয়োগ করেন তাদের চা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা ছিল না। যার ফল হিসাবে উৎপাদন আট লক্ষ কেজি থেকে গত বার ২ লক্ষ ২০ হাজার কিলোয় নেমে আসে। আর এস পি দলের চা শ্রমিক ইউনিয়নের অন্যতম নেতা গোপাল প্রধান বলেন, “বাগান বন্ধ হবার পেছনে কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতিই দায়ী। মজুরি না পেয়ে শ্রমিকদের ঘেরাও করার বাহানায় কর্তৃপক্ষ বাগান ছেড়েছেন।” বাগানের এক শ্রমিক নেতা নগেন্দ্র ছেত্রী বলেন, “চা গাছের পরিচর্যার জন্য যে পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগ করতে হয় তা দেওয়া হত না। শীতকালে পাতা তেমন ভাবে মিলবে না বলে তারা পালিয়েছেন।” ৩ মাস আগে দলমোড়ে শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে মালিকপক্ষ বাগান ছেড়েছে বলে সেখানকার শ্রমিকদের অভিযোগ। ইতিমধ্যে সেখানে অভাবক্লিষ্ট ১১ জন মারা গেছেন। চা বাগান মালিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, “গাছের পরিচর্যা কেমন হচ্ছিল তা মালিক পক্ষের বিষয়। তবে যে ভাবে ম্যানেজারকে ঘেরাও করে চাপ দেওয়া হয়, তাতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করে মালিক পক্ষ বাগান বন্ধ করতে বাধ্য হন।” |